কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে হাসছে শিশুরা, করছে খেলা। তবে তাদের এই হাসি ও কোলাহল কিছুক্ষণের জন্য হলেও চাপা দেয় আশপাশের কঠিন বাস্তবতাকে। 

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী এ শিবিরে বসবাস করে ১০ লাখের বেশি মানুষ। বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত রোহিঙ্গা মুসলিমরা আজ হয়তো সবচেয়ে অবহেলিতও। মিয়ানমারে সামরিক জান্তার জাতিগত নির্মূল অভিযানের পর তারা যেন বিস্মৃত এক জাতি।

গত মে মাসে শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, “কক্সবাজার এখন সেই কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে বাজেট কাটছাঁটের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সবচেয়ে বিপন্ন মানুষের ওপর।” 

জাতিসংঘ প্রধানের সফরটি এমন এক সময় ঘটে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) এর বাজেট ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেন। যার ফলে শিবিরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ে। একই সময়ে যুক্তরাজ্য প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে বিদেশি সহায়তা হ্রাসের ঘোষণা দেয়। ফলে রোহিঙ্গা শিবিরে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ধস নামে। 

‘ওরা আমাকে ল্যাংড়া ডাকে’
তাঁবুর মতো বাঁশের তৈরি অস্থায়ী ঘরের সামনে বসে আলজাজিরাকে নিজের জীবনের গল্প বলছিলেন জাহিদ আলম। শরণার্থী হওয়ার আগে তিনি মিয়ানমারের নিজ এলাকায় নাপুরা অঞ্চলে কৃষিকাজ করতেন এবং মাছ ধরেই জীবিকা চালাতেন।
জাহিদ জানান, ২০১৬ সালেই প্রথম তার বাঁ পা অকারণে ফুলে ওঠে। 

তিনি বলেন, “আমি জমিতে কাজ করছিলাম, হঠাৎ পায়ে ভীষণ চুলকানি শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর পা লাল হয়ে ফুলে ওঠে। আমি দৌড়ে বাড়ি যাই, বরফ দিয়ে ঠান্ডা করার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই আরাম পাইনি। একজন স্থানীয় চিকিৎসক মলম দেন, কিন্তু চুলকানি যেমন ছিল, ফুলে যাওয়াও তেমনি থেকে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই দাঁড়ানো বা হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়ে।এক সময় কাজ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলি এবং পরিবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি।”

এর এক বছর পর, যখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার গ্রামের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং নারীদের ওপর নির্যাতন শুরু করে, তখন তিনি স্ত্রী-সন্তানদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন।তবে নিজে পেছনে থেকে যান গরুগুলোর দেখভাল করার জন্য। কিন্তু সেনাবাহিনী তাকেও হুমকি দেয় এবং বাধ্য করে বাংলাদেশে পরিবারের সঙ্গে যোগ দিতে।

৫৩ বছর বয়সী জাহিদ আলম তখন থেকে কক্সবাজারের কুতুপালং শিবিরে ডাক্তারস উইদআউট বর্ডারস (ফরাসি ভাষায় যার সংক্ষিপ্ত নাম এমএসএফ) এর অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে চিকিৎসকদের মতে, তার পা কেটে ফেলতে হতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, তার এলিফ্যান্টিয়াসিস হয়েছে—এটি এমন একটি সংক্রমণ, যা হাত-পা অস্বাভাবিকভাবে ফুলিয়ে তোলে। তবে তা এখনও সঠকিভাবে নির্ণয় হয়নি।

শারীরিক রোগের পাশাপাশি তাকে লড়তে হচ্ছে সামাজিক অবহেলার বিরুদ্ধেও।

জাহিদ বলেন, “ওরা আমাকে ‘ল্যাংড়া’ বলে ডাকে, যখন দেখে আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারি না।” 

তবে আশাবাদী কণ্ঠে তিনি বলেন, “আল্লাহ যদি আমাকে এই অসুস্থতা ও প্রতিবন্ধকতা দিয়ে থাকেন, তবে তিনিই এই ক্যাম্পে আসার সুযোগও দিয়েছেন, যাতে আমি সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। আমি জানি, খুব শিগগিরই নতুন আরো ভালো একটা জীবন শুরু করতে পারব।” 

