৪ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণকাজ, রডে মরিচা
Published: 29th, June 2025 GMT
চার বছরেও শেষ হয়নি সাড়ে ৩ কোটি টাকার ছাগলছিড়া সেতু নির্মাণকাজ। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় রডগুলোতে পড়েছে মরিচা। নির্মাণাধীন সেতুটির অবস্থান ফুলবাড়িয়া উপজেলার ছাগলছিড়া এলাকার রাঙ্গামাটিয়া খালের ওপর।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, ২০২১ সালে সেতু নির্মাণের জন্য রাঙ্গামাটিয়া খালের ওপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্সকে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকার সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এক বছর সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা, কিন্তু ৪ বছরেও শেষ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত চারবার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রডে ধরেছে মরিচা। কবে নির্মাণকাজ শেষ হবে বলতে পারেনি স্থানীয় এলজিইডি অফিস।
স্থানীয় বাসিন্দা মোখলেছুর রহমানের ভাষ্য, সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় ফুলবাড়িয়া উপজেলার পলাশতলী, রাধাকানাই, গোবিন্দপুর, ধুরধুরিয়া ছলিমপুর গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে ফুলবাড়িয়ার শিক্ষার্থীরা ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে থাকেন। মাসখানেক আগে চলাচলের জন্য নির্মাণ করা কাঠের সেতু থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে আহত হন পশু চিকিৎসক বজলুর রহমান। এ ছাড়া পারাপার হতে যেয়ে অনেকে পা ভেঙে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪ বছর ধরে কাজ ফেলে রাখায় রডগুলোতে মরিচা ধরেছে।
এলাকার বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদ জানান, ফুলবাড়িয়া ও ত্রিশাল উপজেলায় সড়ক যোগাযোগে সহজ সংযোগ স্থাপন করে কাঠের সেতুটি। এখানে নির্মাণাধীন পাকা সেতুর কাজ ৪ বছরেও শেষ হয়নি। এ কারণে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় গণঅভ্যুত্থানে নিহত আমিরুল ইসলামের লাশ এক কিলোমিটার নিতে হয়েছে কাঁদে করে।
অভিযোগ উঠেছে, সেতুটি নির্মাণ না করায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথে দুই উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে আসছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, বন্যা ও করোনা মহামারীর কারণে সেতু নির্মাণে চারবার সময় বাড়ানো হয়েছে। দ্রুততম সময়েই আবার কাজ শুরু হবে বলে দাবি তাঁর।
এলজিইডির ফুলবাড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষ করার জন্য সাতবার চিঠি দিয়েছি। এ পর্যন্ত সেতুর একটি গার্ডার নির্মাণ করেছে মাত্র। কিন্তু ঠিকাদারকে বাকি কাজ করতে তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আমাদের কথায় কর্ণপাত করছেন না। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বছর ও শ ষ ৪ বছর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক চুক্তির সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তি করার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তির খসড়াও তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে আগামী ৩ ও ৪ জুলাই। চুক্তি হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের হার কিছুটা কমবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ওয়াশিংটন যাবেন। একই বিষয়ে ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্র সফররত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান ইউএসটিআরের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। ইউএসটিআরের সঙ্গে আগামী বৈঠকেও খলিলুর রহমান উপস্থিত থাকবেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করার দ্বারপ্রান্তে আছি ঠিক, তবে এটা শর্ত সাপেক্ষে। যদি মনে করি যে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্তগুলো মানা সম্ভব, তাহলেই চুক্তি হবে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু তথ্য পাওয়া বাকি আছে। শর্তসহ পুরো প্রক্রিয়াটা উপদেষ্টা পরিষদকে জানাব। ৩ জুলাইয়ের আগে না গিয়ে পরেও যেতে পারি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা তো যুক্তরাষ্ট্রে আছেনই।’
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে আসছে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। শুল্কের হার কম-বেশি করে দেশটি একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় ৬০টি দেশের ওপর।
বাড়তি শুল্ক আরোপ কার্যকরের কথা ছিল ৯ এপ্রিল। তবে ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্ক হারের ঘোষণা তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে। স্থগিতের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৯ জুলাই। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আশাবাদী যে স্থগিতের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দিতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিন মাসের জন্য সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে গত ৭ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানো নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে বলে জানানো হয়।
ইউএসটিআরের রাষ্ট্রদূত জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে একই দিন আলাদা চিঠি পাঠিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিতে যদি কোনো বাধা থাকে, তা দূর করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত এবং বাংলাদেশ সব সময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী।
উভয় দেশের মধ্যে এরপর দুই মাসে কয়েক দফা সরাসরি বৈঠক হয়েছে। হয়েছে চিঠি-চালাচালি এবং অনলাইন বৈঠক। ইউএসটিআরের সঙ্গে এর আগে গত ২১ এপ্রিলও ওয়াশিংটনে একটি বৈঠক হয় বাংলাদেশের। এতে তারা ছয়টি বিষয়ে জানতে চায়। ৪ জুন চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা জানানো হয়। শুল্ক চুক্তির খসড়াটি করা হয় ১২ জুন, যার ৫ দিনের মাথায় ১৭ জুন এর ওপর করা হয় অনলাইন বৈঠক। এ বৈঠকের ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ২৬ জুন ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন।
যে ছয় বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেগুলো কী, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে কথা না বলার শর্ত রয়েছে।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু বিষয় চেয়েছে, যা তাদের দেশের আইনে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের আইনে প্রযোজ্য নয়, এমন বিষয়ে একমত না হতেই দর-কষাকষি করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত, ভিয়েতনাম, জাপান ইত্যাদি দেশ পাল্টা শুল্কের হার কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে এ বিষয়ে তারা কোনো ধরনের আলোচনায় আর বসবে না।
বাণিজ্যসচিব গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, পাল্টা শুল্কের হার কমাতে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশই এগিয়ে রয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি তিন লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি টনে ২০ থেকে ২৫ মার্কিন ডলার বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকেই এ গম আমদানি করা হবে। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোয়িং উড়োজাহাজ আমদানির। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিমাণ বাড়াতে কয়েকটি গুদাম নির্মাণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়, এমন বেশির ভাগ পণ্যের ওপর শুল্ক রাখা হয়নি অর্থাৎ শূন্য শুল্ক করে দেওয়া হয়েছে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মো. ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি লম্বা সময়ের জন্য স্থগিত করবে। একান্ত যদি না–ই করে, সরকারের উচিত হবে দেশটির সঙ্গে দেনদরবার করে বাংলাদেশের শুল্কের হার যেন প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত ইত্যাদি দেশের সমান বা কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যায়।’
ফজলুল হক আরও বলেন, ভারতের পাল্টা শুল্কের হার বাংলাদেশের চেয়ে কম। ভারত যদি দর-কষাকষি করে আরও কমাতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের বিপদ ভবিষ্যতে বাড়বে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।