কোথাও যাওয়ার পথ নেই আফগান শরণার্থীদের
Published: 30th, June 2025 GMT
তেহরানের উত্তরাঞ্চলে সেলাইয়ের কাজ করছিলেন ৩৪ বছর বয়সী আফগান নারী শামসি। হঠাৎ ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে দৌড়ে ঘরে ফিরে আসেন তিনি। দেখেন, তাঁর ছোট দুই মেয়ে টেবিলের নিচে বসে ভয়ে কাঁপছে। শামসি বলেন, ‘তালেবান থেকে পালিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু এখানে এসে মাথার ওপর বোমা পড়ছে।’
শামসি ও তাঁর স্বামী যিনি সাবেক আফগান সেনা অস্থায়ী ভিসায় ইরানে এসেছিলেন। কিন্তু ভিসা নবায়ন করতে না পারায় এখন তারা অনিবন্ধিত শরণার্থী। তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ফিরে যেতে পারছেন না আফগানিস্তানেও। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় কাজের কোনো সুরক্ষা নেই শামসির। নেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সাহায্যের সুযোগ। তিনি বলেন, ‘কোনো সাহায্য পাইনি, না ইরানিদের কাছ থেকে, না আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার কাছ থেকে।’
ইরানে আনুমানিক ৩৫ লাখ আফগান শরণার্থী আছেন। এর মধ্যে ২৬ লাখের বেশিই অনিবন্ধিত। শুধু তেহরানেই ১৫ লাখের মতো আফগান শরণার্থী বসবাস করেন। ১২ দিনের যুদ্ধে তারা ছিলেন একেবারেই অসহায়; না ছিল আশ্রয়, না তথ্য, না সহায়তা।
২২ জুন রাতে এক বিস্ফোরণে শামসিদের অ্যাপার্টমেন্টের জানালা ভেঙে যায়। পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় পাশের একটি ভবন। শামসি বলেন, ‘বাচ্চাদের দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে একটা ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি, যদি হঠাৎ কিছু হয়!’
যুদ্ধবিরতি হলেও ইরানে থাকা আফগান শরণার্থীদের সমস্যার শেষ হয়নি। শামসির মালিক শহর ছেড়ে পালিয়েছেন, বেতনও দেননি। ‘যখন আমি আমার বেতন চাই, সে বলে, তুমি তো আফগান, চলে যাও!’
ইরানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত তিন আফগান নিহত হয়েছেন। এমন অবস্থায় ইরানে থাকা আফগান শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত। ইরান ঘোষণা দিয়েছে, ২০ লাখ আফগানকে ফেরত পাঠানো হবে। তবে ১২ দিনের যুদ্ধে সীমান্ত পেরিয়ে ফিরে গেছেন অনেকেই। কিন্তু শামসির মতো অনেকের ফেরা সম্ভব নয়। ‘আমরা নিরাপত্তার জন্য এসেছিলাম’ বলেন তিনি। যদি আবার যুদ্ধ শুরু হয়? ‘তবুও এখানেই থাকব। তালেবানের কাছে ফিরতে পারব না।’ খবর আলজাজিরার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন আফগ ন শরণ র থ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আইএমএফের
রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও ভর্তুকি হ্রাসে জোর দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু করায় সংস্থাটি বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে। আবার এ–ও বলেছে, ভবিষ্যতে বিনিময় হার পরিপূর্ণভাবে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আইএমএফের কার্যালয় থেকে গতকাল রোববার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মিশনপ্রধান পাপাজর্জিও এসব কথা বলেন। উপমিশনপ্রধান আইভো ক্রিজনার ও আইএমএফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জয়েন্দু দে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আইএমএফ বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হচ্ছে বাংলাদেশ। এ সময়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিতা দরকার। আরও দরকার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ, শাসনব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ ও তথ্যের মানোন্নয়ন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ একটু বেড়েছে। ২০২৬ সালের বদলে এটা শেষ হবে ২০২৭ সালের জানুয়ারিতে এবং বাকি সময়ে আরও ৮০ কোটি মার্কিন ডলার বাড়তি ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হলেও ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে মোটামুটি সঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ।
আইএমএফ আরও বলেছে, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ও এনবিআর পৃথককরণ নিয়ে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক। মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, বাংলাদেশ কীভাবে কার্যকরভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াবে, সে লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশকে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে। চলমান আন্দোলনের পরিস্থিতিতে তা কি অর্জন করা সম্ভব, এমন প্রশ্নের জবাবে পাপাজর্জিও বলেন, ‘কঠিন পরিস্থিতির কথা স্বীকার করছি। তবে লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও তা অর্জনযোগ্য। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের অনুপাতের দিক থেকে বিশ্বে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ অবস্থার উত্তরণ দরকার।’