‘‘আম্মা’ শব্দটাই আমার আশা জাগায়”
জাহিদ আলমের আশ্রয়স্থল থেকে মাত্র ১০ মিনিট হাঁটাপথ দূরে একটি ছোট ঝুপড়ি ঘরে থাকেন জাহানা বেগম। তার একটাই আশা—সংস্থাগুলো যেন রোহিঙ্গা শিবিরে সহায়তা চালিয়ে যায়, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য।

জাহানা বেগমের এক মেয়ে দুই ছেলে। মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের বয়স ২৩ বছর। আর দুই ছেলে হারেজের বয়স ১৯ ও আয়াসের বয়স ২১। তিন সন্তানই দৃষ্টিহীন এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে। 

জাহানা বেগম বলেন, “তারা যখন কিশোর ছিল, তখন থেকেই ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে শুরু করে। ওদের এইভাবে দেখাটা ছিল ভীষণ কষ্টের, আর মিয়ানমারের কোনো চিকিৎসায় করানো যায়নি। 
মেয়ের পায়ে হাত বোলাতে বোলাতে আলজাজিরাকে জীবনের গল্প বলছিলেন ৫০ পেরোনো জাহানা বেগম। সুমাইয়া তখন কোনো কিছু না বুঝেই হাসছিল, যেন চারপাশের কোনো কিছুতে তার কিছু যায় আসে না।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নয় মাস আগে তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর জাহানা বেগম ও তার পরিবার কক্সবাজারে পৌঁছায়।

তিনি বেলন, “আমরা আত্মীয়দের সাহায্যে কোনোভাবে ক্যাম্পে এসে পৌঁছাই। কিন্তু আমার জীবনে তখন থেকেই আরো কঠিন সময় শুরু হয়।” আট বছর আগে স্বামী হারিয়ে একাই সন্তানদের লালনপালন করে আসছেন জাহানা।

এমএসএফ এর চিকিৎসকেরা তার সন্তানদের চশমা দিয়েছেন এবং এখন পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের প্রতিবন্ধকতার মূল কারণ নির্ধারণের চেষ্টা করছেন।

জাহানা বেগম বলেন, “তারা কিছু বোঝানোর জন্য শব্দ করে।  কিন্তু ওদের মুখে একটা শব্দই স্পষ্ট শোনা যায়, তা হলো ‘আম্মা’। এর মানে হলো, ওরা অন্তত আমাকে চেনে। এই একটা শব্দই আমাকে সাহস দেয়, আশার আলো দেখায়। এই শব্দটাই আমাকে শক্তি দেয় ওদের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার। আমি চাই, আমার সন্তানদের জন্য আরো ভালো একটা ভবিষ্যৎ তৈরি করতে।”

“ব্যথাটা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও” 

নীল ও গোলাপি ডোরা কাটা কলারওয়ালা শার্ট আর বাদামি ডোরা লুঙ্গি পরে বসে ছিলেন আনোয়ার শাহ। তিনি জানালেন, কীভাবে একটি ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণে পা হারানোর পর তাকে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

গত বছর নিজের শহর লাবাদা প্রিয়ানে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের সময় ল্যান্ডমাইনে পা পড়লে তার একটি পা উড়ে যায়।

জাতিসংঘের ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী দেশ ল্যান্ডমাইন ও বিস্ফোরকে হতাহতের দিক থেকে। ২০২৩ সালে দেশটিতে ল্যান্ডমাইনের শিকার হন এক হাজারের বেশি মানুষ, যা অন্যান্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।

“ওটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ, সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিনগুলো,” বলেন ২৫ বছর বয়সী আনোয়ার শাহ। তিনি এখন চলাফেরার জন্য ক্রাচের ওপর নির্ভরশীল।

আনোয়ার শাহ বলেন, “পা হারানো আমাকে ভেঙে দিয়েছে। আগে আমি ছিলাম রোজগারকারী ও পরিবারের রক্ষাকর্তা। এখন আমাকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়। আমি স্বাধীনভাবে চলতে পারি না, কাজ করতে পারি না, এমনকি নিজের কাজটুকুও করতে পারি না।” কথাগুলো বলার সময় তার গলা ভারী হয়ে ওঠে। 

তিনি বলেন, “কখনো কখনো নিজেকে বোঝা মনে হয়, আমার প্রিয় মানুষদের জন্য। ব্যথাটা শুধু শরীরে না—এটা মনের, এটা গভীর। বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি, ‘আমার সঙ্গেই কেন এমন হলো?”

