চার বছরের অপেক্ষার অবসান: বার্সার কাছ থেকে বকেয়া পাচ্ছেন মেসি
Published: 29th, June 2025 GMT
বার্সেলোনার হয়ে দীর্ঘ দুই দশকের সম্পর্কের ইতি টানলেও কিছু হিসেব এখনও বন্ধ হয়নি। ২০২১ সালে ক্লাব ছাড়ার সময় মেসি শুধু অশ্রুসিক্ত বিদায়ই নেননি, রেখে গিয়েছিলেন একটি আর্থিক অধ্যায়ও, যার অবসান ঘটছে অবশেষে।
স্প্যানিশ দৈনিক ‘স্পোর্ত’–এর তথ্য মতে, চার বছর আগের বকেয়া পারিশ্রমিক পরিশোধে অবশেষে পদক্ষেপ নিয়েছে কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা। সাবেক অধিনায়ক লিওনেল মেসি পাচ্ছেন প্রায় ৬ মিলিয়ন ইউরো। যার বাংলাদেশি মূল্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
২০২০ সালে করা মেসির শেষ চুক্তি অনুযায়ী তিনি মোট ৪৮ মিলিয়ন ইউরো পেতেন কিস্তিতে। তবে কোভিড-১৯ এর ধাক্কা ও ক্লাবের চরম অর্থসংকটের কারণে শেষ কিস্তির টাকা অনিশ্চিতই রয়ে যায়। শুধু মেসি নন, ওই সময় বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়—যেমন উমতিতি, বুসকেটস, কুতিনহো, দেম্বেলে—এমনকি তৎকালীন কোচ রোনাল্ড কোম্যানও একই সমস্যায় পড়েছিলেন।
আরো পড়ুন:
মেসি যাদুতে মায়ামির দারুণ জয়
মেসির ছায়ায় নয়, এখন আর্জেন্টিনার ফুটবল দল পুরোপুরি স্বনির্ভর
তৎকালীন ক্লাব সভাপতি বার্তামেউ আর্থিক নৈপুণ্যে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। অনেকের মতে, এ কারণেই শেষ পর্যন্ত বার্সা ছাড়তে বাধ্য হন ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে সফল খেলোয়াড় মেসি।
বার্সেলোনা এখনও পুরোপুরি আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্ত হয়নি। চলতি মৌসুমেও লা লিগার রেজিস্ট্রেশন নীতিমালা নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিল ক্লাবটি। দানি ওলমো ও পাউ ভিক্টরের রেজিস্ট্রেশন আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভব হয়নি।
তবে, সব প্রতিকূলতার মাঝেও বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই ক্লাবের একটি দায়িত্বশীল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বর্তমানে বার্সা নয়, মেসির মনোযোগ ফ্লোরিডার ক্লাব ইন্টার মায়ামি নিয়ে। একদিকে ক্লাব বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে মায়ামি। অন্যদিকে রেকর্ড পরিমাণ পারিশ্রমিকে আলোচনায় রয়েছেন এলএমটেন।
এপি জানিয়েছে, মেসির বর্তমান বাৎসরিক আয় প্রায় ২০.
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার
নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবসটি পালিত হয় প্রতিবছর ২৬ জুন। এই দিন আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেসব ব্যক্তিকে, যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার। বাংলাদেশের সংবিধান, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এবং জাতিসংঘ নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক শাস্তির অবমাননাকর আচরণের বিরুদ্ধে কনভেনশনের আলোকে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও ভুক্তভোগী ব্যক্তির ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জোরাল দাবি আমরা সব সময় জানিয়ে আসছি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরে সাতুরিয়া গ্রামের স্কুলছাত্র মো. লিমন হোসেনকে র্যাবের একটি দল গুলি করেছিল। পরে তাঁর বাম পা কেটে ফেলতে হয়। এমনকি ঘটনার পর পরিবারকে কোনো তথ্য না দিয়ে লিমনকে বেআইনিভাবে আটক এবং তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মামলা করা হয়, যা আদালতে খারিজ হয়ে যায়। একই বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র্যাব সদরদপ্তর ও ঝালকাঠির র্যাব কার্যালয় থেকে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি করা হলেও আজ পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। ভুক্তভোগী লিমন এখনও ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন।
২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পল্লবীতে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে জনি ও তাঁর ভাই রকিকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ হেফাজতে অমানুষিক নির্যাতনের ফলে জনির মৃত্যু ঘটে। থানায় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালে জনির ভাই মো. ইমতিয়াজ হোসেন রকি ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’-এর অধীনে আদালতে মামলা করেন। ছয় বছর ধরে বিচার চলার পর ২০২০ সালে এ আইনের অধীনে দেশের প্রথম রায় ঘোষিত হয়। তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন ও দুই পুলিশ সোর্সকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে এ ধরনের নির্যাতন বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ৩১ (আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার), ৩২ (জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ), ৩৩ (গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ) এবং ৩৫ (বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে ২০১৩ সালে প্রণীত ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন’-এর লঙ্ঘন। এ ছাড়াও বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা-সংবলিত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের যুগান্তকারী রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাস্তবে এ আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘাটতি প্রমাণ করে– নির্যাতন প্রতিরোধে শুধু জাতীয় আইন ও বিচার ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। অভ্যন্তরীণ প্রতিকার ব্যবস্থা দুর্বল বা অকার্যকর হয়ে পড়লে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহি কাঠামো অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে ‘নির্যাতনের এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক, শাস্তির অবমাননাকর আচরণের বিরুদ্ধে কনভেনশন’ অনুস্বাক্ষর করলেও এখনও অনুচ্ছেদ ২১ (রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অভিযোগ প্রক্রিয়া), ২২ (ব্যক্তিগত অভিযোগের অধিকার) ও ২২-এর জন্য আলাদাভাবে সম্মতিমূলক ঘোষণা দেয়নি এবং অনুচ্ছেদ ২০ (নির্যাতন বিষয়ে কমিটির গোপন তদন্ত) পালনে এখনও রাজি বা সক্রিয় হয়নি। একই সঙ্গে ‘নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐচ্ছিক প্রটোকল’ এখনও অনুমোদন না করায় বাংলাদেশে কোনো স্বাধীন জাতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠিত হয়নি, যার মাধ্যমে আটকস্থলে নিয়মিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত হতো। এটা অনুমোদন করলে কার্যকর ও প্রতিরোধমূলক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যবেক্ষণ কাঠামো গড়ে উঠত, যা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর মতো ঘটনাগুলো প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। জাতিসংঘ সনদটির উল্লিখিত অনুচ্ছেদগুলোতে আলাদাভাবে সম্মতিমূলক ঘোষণা এবং ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুমোদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর সঙ্গে সাদৃশ্যমূলক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং জনগণের জন্য ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে সংঘটিত সব নির্যাতনের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই হবে। এ ধরনের নির্যাতন প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারসহ নির্যাতন, অন্যান্য নিষ্ঠুর-অমানবিক শাস্তি এবং অবমাননাকর আচরণ প্রতিরোধে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সনদে অনুস্বাক্ষর ও অনুমোদনের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে সুপ্রতিষ্ঠিত কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব। এতে দেশের জনগণকে এমন নির্যাতন থেকে সুরক্ষা প্রদান এবং ইতোপূর্বে সংঘটিত নির্যাতন ও নির্যাতনে মৃত্যুর যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।
আয়েশা আক্তার, মোহাম্মদ রাকিনুল হাকিম আলভী, ফাহাদ বিন সিদ্দিক: যথাক্রমে আইন বিশেষজ্ঞ, পরামর্শক ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্ট