যৌনপল্লির মেয়েদের জীবন সমাজের অন্য সাধারণ শিশুর মতো নয়। এখনও সেখানকার মেয়েদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই মায়েরা বিয়ে দিয়ে দেন। সায়েমার জীবনে শিক্ষার পাশাপাশি একটি বড় অনুপ্রেরণা ছিল তাঁর মায়ের সঙ্গে শৈশবের কাজ। যৌনকর্মীর কাজ ছেড়ে তাঁর মা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন। সায়েমাও এতে সহায়তা করতেন। এসএসসি পাসের পর তিনি পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন ক্ষুদ্র ব্যবসায়। 


এই গল্পটা সায়েমা খাতুন (ছদ্মনাম) ও তাঁর মায়ের। যিনি নিজের ভাগ্য নতুন করে লিখতে চেয়েছেন। সায়েমার জন্ম সমাজের সবচেয়ে নিষ্পেষিত এক বাস্তবতায়, খুলনা জেলার বানিশান্তার এক প্রথাগত যৌনপল্লিতে। তবে তিনি আজ হয়ে উঠেছেন শত নারীর অনুপ্রেরণা। সায়েমা ও তাঁর মা এখন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সমাজের চোখে ব্রোথেল বা যৌনপল্লি শব্দটি অবজ্ঞার। সায়েমার মা ছিলেন একজন যৌনকর্মী। তিনি তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য এক ভিন্ন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাই তিনি সন্তানের জন্য একটি যথাযথ পরিবেশ চেয়েছেন। সেই ভাবনাই তাঁকে তৈরি করে সংগ্রামী এক মা হিসেবে। তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন, অবহেলা সহ্য করেছেন, বাস্তবতার কঠিন পরিস্থিতি দেখেছেন। হাল ছাড়েননি। সায়েমা বলেন, ‘আমার মা শিখিয়েছেন, জন্ম যেখানেই হোক, স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে সবার।’ সায়েমার আরও এক বোন ও এক ভাই আছে। সায়েমা সবার ছোট। তাঁর মা বলেন, ‘আমি যদি জীবনে ঝুঁকি না নিতাম, আমার সন্তানরা হয়তো কখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত না।’ এই অদম্য চেষ্টার ফলে সায়েমা পেয়েছেন একটি আলোকিত, সম্মানজনক এবং সম্ভাবনাময় নতুন জীবন।
১৯৯৮ সালে খুলনা জেলায় কার্যক্রম শুরু করে বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘দলিত’। শুরু থেকেই তারা যৌনপল্লি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে সংস্থাটির বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি ৭৪টি লার্নিং সেন্টারে প্রায় সাত হাজার শিশু পাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি, শিক্ষা উপকরণ, প্রতিভা বিকাশের সুযোগ, উপবৃত্তি এবং নানাবিধ সহায়তা। সায়েমা ছিলেন এমনই একটি লার্নিং সেন্টারের শিক্ষার্থী। সেখানে তাঁকে শুধু বইপত্রই দেওয়া হয়নি, লার্নিং সেন্টারের শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়াসহ গড়ে তোলা হয়েছে আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বগুণ। সায়েমার ভাষায়, ‘দলিত আমাকে শিখিয়েছে, আমি পারি। শিখিয়েছে অধিকার সম্পর্কে জানতে, লড়াই করতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লার্নিং সেন্টারের শিক্ষকরা নিয়মিত খোঁজ রাখতেন, উৎসাহ দিতেন, যা আমার আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছে।’ সায়েমা জানান, যৌনপল্লির মেয়েদের জীবন সমাজের অন্য সাধারণ শিশুর মতো নয়। এখনও সেখানকার মেয়েদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই মায়েরা বিয়ে দিয়ে দেন। সায়েমা বলেন, ‘আমার মা দলিতের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, বাল্যবিয়ে কীভাবে একজন মেয়েশিশুর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন করে। শিক্ষা কীভাবে একজন নারীর জীবনে সুফল বয়ে আনতে পারে।’ সায়েমাসহ যৌনপল্লির অনেক মেয়েশিশুকে পড়াশোনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে দলিত। সায়েমা আরও যুক্ত করেন, ‘আমি যৌনকর্মী মায়ের সন্তান। এর মানে এই নয় যে এটি একটি পেশা। কোনো নারী কেন যৌনকর্মীর জীবন বেছে নেন, আমাদের সেই কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’
দলিতের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রহ্লাদ কুমার দাস বলেন, ‘আমরা শুধু শিক্ষা দিই না, গড়ে তুলি নেতৃত্ব এবং সচেতনতা। সায়েমারা যেন নিজেদের অধিকার জানতে পারে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘শিক্ষাই পারে সামাজিক কুসংস্কারের বেড়াজাল ভাঙতে। সায়েমারা প্রমাণ করেছে, সুযোগ পেলে এই মেয়েরাই পারে সমাজ 
বদলে দিতে।’
সায়েমার জীবনে শিক্ষার পাশাপাশি একটি বড় অনুপ্রেরণা ছিল তাঁর মায়ের সঙ্গে শৈশবের কাজ। যৌনকর্মীর কাজ ছেড়ে তাঁর মা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন। সায়েমাও এতে সহায়তা করতেন। এসএসসি পাসের পর তিনি পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন
ক্ষুদ্র ব্যবসায়। 
সায়েমার মতো অনেক নারী আজ নিজের জীবনকে বদলে দেওয়ার সাহস রাখেন শুধু তখনই, যখন সমাজ এবং প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে দাঁড়ায়। তবে সমাজের প্রতিকূলতা যে সব কেটে গেছে, এমনও নয়। আমাদের সমাজে যৌনকর্মীর মেয়েকেও যৌনকর্মীর চোখে দেখা হয়। একজন নাগরিক হিসেবে তাঁর সামাজিক অধিকারের বিষয়গুলো এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। সায়েমার ক্ষেত্রেও ভিন্ন কিছু হয়নি। তবে কণ্ঠে খানিক হতাশা থাকলেও তাঁর স্বপ্ন আরও বড়, তিনি হতে চান একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
সায়েমার গল্প যেমন একজন নারীর সাফল্যগাথা, তেমনি এটি সমাজ বদলের বার্তাও বহন করে। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তবেই বঞ্চনার চক্র ভেঙে নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে, পথ দেখাতে সক্ষম হবো আমরা। v
লেখক : উন্নয়নকর্মী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নপল ল ন ক ষ দ র ব যবস য় য নকর ম র য নপল ল ন একজন আম দ র র জ বন

