ভারতের পুরীতে রথযাত্রায় পদদলিত হয়ে নিহত ৩
Published: 29th, June 2025 GMT
ভারতের ওডিশা রাজ্যের পুরীতে ঐতিহাসিক রথযাত্রায় পদদলিত হয়ে দুই নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আজ রোববার ভোর চারটার দিকে পুরীর সারধা বালিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন বোলাগড়ের বাসন্তী সাহু, প্রেমাকান্ত মোহান্তি ও বালিপাটনার প্রভাতী দাস।
পুরীর জেলা প্রশাসক সিদ্ধার্থ শঙ্কর স্বাইন বলেন, ‘আমরা তিনটি মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আহত ছয়জনের অবস্থা স্থিতিশীল।’
নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয় ও অনেক ভক্তের অভিযোগ, রাতে পুলিশের কোনো উপস্থিতি ছিল না, যা এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। তবে পুরীর পুলিশ সুপার বিনীত আগরওয়াল বলেন, রথের চারপাশে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
ওডিশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘পুরীর সারধা বালিতে এই মর্মান্তিক পদদলনের ঘটনায় নিহত তিন ভক্তের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
নবীন পট্টনায়েক আরও বলেন, ‘রথযাত্রার সময় ভয়াবহ ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরপরই আজকের পদদলনের ঘটনা প্রমাণ করে যে ভক্তদের জন্য শান্তিপূর্ণ উৎসব নিশ্চিত করতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
প্রতিবছর ওডিশার উপকূলীয় শহর পুরী প্রাণ ফিরে পায় রথযাত্রা উপলক্ষে। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এটি ভগবান বলরাম, ভগবান জগন্নাথ এবং দেবী সুভদ্রার শতাব্দীপ্রাচীন এক রথ উৎসব। এই ভাই–বোন দেবতাদের মহিমান্বিত কাঠের রথে বসিয়ে ভক্তরা আনুষ্ঠানিকভাবে টেনে নিয়ে যান দ্বাদশ শতকের শ্রী জগন্নাথ মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত। যেটিকে ওই তিন দেবতার মাসির বাড়ি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রথয ত র
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।