রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

রবিবার (২৯ জুন) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ৭ম দিনের আলোচনার শুরুতে আলী রীয়াজ এ কথা বলেন। এ সময় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। 

আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, আবু সাঈদের শাহাদাত বার্ষিকীতে সবাই মিলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব। কিন্তু বাস্তবে সেটা কতটা সম্ভব হবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। আমরা খানিকটা শঙ্কিত যে, সে জায়গায় আমরা যাব না।”

তিনি আরো বলেন, ‘‘গত জুলাইয়ে আমরা যে ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের মধ্যে ছিলাম তা আমাদের সকলের মনে আছে৷ আরেকটা জুলাই এসেছে৷ গত জুলাইয়ে আমরা কেউ নিজ দলের পতাকা তুলে ধরিনি, বরং সবাই দেশের পতাকা তুলে ধরেছিলাম। আমরা সবাই ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেতে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।’’ 

‘‘প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোই জনগণের এক বিরাট অংশের প্রতিনিধিত্ব করে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবের মধ্য দিয়েই ৭০ অনুচ্ছেদ, এনসিসি, উচ্চকক্ষ গঠনের প্রক্রিয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কমিশন নমনীয় হয়েছে৷ ঐকমত্য কমিশন অবশ্যই রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ নয়৷ আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আন্তরিক থাকতে চাই।’’

দেশের স্বার্থে সংস্কার আলোচনার অগ্রগতি প্রয়োজন উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘‘আমরা কেউ পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না৷ তাই দেশের স্বার্থে আপনারা বিষয়টি বিবেচনা করুন৷ যে অঙ্গীকার নিয়ে আমরা গত জুলাইয়ে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, তার কতটা অর্জিত হয়েছে? আমরা কি শুধু নিজের ও দলের স্বার্থ চাইব, নাকি দেশের স্বার্থও দেখব?’’

ভবিষ্যতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে কেউ যাতে সংবিধান সংশোধন করতে না পারে, তা নিশ্চিতের উপর গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘‘সাংবিধানিকভাবেই এটা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিক রক্ষাকবচগুলো তৈরি করতে হবে৷ স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।’’ 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী,  জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ২৯টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। 

এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি এবং উচ্চ কক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়৷ 

কমিশন আগামী ২ জুলাই পরবর্তী আলোচনার দিন ধার্য করেছে। 

এএএম//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন বিলম্বিত বা না হওয়ার জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা যাঁরা বলছেন, তাঁরা একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখেই এমনটি বলছেন বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যাঁরা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলছেন, তাঁদের একটি উদ্দেশ্য আছে। যাঁরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চান, তাঁদের একটি উদ্দেশ্য আছে। হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা, না হয় বাংলাদেশে নির্বাচন না হওয়া। এটা তাঁদের উদ্দেশ্য হতে পারে। তবে এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে।’

আজ শনিবার বিকেলে ‘জিয়াউর রহমান: যুদ্ধের ময়দান থেকে রাষ্ট্রের প্রধান’ শীর্ষক একটি স্মারক প্রকাশনা ও আর্কাইভ উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন)।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংস্কার এবং বিচার চলমান প্রক্রিয়া। তারা পিআর পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষ, তথা জাতীয় সংসদের নির্বাচন চায়। সেটা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় এবং ঐকমত্য কমিশনে যা আলোচনা হয়েছে, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন বিষয়ে ঐকমত্য পাইনি।’

বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচনের ইতিহাস নেই উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আনুপাতিক নির্বাচন এ দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেখানে প্রযোজ্য, সেখানেও অনেক জটিল অবস্থা। এমন নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটাররা জানবেন না, কে তাঁদের এমপি হবেন। এমপিদের কাছে তাঁরা যে যাবেন, নির্ধারিত কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পাবেন না।’

দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ স্থানীয় নির্বাচনের জন্য নয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে এ দেশে যাতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ হয়। সেই রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে, যদি নির্বাচিত সরকার গঠিত হয়।’

এ কথা বলার আগে অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংস্কারের এখন এমন অবস্থা হয়েছে, আমি মাননীয় উপদেষ্টাকে (সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা) বলছিলাম, একটা কবিতাই লিখে ফেলেন, হে সংস্কার তোমাকে পাওয়ার জন্য, আর কতকাল আলাপ-আলোচনা করিলে, খানাপিনা খাইলে এই সংস্কার কার্যক্রম শেষ হবে।’

সবাইকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব মেনে নিতে হবে, এই যদি নিয়ত হয়, তাহলে কি ঐকমত্য হবে—প্রশ্নে রাখেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা করছি। কাছাকাছি আসছি। জাতির জন্য যেটা মঙ্গল হবে, সেটা আমরা ধারণ করছি। এভাবেই আমরা সংস্কারের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এই সংস্কার এমনভাবে করতে চাচ্ছে, সংবিধানে এমন সংস্কার ঢুকাব, কেউ যাতে বিলুপ্ত করতে না পারে। এটা তো বাইবেল নয়, ধর্মগ্রন্থ নয়। আমরা এমন সংস্কার করব, যে সংস্কার ১০-২০ বছর পরে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে নতুন চাহিদার ভিত্তিতে আবার পরিবর্তন হতে হবে। এটাই নিয়ম।’

আরও পড়ুনপুরোনো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখার চেষ্টা সহ্য করা হবে না: চরমোনাই পীর১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোকে একাত্ম হওয়ার আহ্বান এনসিপির
  • সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে, ঐকমত্য হয়নি: আলী রিয়াজ
  • সাংবিধানিক নিয়োগে এনসিসির পরিবর্তে নতুন কমিটির প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের
  • জুলাইয়ের মধ্যেই জাতীয় ঐকমত্যের সনদ হতে পারে: আলী রীয়াজ
  • আলোচনার অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়, জুলাইয়ে ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে শঙ্কা: আলী রীয়াজ
  • টেবিলের আলোচনায় মাঠে চাপ, লক্ষ্য বিএনপি
  • বাংলাদেশ পুনর্গঠনের বার্তা নিয়ে ভোটারদের কাছে যেতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পরামর্শ এবি পার্টির
  • নির্বাচন বিলম্বিত বা না হওয়ার জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে ‘জনগণ’ কীভাবে কথা বলবে