প্রথমবারের মতাে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিট্যান্স
Published: 29th, June 2025 GMT
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দু’দিন বাকি থাকতেই ৩০ বিলয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ২৮ জুন পর্যন্ত বৈধ চ্যানেলে এসেছে ৩০ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬৩০ কোটি ডলার বা ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। এর আগে করোনার প্রকোপ শুরুর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার এসেছিল। এতদিন সেটিই ছিল অর্থবছরের হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এদিকে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধিসহ নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২৮ মাস পর ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের ২৮ দিনে প্রবাসীরা ২৫৪ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২৩৭ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ জালিয়াতি বন্ধ ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে হুন্ডি চাহিদা কমেছে। যে কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে।
রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ে ৯ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। এর পর ওই মাসের ১৫ তারিখ সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার হয়। এ ছাড়া সব সময়ই এখনকার চেয়ে রিজার্ভ কম ছিল। গত মে মাসে ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সরকার। তবে বৈদেশিক মুদ্রার উচ্চ প্রবাহের কারণে ডলার দীর্ঘদিন ধরে ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে।
২০২৩ সালে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি চালুর পর থেকে রিজার্ভের তিনটি হিসাব হচ্ছে। ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া ঋণসহ গ্রস রিজার্ভের হিসাব করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া ঋণ বাদ দিয়ে আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল এবং আগামী এক বছরে সরকারি পরিশোধের হিসাব বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব করা হচ্ছে। গতকাল বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে এই পদ্ধতিতে হিসাব প্রকাশ শুরুর পর যা সর্বোচ্চ। ওই মাসে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া গতকাল নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় যেখানে জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। এর মানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নিট রিজার্ভ বেশি রয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। অর্থ পাচার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর
আগের সরকারের ৩৭০ কোটি ডলারের বকেয়া পরিশোধ করেছে। এর পরও গত ১০ মাসে রিজার্ভ বেড়েছে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করবে এনবিআর
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৫৫০ কোটি ডলার ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে সরকার একগুচ্ছ সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কর প্রশাসনে দুর্নীতি নিয়ে একটি জনমত জরিপ চালানো। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, সারে ভর্তুকি এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রণোদনা ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা জানানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিকল্পনা রয়েছে, প্রতি অর্থবছর শেষে ছয় মাসের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিসহ অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থার পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে।
গত সোমবার দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের পর সংস্থাটি ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে পরবর্তী কিস্তি পেতে শর্ত ও বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তী কিস্তির জন্য আইএমএফ মোট ৩৩টি শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো– আগামী অর্থবছরে সরকারকে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে।
এদিকে চলতি মাসের শুরুতে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার কাছে একটি চিঠি দেয়। এখানে বিনিময় হার নীতি, ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কার, রাজস্ব আহরণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে; যা আইএমএফের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক অর্থের ঘাটতি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদে সংকোচনমূলক নীতি থাকবে। কাঠামোগত সংস্কার প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে। বিশেষ করে নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতির স্মারকে (এমইএফপি) সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কর প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও সুশাসনের জন্য কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে কর প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে প্রতি দুই থেকে তিন বছরে একবার জরিপ চালানো হবে। কর্মকর্তাদের নৈতিকতা প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হবে এবং তারা প্রতিবছর আনুগত্যের ঘোষণা দেবেন।
এনবিআরের পরিকল্পনা রয়েছে, প্রতি অর্থবছরের শেষে ছয় মাসের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিসহ অসদাচরণ, শৃঙ্খলাভঙ্গের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থার পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। এনবিআর আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মকর্তাদের জন্য একটি আচরণবিধি ও নৈতিকতা সনদ প্রকাশ করবে। এনবিআরকে দুই ভাগ করে রাজস্ব আহরণ ও নীতি গ্রহণে আলাদা বিভাগ করার বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে। শিগগির এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ কার্যকর এবং একটি বিস্তারিত কর্মকৌশল প্রকাশ করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে ভ্যাট ও আমদানি শুল্কে করছাড় কমিয়ে আনা শুরু হয়েছে। তাছাড়া আদর্শ ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ বাস্তবায়নের আওতা বাড়িয়েছে। বেশ কিছু পণ্যে শুল্কায়নের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে কর আহরণ অটোমেশন এবং প্রশাসনের উন্নয়নসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে সরকার মনে করছে।
ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা
সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ভর্তুকি কমিয়ে অগ্রাধিকার ব্যয়ে সুরক্ষা দেবে এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে তা টেকসই পর্যায়ে আনার জন্য একটি বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। একটি কাঠামোগত বেঞ্চমার্ক অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি তিন বছরের রোডম্যাপ গৃহীত হবে, যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান ধাপে ধাপে কমানো হবে।
রপ্তানি ভর্তুকির ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তৈরি পোশাক, চামড়া ও পাট খাতে প্রণোদনা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে। একই সঙ্গে ২০২৭ সালের জানুয়ারির মধ্যে রেমিট্যান্স প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হবে।