রপ্তানির ১৪ হাজার কনটেইনারের স্তূপ
Published: 30th, June 2025 GMT
কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুই দিনের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে প্রায় ১৪ হাজার রপ্তানিবাহী কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। গতকাল রোববার রাতে কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। তবে সন্ধ্যার পর রপ্তানির শুল্কায়নসহ কিছু কাজ শুরু হয়েছে।
বন্দর, শিপিং এজেন্ট ও কনটেইনার ডিপো থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই দিনের এই কর্মসূচির কারণে প্রথম দিন গত শনিবার ৬৩ কনটেইনার রপ্তানি পণ্য না নিয়েই বন্দর ছেড়ে গেছে। দ্বিতীয় দিন তিন জাহাজে ৩ হাজার ৬৮০ কনটেইনার রপ্তানি হয়নি। অন্যদিকে কাজ না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিপোগুলোতে রপ্তানি কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও এগুলো এখন সময়মতো আর রপ্তানির সুযোগ নেই।
আটকে পড়া রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগই পোশাকশিল্পের। যেমন চট্টগ্রামের এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ৩০ কনটেইনার পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে
পাঠানোর কথা ছিল। কর্মসূচিতে আটকা পড়ে যায় এসব কনটেইনারবাহী রপ্তানি পণ্য। জানতে চাইলে এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম প্রথম আলোকে বলেন, আটকে পড়া কনটেইনার পণ্যের কোনোটিই আর সময়মতো ক্রেতার হাতে পৌঁছাবে না। দুই দিনের কর্মসূচিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল পোশাকশিল্পের।
কাস্টমসের অনুমোদন ছাড়া জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো, আমদানি পণ্য খালাস বা পণ্য রপ্তানির মতো কোনো কার্যক্রমই করা যায় না। কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে কর্মস্থলে কোনো কর্মকর্তা না থাকায় শনিবার কোনো কার্যক্রমের অনুমোদন মেলেনি। তাতে শনিবার আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম হয়নি। তবে আগের দিনের অনুমোদনের ওপর ভিত্তি করে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়। মোট ১৩৯ কনটেইনার খালাস হয়।
কর্মসূচির মূল প্রভাব পড়ে গতকাল। এ দিন তিনটি জাহাজ বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রপ্তানি কনটেইনার ডিপো থেকে না আসায় জাহাজ তিনটি বন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি। এই তিন জাহাজের একটি ‘এএস সিসিলিয়া’ জাহাজে ৫৬৪ একক কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। একইভাবে ‘এক্সপ্রেস নিলওয়ালা’ জাহাজে রপ্তানির কথা ছিল ১ হাজার ৪৬০ একক কনটেইনার এবং ‘হং ডা জিন-৬৮’ জাহাজে ১ হাজার ৬৬৬ একক কনটেইনার রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। রপ্তানি কনটেইনার না পেয়ে তিন জাহাজই এখন জেটিতে অলস বসে আছে।
আটকে পড়া কনটেইনার পণ্যের কোনোটিই আর সময়মতো ক্রেতার হাতে পৌঁছাবে না। দুই দিনের কর্মসূচিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল পোশাকশিল্পের। এম এ সালাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এশিয়ান-ডাফ গ্রুপএএস সিসিলিয়া জাহাজটি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জাহাজ কোম্পানি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ডিপো থেকে রপ্তানি কনটেইনার আসতে না পারায় জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি। এই জাহাজের কনটেইনারগুলো সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় কনটেইনার জাহাজে তুলে দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। এখন সময়মতো ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় কনটেইনার জাহাজে তুলে দেওয়া যাচ্ছে না।
শিপিং কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি পণ্য প্রথমে কারখানা থেকে চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে আনা হয়। সেখানে শুল্কায়নের পর কনটেইনারে ভরা হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে বুকিং অনুযায়ী বন্দরে এনে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।
গত দুই দিনের কর্মসূচির প্রভাবে বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট তৈরি হয়েছে। যেমন কর্মসূচির আগে জেটিতে ভেড়ানোর জন্য সাগরে অপেক্ষমাণ ছিল ১৩টি জাহাজ। গতকাল দ্বিতীয় দিনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১টিতে। এর অর্থ, আমদানি পণ্য হাতে পেতে এখন অপেক্ষার সময় বাড়বে আমদানিকারকদের। আবার বন্দর চত্বরে কনটেইনারের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার থেকে বেড়ে ৪১ হাজারে উন্নীত হয়। এতে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমও ব্যাহত হবে।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, কাস্টমসের কর্মসূচির কারণে দুই দিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ জন্য সাগরে অপেক্ষমাণ জাহাজ ও বন্দর চত্বরে কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
সন্ধ্যার পর কাজ শুরুসরকার গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানায় সরকার। এরপর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সীমিত আকারে কাজ শুরু হয়। জানতে চাইলে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যার পর ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্য শুল্কায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক কর মকর ত ক স টমস ন র কর আমদ ন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।
সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।
একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।
তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।
এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।
গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগেএ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।
সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।