চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দু’দিন বাকি থাকতেই  ৩০ বিলয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ২৮ জুন পর্যন্ত বৈধ চ্যানেলে এসেছে ৩০ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬৩০ কোটি ডলার বা ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। এর আগে করোনার প্রকোপ শুরুর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার এসেছিল। এতদিন সেটিই ছিল অর্থবছরের হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এদিকে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধিসহ নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২৮ মাস পর ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের ২৮ দিনে প্রবাসীরা ২৫৪ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২৩৭ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ জালিয়াতি বন্ধ ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে হুন্ডি চাহিদা কমেছে। যে কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। 

রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ে ৯ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। এর পর ওই মাসের ১৫ তারিখ সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার হয়। এ ছাড়া সব সময়ই এখনকার চেয়ে রিজার্ভ কম ছিল। গত মে মাসে ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সরকার। তবে বৈদেশিক মুদ্রার উচ্চ প্রবাহের কারণে ডলার দীর্ঘদিন ধরে ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে।

২০২৩ সালে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি চালুর পর থেকে রিজার্ভের তিনটি হিসাব হচ্ছে। ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া ঋণসহ গ্রস রিজার্ভের হিসাব করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া ঋণ বাদ দিয়ে আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল এবং আগামী এক বছরে সরকারি পরিশোধের হিসাব বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব করা হচ্ছে। গতকাল বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে এই পদ্ধতিতে হিসাব প্রকাশ শুরুর পর যা সর্বোচ্চ। ওই মাসে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া গতকাল নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় যেখানে জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। এর মানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নিট রিজার্ভ বেশি রয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। অর্থ পাচার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর
আগের সরকারের ৩৭০ কোটি ডলারের বকেয়া পরিশোধ করেছে। এর পরও গত ১০ মাসে রিজার্ভ বেড়েছে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন য য় সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্কছাড়েও দেশি বিনিয়োগ নেই কনটেইনার পরিবহন খাতে

কনটেইনার পরিবহনের ব্যবসায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে দুই বছর আগে সরকার কনটেইনার আমদানিতে শুল্কছাড়ের সুবিধা দিয়েছিল। তবে গত দুই বছরে এক টাকাও বিনিয়োগ হয়নি এই খাতে। অথচ বাংলাদেশে সমুদ্রপথে নিয়মিত কনটেইনার পরিবহন বাড়ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২২ লাখ ৩৭ হাজার একক কনটেইনারে আমদানি–রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে পরিবহন করা হয়েছিল ২০ লাখ ৬৯ হাজার একক কনটেইনার। এক বছরের ব্যবধানে কনটেইনার পরিবহনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ শতাংশ।

কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের জন্য দরকার কনটেইনারবাহী জাহাজ। কনটেইনারবাহী জাহাজে দেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানি রয়েছে একটি। ২০২০ সাল থেকে কর্ণফুলী গ্রুপ এই খাতে বিনিয়োগ করে আসছে। বর্তমানে গ্রুপটির বহরে আটটি কনটেইনার জাহাজ রয়েছে। তবে কনটেইনার জাহাজ থাকলেও কনটেইনার খাতে দেশি কোনো উদ্যোক্তা তৈরি হয়নি। দেশি বিনিয়োগ না থাকায় এ ব্যবসার পুরোটাই চলে গেছে বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোর হাতে।

কাদের হাতে এ ব্যবসা

শিপিং কোম্পানি ও বন্দরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩৪১টি কোম্পানি কনটেইনার খাতে ব্যবসা করেছে। এসব কোম্পানির সব কটিই বিদেশি। বাংলাদেশে সরাসরি ও এজেন্টের মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানিগুলো এ ব্যবসা পরিচালনা করছে।

কনটেইনার খাতে বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশেও শীর্ষ স্থানে রয়েছে। মূলত তিনটি কোম্পানির হাতে রয়েছে এ খাতের বড় ব্যবসা। কোম্পানি তিনটি হলো ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক লাইন, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মেডিটেরানিয়ান কোম্পানি (এমএসসি) ও ফ্রান্সভিত্তিক সিএমএ–সিজিএম। এ ছাড়া জার্মানির হ্যাপাগ লয়েড, জাপানের ওশেন নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস বা ওয়ান, চীনের কসকো, হংকংয়ের এসআইটিসি কনটেইনার লাইন ও ওরিয়েন্ট ওভারসিস কনটেইনার লাইন।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে বহুমুখী ব্যবসার একটি হলো কনটেইনার খাত। এই খাতে তিনভাবে ব্যবসা করছে বিদেশি কোম্পানিগুলো। প্রথমত, শুধু শিপিং কোম্পানিগুলোর কাছে কনটেইনার ভাড়া দেওয়া। প্রতি কনটেইনারে (২০ ফুট লম্বা) দিনে আড়াই থেকে পাঁচ ডলারের মতো আয় হয়। দ্বিতীয়ত, নিজস্ব কনটেইনারের পাশাপাশি ভাড়া নিয়ে কনটেইনার পরিচালনা। সে ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানিকারকের প্রতিনিধির কাছ থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য ভাড়া নিয়ে ওই কনটেইনারে করে পণ্য গন্তব্যে পৌঁছে দেয় এসব কোম্পানি। এ জন্য নিজেরাই জাহাজ ঠিক করার কাজটিও করে। শিপিংয়ের ভাষায় এসব কোম্পানি ‘নন–ভেসেল অপারেটিং কমন ক্যারিয়ার (এনভিওসিসি)’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে এ রকম ৩০ থেকে ৩৫টি বিদেশি কোম্পানি ব্যবসা করছে। তৃতীয়ত, কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর নিজেদের জাহাজে নিজেদের কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের ব্যবসা, অর্থাৎ কনটেইনার ও জাহাজ—দুটিই এসব কোম্পানির। এ ক্ষেত্রে পরিবহনভাড়ার পুরোটাই এ ধরনের কোম্পানি পেয়ে থাকে। শিপিংয়ের ভাষায় এ ধরনের কোম্পানি ‘মেইন লাইন অপারেটর’ হিসেবে পরিচিত।

জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া নিয়েও অনেকে এ খাতে ব্যবসা পরিচালনা করে। শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি মায়ের্সক ও এমএসসির নিজস্ব জাহাজ ও কনটেইনার রয়েছে। বাংলাদেশে কনটেইনারের পাশাপাশি জাহাজ পরিচালনা করছে এমন বিদেশি কোম্পানির সংখ্যা ১২।

শুল্কছাড়, ফলাফল শূন্য

কনটেইনার পরিবহন খাতে দেশি উদ্যোক্তা তৈরি করতে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কনটেইনার আমদানিতে শুল্কছাড় সুবিধা দিয়েছিল সরকার। যেমন সাধারণ কনটেইনার আমদানিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট করভার ছিল ৩৭ শতাংশ। সেটি কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আবার হিমায়িত পণ্যের কনটেইনারের আমদানি শুল্ক ৩১ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়।

শুল্কছাড় দেওয়ার পর গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৫১৭টি কনটেইনার আমদানি করা হয়। গত অর্থবছরে আমদানি হয় ৬৭৮টি কনটেইনার। এসব কনটেইনার আমদানি হয়েছে মূলত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য। ভারী যন্ত্রপাতি বা বিশেষায়িত পণ্য পরিবহনের সুবিধার জন্য পণ্যসহ কনটেইনার কিনে আনা হয় উন্নয়ন প্রকল্পে, অর্থাৎ ব্যবসার জন্য একটি কনটেইনারও আমদানি করা হয়নি।

হারিয়ে গেল দেশি উদ্যোক্তা

বাংলাদেশে কনটেইনারের ব্যবসা একসময় ছিল শুধু চট্টগ্রামের কিউসি গ্রুপের হাতে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, গত শতকের নব্বই দশকের শেষে কনটেইনার জাহাজের পাশাপাশি কনটেইনার পরিচালনা ব্যবসাও শুরু করে গ্রুপটি। ২০০৫ সালে গ্রুপটির বহরে থাকা আটটি কনটেইনার জাহাজের সব কটিই বিক্রি করে দেওয়া হয়। কনটেইনারের ব্যবসাও সে সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

২০২০ সালের জুনে দেশি কোম্পানি কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এইচআর লাইনসের হাত ধরে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনার ব্যবসা আবার শুরু হয় এই দেশে। এইচআর লাইনস এখন আটটি ফিডার জাহাজ পরিচালনা করছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি জাহাজে কনটেইনার রাখার জায়গা (স্লট) ভাড়া দিচ্ছে।

বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফাইয়াজ খন্দকার বলেন, শিপিং খাতে বাংলাদেশের বড় উদ্যোক্তারা যুক্ত হয়েছেন। আবার শিপিং ও লজিস্টকস খাতে বিশ্বের বহু কোম্পানিতে বাংলাদেশি দক্ষ জনবল রয়েছে। ফলে এই খাতে দেশি উদ্যোক্তারা যুক্ত হলে তাতে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, তেমনি দেশের অর্থ দেশেই থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বুয়েটে স্নাতক শ্রেণির বিভিন্ন লেভেল বা টার্মের সংশোধিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ
  • ১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৪৮%
  • হলান্ডের জোড়া গোল তবু মোনাকোয় আটকে গেল সিটি, আর্সেনালের জয়
  • মাধ্যমিক পেরোনো কড়া সম্প্রদায়ের প্রথম নারী গীতা, উচ্চমাধ্যমিকে পাশে দাঁড়াল প্রশাসন
  • বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন: সিইসি
  • বাজারে এখনো কদর ইনস্ট্যান্ট কফির
  • শুল্কছাড়েও দেশি বিনিয়োগ নেই কনটেইনার পরিবহন খাতে
  • ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনদের সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমছে: টাইমস/সিয়েনা জরিপ
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে ২৫ শিক্ষার্থীর সাজা
  • প্রথমবার রিটার্ন দেওয়ার সময় যে ৫টি ভুল করা যাবে না