সাড়ে চার কোটি টাকার ভবন কী কাজে এল
Published: 29th, June 2025 GMT
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার খড়রিয়ায় অবস্থিত পেড়লি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের চিত্রটি আমাদের স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থার করুণ বাস্তবতাই তুলে ধরে। সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল ভবন ও একটি চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার। আছে আধুনিক অস্ত্রোপচারকক্ষও। কিন্তু নেই পর্যাপ্ত জনবল, নেই নিয়মিত চিকিৎসক, নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ। ফলে নতুন হাসপাতাল ভবন হওয়ায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার আশায় বুক বাঁধা স্থানীয় মানুষ আজ চরম হতাশ।
প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধি গত সোমবার সকালে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখতে পান, প্রধান ফটকের পকেট দরজা খোলা থাকলেও হাসপাতালের প্রায় সব কক্ষই তালাবদ্ধ। চিকিৎসক নেই, ওষুধ নেই; শুধু একজন অফিস সহায়ক ছাড়া আর কেউ নেই। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আসা কলেজশিক্ষার্থী মনোয়ারা খাতুন বা সেবাপ্রত্যাশী নাজমা বেগমের মতো শত শত মানুষ প্রতিদিনই এসে ফিরে যাচ্ছেন। কারণ, মূল্যবান এই অবকাঠামো কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে।
২০২০ সালে উদ্বোধন হওয়া এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য ১০টি পদ থাকলেও অধিকাংশই শূন্য। একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও জনবলসংকটের কারণে তাঁদের অন্যান্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে তাঁরা সপ্তাহে মাত্র দুই দিন এখানে আসতে পারেন। বাকি দুই দিন একজন সংযুক্তিতে আসা চিকিৎসক রোগী দেখেন। সপ্তাহে সার্বক্ষণিক থাকেন কেবল একজন অফিস সহায়ক, তিনিও সংযুক্তিতে এসেছেন। এভাবে কি একটি হাসপাতাল পরিচালনা করা সম্ভব?
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সঠিকভাবে পরিচালিত হলে পেড়লি, পাঁচগ্রাম ও সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ উপকৃত হতেন। কিন্তু পাঁচ বছর পরও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। প্রশ্ন জাগে, জনগণের করের টাকায় নির্মিত এই বৃহৎ অবকাঠামো যদি জনগণের কোনো উপকারে না আসে, তবে এই বিনিয়োগের সার্থকতা কোথায়?
গোটা স্বাস্থ্য খাতে অনেক অবকাঠামো নির্মাণ এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে, জনবলসংকটের কারণে সেগুলোতে পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সারা দেশেই পরিবার পরিকল্পনায় জনবলসংকট রয়েছে, এমন যুক্তি আর কত দিন শুনতে হবে? সরকারের উচিত নড়াইলের এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো দেশের অন্য হাসপাতালগুলোতেও দ্রুত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করা। আমরা চাই না এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল থেকে মা ও শিশুরা সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক
এছাড়াও পড়ুন:
সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামীকাল সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাজা দিলে ‘রেড নোটিশ’ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন করা হবে।
আজ রোববার সকালে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম এ কথা বলেন। তাঁকে ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছিল প্রসিকিউশন। ইন্টারপোল কোনো রকম সাড়া দেয়নি।
এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে প্রসিকিউশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছিল। কালকে (সোমবার) যদি রায় হয় এবং রায়ে যদি ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করেন, তাহলে ইন্টারপোলে আরেকটি ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন করবে প্রসিকিউশন তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের (অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী) বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায় দেওয়া হবে আগামীকাল সোমবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় দেবেন।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি সরাসরি হত্যার নির্দেশ কাউকেই দেননি। যেটা আইনজীবী বোধ হয় এই আদালতে খানিকটা বলেছিলেন।
এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তিনি সব কথা বলতে পারবেন। হাজির না হয়ে তিনি যেসব কথা বলবেন, সেটা আইনের দৃষ্টিতে কোনো বক্তব্যই নয়। সামাজিক দৃষ্টিতে বক্তব্য। প্রসিকিউশন মনে করে, এখানে যে মামলা হয়েছে, এটা তিনি জানেন না বা জানতেন না, এটা বলার আর সুযোগ থাকছে না শেখ হাসিনার। তাঁর ভয়েস রেকর্ড (কণ্ঠস্বর) বাজিয়ে শোনানো হয়েছে উন্মুক্ত আদালতে, যা সম্প্রচার হয়েছে। সেখানে শোনা গেছে, শেখ হাসিনা নিজ মুখে এই আদেশটা দিয়েছেন কথোপকথনের মাধ্যমে। অপরাধী পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, কেউই স্বীকার করেনি যে তারা অপরাধী। তারই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন যে শেখ হাসিনা আদৌ অপরাধী, কি অপরাধী নন।
ভারতে বসে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার দেওয়ার যে সুযোগ পাচ্ছেন, সেটি কি শুধু শেখ হাসিনার বিষয়ই থেকে যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, বিষয়টি প্রসিকিউশন সম্পূর্ণভাবে সরকারের ও কূটনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছে। প্রসিকিউশন বা বিচারব্যবস্থা এটাকে (শেখ হাসিনার বক্তব্যকে) কোনো আমলে নিচ্ছে না।
ট্রাইব্যুনালের আদেশ মেনে নেবে প্রসিকিউশন
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, ট্রাইব্যুনালের কাছে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করেছে প্রসিকিউশন। শুধু তা–ই নয়, এই আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এই মামলায় বা এই ঘটনায় যাঁরা ভুক্তভোগী আছেন, শহীদ আছেন, আহত পরিবার আছে, তাঁদের বরাবর হস্তান্তরের প্রার্থনাও জানানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে যে আদেশই দেবেন, প্রসিকিউশন তা মেনে নেবে।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, চব্বিশের আগের ট্রাইব্যুনালের নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলেও সেখানে আন্তর্জাতিক আইনের কোনো প্রযোজ্যতা ছিল না। গণ-অভ্যুত্থানের পর আইন সংশোধন করে আন্তর্জাতিক আইন, অর্থাৎ রোম স্ট্যাটিউটে যে আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা এবং অ্যাপ্লিক্যাবিলিটি (প্রযোজ্যতা) আছে, সেটা এখানে প্রযোজ্য করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে যে কয়েকটি অভিযোগ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে, একই অভিযোগ যদি দেশের অন্য কোনো আদালতে কোনো মামলা থেকে থাকে, সেগুলো আর চলবে না। কারণ, সাংবিধানিক অধিকার হলো একই অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে দুবার শাস্তি বা দুবার বিচার করা যাবে না। এর বাইরে যদি অন্য কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, সেটি চলতে পারে।
পলাতক অবস্থায় শেখ হাসিনা আপিল করতে পারবেন না
এ মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। তাঁদের সাজা হলে আপিল করার সুযোগ থাকবে কি না, এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, অবশ্যই না। এ মামলার যেসব আসামি পলাতক আছেন, তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়া ছাড়া আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন না।
মামলার প্রধান আসামি একজন নারী। নারী হওয়ার কারণে আইনে বিশেষ কোনো সুবিধা তিনি পাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিআরপিসিতে জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ, কিশোর, বালক, শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে সাধারণ আইনেও কোনো আলাদা প্রিভিলেজ (অগ্রাধিকার) দেওয়া হয় না। ট্রাইব্যুনাল আইনেও কোনো আলাদা প্রিভিলেজ নেই। অতএব রায় প্রদানের ক্ষেত্রে আসামি নারী হোক, পুরুষ হোক, তিনি তাঁর অবস্থানে থেকে কী অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের গ্র্যাভিটি বিবেচনা করে শাস্তি প্রদান করা হবে বা মামলা প্রমাণ না হলে খালাস প্রদান করা হবে।