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে আনুমানিক ৩০ জনের বেশি শরণার্থী ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণে পা বা হাত হারিয়েছেন।

মিয়ানমারের চলমান সংঘাতে সক্রিয় সব পক্ষই কোনো না কোনো পর্যায়ে ল্যান্ডমাইন ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি। 

তিনি বলেন, “আমরা জানি, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বহু বছর ধরে তাদের ঘাঁটি রক্ষা করতে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে। এমনকি তারা যেসব গ্রাম ও শহর দখল করে পরে ছেড়ে দিয়েছে, সেখানেও বেসামরিক এলাকায় মাইন পুঁতে রেখেছে।”

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাইনের উপর পা পড়ার পর জীবন ‘পুরোপুরি বদলে গেছে’ ২৫ বছর বয়সী আবদুল হাশিমের। তিনি কক্সবাজারের ক্যাম্প ২১ এখন থাকেন। 

আবদুল হাশিম বলেন, “এখন আমাকে অন্যের উপর নির্ভর করেই দৈনন্দিন ছোট ছোট কাজগুলোও করতে হয়। আমি আগে ছিলাম পরিবারের উপার্জনক্ষম একজন, আর এখন নিজেকে মনে হয় একটা বোঝা।” 

ক্যাম্পে আসার পর থেকে হাশিম চিকিৎসা নিচ্ছেন তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের পুনর্বাসন কর্মসূচিতে। সেখানে তিনি ব্যথা কমানোর ওষুধ, ব্যালান্স অনুশীলন এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন।

তাকে কৃত্রিম পা দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। একটি কৃত্রিম পা তৈরির খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা, যা অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বহন করছে।

“সবকিছু সত্ত্বেও আমি আশার আলো দেখি। আমি স্বপ্ন দেখি, একটা কৃত্রিম পা পেলে আমি আবার কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারব, কাজ খুঁজে নিয়ে আমার পরিবারকে সাহায্য করতে পারব,” বলেন হাশিম।

এখন পর্যন্ত মানবিক সাহায্য সংস্থা  হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসরত ১৪ জন শরণার্থীর জন্য কৃত্রিম পা তৈরি ও সংযুক্ত করেছে। এই সংস্থাটি ক্যাম্পের বাইরে নিজস্ব অরথোটিক ওয়ার্কশপে এসব পা তৈরি করে।

আনোয়ার শাহ ও আবদুল হাশিম দুজনই এই সংস্থার পুনর্বাসন কর্মসূচির অংশ। তাদের নিয়মিত গেইট ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা ভবিষ্যতে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে।

সাহায্যকর্মীদের কঠিন সিদ্ধান্ত
শরণার্থী শিবিরে নির্যাতনের শিকার মানুষদের সহায়তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের জীবনমান উন্নত করতে চেষ্টারত সহায়তা কর্মীদের এখন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, কারণ আন্তর্জাতিক সহায়তা তহবিলে কাটছাঁট হয়েছে। 

এ বিষয়ে আলজাজিরার সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকর্মী। তার মন্তব্য ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। 

তিনি বলেন, “সহায়তা কমে যাওয়ায় এখন আমাদের খাদ্য দেওয়ার মধ্যে অথবা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মধ্যে একটা বেছে নিতে হচ্ছে।”  

ফোর্টিফাই রাইটস এর কুইনলি বলেন, “সহায়তা কমে যাওয়ার ফলে বড় ধরনের অর্থ ঘাটতি তৈরি হয়েছে, কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানের দায়িত্ব শুধু একটি দেশের ওপর নয়, এটি হওয়া উচিত যৌথ আঞ্চলিক দায়িত্ব।”

তিনি আরো বলেন, “এখানে একটি আঞ্চলিক উদ্যোগের প্রয়োজন, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর এগিয়ে আসা দরকার অর্থ সহায়তা দিতে। মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোরও কার্যকর সহায়তা দেওয়ার সামর্থ্য আছে।” 

তিনি আরো সুপারিশ করেন, স্থানীয় মানবিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করা উচিত—“হোক তারা বাংলাদেশি নাগরিক, কিংবা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গোষ্ঠী, কারণ তারাই সবচেয়ে ভালো জানে কীভাবে নিজ সম্প্রদায়কে সহায়তা করতে হয়।” 

কক্সবাজারে অবস্থানরত ১০ লাখ শরণার্থীর জন্য এই মুহূর্তে জরুরি সহায়তা প্রয়োজন, কারণ তহবিল ক্রমেই কমে আসছে। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রণীত ২০২৪ সালের যৌথ পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮৫২.

