চট্টগ্রামে জামিনে বেরিয়ে আবারও চাঁদাবাজিতে নেমে ধরা পড়েছেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিস্কৃত নেতা ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মো. সবুজ ওরফে বার্মা সবুজ। ৩৬ বছর বয়সী এই যুবকের মামলার সংখ্যাও ৩৬টি। গত শনিবার রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার হিলভিউ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার সবুজ বায়েজিদ বোস্তামী থানার হিলভিউ বার্মা কলোনীর নুরুল আমিন ওরফে নুরুল আমিন কসাইয়ের ছেলে। তিনি পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। গত বছরের একটি হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে বহিস্কার করে বিএনপি। তার আরেক ভাই নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুলও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। এর আগে গত বছরের ২৫ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত ২৭ জুন রাত ১০টার দিকে বার্মা সবুজের নেতৃত্বে তার সহযোগী সুমন খান ও মো.

জনি একটি নির্মাণাধীন ভবনে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে নির্মাণ কাজ বন্ধের হুমকি দেন। পরদিন গত শনিবার সকাল নয়টার দিকে ভবনের নির্মাণ কাজ চলাকালীন বার্মা সবুজ ও তার সহযোগিরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভবনটির মালিকের বাসায় যান। সেখানে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে। ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় ভবন মালিক মোহাম্মদ ইউসুফ বাদী হয়ে মামলা করেন। রাতে হিলভিউ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বার্মা সবুজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বার্মা সবুজ ও তার সহযোগিরা একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফাঁকা গুলি করে কাজ বন্ধ করে দেয় তারা। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বার্মা সবুজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এটিসহ ৩৬টি মামলা রয়েছে।’

পুলিশ জানায়, সবুজ, সাইফুল ও ফাহিম তিন ভাই। এই তিন ভাইয়ের চাঁদাবাজি ও তাদের গড়ে তোলা সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, খুলশীসহ নগরের বিভিন্ন থানার মানুষ অতিষ্ঠ। এই তিন ভাইয়ের প্রত্যেকের নিজস্ব বাহিনী আছে। বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, খুলশী ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে জমি দখল-বেদখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট সবকিছুরই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এই তিন ভাই। সবুজ পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও তার ভাই আরেক সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুল নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক। সাইফুলের বিরুদ্ধেও অন্তত ২১টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১১ অক্টোবর বায়েজিদ থানার শান্তিনগর এলাকায় দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মোহাম্মদ ইমন (২৮) নামের এক যুবক নিহত হয়। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুজনকেই বহিষ্কার করে বিএনপি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