চীনের এক যুবক ভেবেছিলেন, তিনি স্বপ্নে চামচ গিলে ফেলেছেন। কিন্তু ছয় মাস পর সত্যিটা জানার পর নিজেই চমকে গেছেন।

২৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম ইয়াং। সম্প্রতি পেটের অস্বস্তি নিয়ে তিনি সাংহাইয়ের ঝোংশান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। তিনি ধারণা করেছিলেন, কোনো খাবারের সঙ্গে ভুল করে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলেছেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁর পেটের ভেতরে আটকে থাকা ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা একটি সিরামিকের কফি চামচ খুঁজে পান।

পেট থেকে চামচটি বের করার পর ইয়াং বুঝতে পারেন, ছয় মাস ধরে যে ঘটনাকে স্বপ্ন ভেবে আসছিলেন, তা আসলে বাস্তব।

চিকিৎসকেরা পেটে চামচ আটকে থাকার কথা জানানোর পর ইয়াং বুঝতে পারেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডে ঘটনাটি ঘটে। সেদিন একটি হোটেলকক্ষে অতিরিক্ত মদ পান করে ফেলেছিলেন তিনি। একপর্যায়ে মদের নেশা কাটাতে গলায় কফির চামচ ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করেন।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চামচটি গলায় ঢোকানোর সময় অসাবধানতাবশত পেটে চলে যায়। এ সময় তিনি এতটাই মাতাল ছিলেন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর ইয়াংয়ের মনে হয়েছিল, তিনি একটি চামচ গিলে ফেলার স্বপ্ন দেখেছেন মাত্র। ফলে অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও ব্যবসার কাজে বেরিয়ে পড়েন এবং চীনে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকেন।

সাংহাইয়ে ফিরে যাওয়ার পর ছয় মাস ইয়াং নিয়মিত শরীরচর্চা করেছেন। এ সময় উল্লেখযোগ্য কোনো শারীরিক সমস্যাও অনুভব করেননি। কিন্তু ১৮ জুন পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকেরা এন্ডোস্কপি করে তাঁর পেটের মধ্যে সিরামিকের চামচ খুঁজে পান। প্রথম দফায় চামচটি বের করা সম্ভব হয়নি, কারণ এটি পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। পরে কৌশল বদলে সফলভাবে চামচটি বের করতে সক্ষম হন চিকিৎসকেরা। পরে ইয়াংকে হাসপাতাল থেকে ছাড় দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি খুবই বিপজ্জনক হতে পারত। ভাগ্য ভালো, চামচটা এমনভাবে আটকে ছিল যে বড় ক্ষতি হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র ছয় ম স

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