৪ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন ছিল, যার মাত্র ৩০ শতাংশ মিলেছে।

২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত  রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৩৪.৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য আহ্বানের বিপরীতে মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থ এসেছে।

শরণার্থী শিবিরের জন্য সহায়তা বাজেট কমানোকে একটি ‘দূরদৃষ্টিহীন নীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন মানবিক সংগঠন ‘হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন’-এর অ্যাডভোকেসি উপপরিচালক ব্ল্যান্ডিন বুনিওল। 

তিনি বলেন, “এ সিদ্ধান্ত মানুষের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে।”

[লেখক পরিচিতি:  সাংবাদিক প্রিয়াঙ্কা শঙ্কর শরণার্থী সংকট, মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে লেখালেখি করেন। তার বিশেষ এই প্রতিবেদনটি আলজাজিরা প্রকাশ করেছে ২৭ জুন। অনুবাদ করেছেন তানজিনা ইভা।] 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য পর ব র র শরণ র থ র সবচ য় আলজ জ র ম ইন র ক জ কর র জ বন র ওপর র বয়স র উপর

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে একটি কেন্দ্রে ভুল সেটে পরীক্ষা গ্রহণ

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা শহরের লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষায় ৪র্থ সেটের পরিবর্তে ২য় সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি জানাজানি হলে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষক ও পরীক্ষার্থী কলেজ কেন্দ্রে এসে ভিড় জমায় এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র সচিব বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন।

এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিবসহ দুইজন কে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি ও কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাবোর্ড। পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা নেয়া প্রশ্নপত্রে খাতা মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার (২৯ জুন) সকাল ১০টা হতে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ৫৬০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষায় বোর্ডের নির্দেশনা ছিল ৪ নং সেটে পরীক্ষা গ্রহণের। কিন্তু ভুলবশতঃ লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ২ নং সেটে পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীরা বাইরে এলে অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা হলে তারা প্রশ্ন মেলায়। তখন সেটের ভিন্নতার কারণে বিভ্রান্তিতে পড়ে। একপর্যায়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যাচাই-বাছাই করে জানতে পারেন লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা কলেজের প্রশ্নের সেট পবির্তন হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কলেজে এসে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায় পড়েন। এ সময় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা।

আরো পড়ুন:

চাকসু নির্বাচনসহ ৭ দাবিতে চবিতে ছাত্রশিবিরের সংবাদ সম্মেলন

আন্দোলন নিয়ে ‘হতবাক’ শহীদ আবু সাঈদের পরিবার

লোহাগড়া সরকারি আদর্শ কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ভুল সেটে পরীক্ষা নেয়ার ঘটনা পরীক্ষা শেষ হলে কিছুক্ষণ পর জানতে পারি। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত। আমাদের উত্তরপত্রের বিষয়ে কী হবে, তা নিয়েও আমরা চিন্তিত।’’

এ বিষয়ে কেন্দ্র সচিব ও লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজল কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদ জানান, লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা কলেজের কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বে ছিলেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজল কুমার বিশ্বাস এবং ট্যাগ অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম। তাদের দায়িত্বহীনতার বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ড কে জানানো হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাবোর্ড যশোরের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর আব্দুল মতিন বলেন, ‘‘পরীক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করে যে সেটে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে, ওই সেটের প্রশ্ন দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার জন্য  সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজল কুমার বিশ্বাস ও ট্যাগ অফিসার লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম কে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামীতে যাতে ভালোভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায়, সেই ব্যাপারে আরো সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।’’
 

ঢাকা/শরিফুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