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ও কামান থেকে চালানো হামলায় তছনছ হচ্ছে গাজা সিটির উত্তরাঞ্চল। রাতভর অঞ্চলটি কেঁপে কেঁপে উঠছে বিস্ফোরণের শব্দে। গত সোমবার রাতে সেখানে হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। আর গতকাল মঙ্গলবার থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে হত্যা করা হয়েছে ৮৯ ফিলিস্তিনিকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছিল। জুলাইয়ের শেষ দিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে আলোচনা থেকে সরে যায় দুই পক্ষ। এরপর গাজা সিটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে ইসরায়েল সরকার। তখন থেকেই সেখানে তীব্র হামলা চলছে। কত দিন এই হামলা চলবে, তা স্পষ্ট করেনি ইসরায়েল।

গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৮৯ জনের মধ্যে ৩১ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫১৩ জন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৫৯৯ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।

হতাহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় সবাই বেসামরিক মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে গাজা সিটির জাইতুন এলাকায় দুটি বাড়ি ও মধ্যাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ১১ জন নিহত হন। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি বাড়িতে হামলায় এক শিশু ও তার মা–বাবাসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। মাওয়াসি উপকূলে নিহত হয়েছেন চারজন।

তবে ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, গাজার বেসামরিক মানুষের হতাহত হওয়ার সংখ্যা যতটা সম্ভব কমাতে চাচ্ছে তারা। গতকাল তারা বলেছে, আগের মাসে উত্তর গাজায় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাজুড়ে সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধানও। তাঁর মতে, এতে গাজায় বেঁচে থাকা জিম্মিদের জীবন হুমকিতে পড়বে। এ ছাড়া এমন পরিকল্পনা ইসরায়েলি সেনাদের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হতে পারে। গাজায় বর্তমানে প্রায় ৫০ জন জিম্মি বন্দী আছেন। তাঁদের ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হয়।

এদিকে খাবারের চরম সংকটের কারণে গাজায় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গতকাল ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজায় না খেতে পেয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুটি শিশু। এ নিয়ে সংঘাত শুরুর পর থেকে অনাহারে ২২৭ জনের মৃত্যু হলো। তাঁদের মধ্যে শিশু ১০৩।

কায়রোয় যাবেন হামাস নেতা

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা আবার শুরু করতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় যাচ্ছেন হামাস নেতা খলিল আল–হায়া। আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরতে প্রস্তুত রয়েছেন হামাস নেতারা।

তবে যুদ্ধবিরতির মূল শর্তগুলো নিয়ে এখনো হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং হামাসের অস্ত্র ত্যাগের মতো শর্তগুলো। তবে স্বাধীন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র না প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠনটি।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আরবের একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর এখনো আলোচনা আবারও শুরুর আশা ত্যাগ করেনি। আর গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নতুন করে অভিযান শুরুর যে পরিকল্পনা, তা হামাসকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্যও হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টের স্টেগেনের ‘দীর্ঘমেয়াদি চোট’, গার্সিয়াকে নিবন্ধন করাতে পারবে বার্সা
  • ধূমকেতুর জন্য রাজের প্রতীক্ষা শেষ
  • এখনও হৃতিক সুজানের বন্ধুত্ব রয়ে গেছে
  • কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ৪ অভিযোগ
  • ভারতের যে গ্রামের পুরুষেরা দুই বিয়ে করেন
  • গণ–অভ্যুত্থানের সময় চানখাঁরপুলে পুলিশের পোশাকে লোকেরা হিন্দি ভাষায় কথা বলছিল
  • কেবিসির মঞ্চে সোফিয়া-ব্যোমিকারা, শুরু বিতর্ক
  • দয়া করে গাজায় যান: পোপ লিওর প্রতি ম্যাডোনার আহ্বান
  • পিএসজিকে বিদায় দোন্নারুম্মার, এনরিকে বললেন ‘আমি দায়ী’
  • গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল