Prothomalo:
2025-11-17@09:32:23 GMT

কেমন বিরোধী দল চাই

Published: 30th, June 2025 GMT

গণতান্ত্রিক দেশের নীতিনির্ধারণে সরকার মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও বিরোধী দলের ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোনো দেশে জনমুখী শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে সরকারের পক্ষে জনস্বার্থবিরোধী আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলের আন্দোলনে সরকারের জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন হতে পারে ও পরবর্তী নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা কমে যায়। ডানপন্থী সরকারের বিপরীতে যদি মধ্যপন্থী বা বামপন্থী আদর্শের শক্তিশালী বিরোধী দল থাকে, তাহলে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য ডানপন্থী সরকারকেও কল্যাণরাষ্ট্রের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়। আবার বাম বা মধ্যপন্থী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিরোধী দল যদি ডানপন্থী হয়, তাহলে সরকার অনেক সময় বাজারমুখী কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়।

বিরোধী দল দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষাকে গুরুত্ব দিলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে দেশি–বিদেশি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে অন্যায় সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয় না। কিন্তু কোনো দেশের সরকারি দলের মতো বিরোধী দলও যদি দেশি–বিদেশি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে, তখন সে দেশের রাজনীতি হয়ে ওঠে গোষ্ঠীস্বার্থের রাজনীতি। কোন দল দেশি–বিদেশি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বেশি রক্ষা করবে, এ রকম প্রতিযোগিতার মধ্যে চাপা পড়ে জনস্বার্থের রাজনীতি।

বিরোধী দল যদি পরিচয়ের রাজনীতিতে জোর দেয়, সরকারি দলকেও তার সঙ্গে তাল মেলাতে হয়। বিরোধী দল নীতিভিত্তিক রাজনীতি করলে সরকারি দলও নীতিভিত্তিক রাজনীতি করতে বাধ্য থাকে। একদল ইতিহাস নিয়ে রাজনীতি করলে, অন্য দলও ইতিহাস নিয়ে রাজনীতি করতে উদ্বুদ্ধ হয়। 

শুধু সরকারি দলের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলাই যথেষ্ট নয়। বিরোধী দল যদি গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকে, যদি গণতান্ত্রিক হাতিয়ারগুলো অগণতান্ত্রিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে, সেটাও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি বিরোধী দলগুলো নীতিভিত্তিক রাজনীতির বদলে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে রাজপথ—সব ক্ষেত্রেই সরকারি দলকে বাধা দেওয়ার রাজনীতিই করেছে। বিরোধী দলের এসব প্রবণতা মোকাবিলা করাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সরকারি দল আরও বেশি অগণতান্ত্রিক হয়েছে। নানা ধরনের অগণতান্ত্রিক আইনকানুন ও নীতিমালা তৈরি করেছে।

শক্তিশালী ক্ষমতাসীন দলের বিপরীতে দুর্বল বিরোধী দল থাকাও গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। বিগত স্বৈরশাসনের সময় আমরা দেখেছি, জাতীয় পার্টির মতো দুর্বল একটি দলকে সংসদে সাজানো বিরোধী দল হিসেবে সাজিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যা খুশি তা–ই করেছে। এ জন্য মাঠের বিরোধী দলকে হামলা–মামলা–নিপীড়নের মাধ্যমে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। সাজানো নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল কে হবে, তা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা না থাকলেও অনিশ্চয়তা ছিল সরকারের পছন্দের গৃহপালিত দল হিসেবে জাতীয় পার্টির কোন অংশটি নির্ধারিত হবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিপ্লব বা গণ–অভ্যুত্থানের পর শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে কর্তৃত্ববাদের পুনরুজ্জীবনের দৃষ্টান্ত রয়েছে। ২০০৩ সালে জর্জিয়ার রোজ রেভল্যুশনের পর কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক উত্তরণ না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিংকন এ মিচেল তাঁর দ্য কালার রেভল্যুশন গ্রন্থে বলেছেন, অভ্যুত্থানের তিন প্রধান নেতা মিখাইল সাকাশভেলি, জুরাব ঝভানিয়া ও নিনো বুরজানাদজের মধ্যে একসময় প্রবল বৈরিতা ছিল। অভ্যুত্থানের আগে তাঁরা রাজনৈতিকভাবে জোটবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল অভ্যুত্থানের পর একটি দল গঠন করে ২০০৪ সালের সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া। কারণ, এর ফলে নতুন একটি একদলীয় আধিপত্যমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। তার বদলে যদি নির্বাচনে সাকাশভেলির দলের বিপরীতে ঝভানিয়া ও নিনো বুরজানাদজের দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত, তাহলে হয়তো একদলীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না, অভ্যুত্থানপন্থী দ্বিদলীয় সংসদীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারত। (পৃষ্ঠা ১৩৮)

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরপর ২০০৪ সালে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে সাকাশভেলির নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ন্যাশানাল মুভমেন্ট (ইউএনএম)। অভ্যুত্থানের স্বপক্ষের শক্তির জোট হওয়ার কারণে সরকারের প্রতি ছিল জনগণের বিপুল সমর্থন। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ছিল দুর্বল। এ রকম এক পরিস্থিতিতে জনপ্রিয় সরকার সংবাদমাধ্যম ও বিচার বিভাগের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। দলীয় স্বার্থে নির্বাচনী আইন পরিবর্তন করে এবং দল ও রাষ্ট্রকে আলাদা রাখতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে অভ্যুত্থানের কয়েক বছরের মধ্যেই জর্জিয়া গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথ থেকে পিছলে যায়।

জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশেও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য শক্তিশালী জনমুখী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কোন দল ক্ষমতা গ্রহণ করবে, তা নিয়ে খুব বেশি অনিশ্চয়তা না থাকলেও অনিশ্চয়তা রয়েছে প্রধান বিরোধী দল নিয়ে। 

নির্বাচনের পর অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনেরও একটা আলোচনা আছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, বিরোধী দল কারা হবে এবং কতটা শক্তিশালী হবে। বিরোধী দল ছাড়া কিংবা দুর্বল বিরোধী দল থাকা অবস্থায় জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করলে যে দেশে আবারও একটি একচেটিয়া শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে না, তার কী নিশ্চয়তা? 

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দল কে হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা না থাকলেও প্রশ্ন ছিল বিরোধী দল নিয়ে। গণ–অভ্যুত্থানের পরও যদি এই পরিস্থিতির উত্তরণ না হয়, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে! শুধু সাংবিধানিক সংস্কার দিয়ে স্বৈরতন্ত্রের পুনরুত্থান ঠেকানো যাবে না, সংস্কারকৃত সংবিধান মেনে চলার মতো রাজনৈতিক সংস্কৃতিও লাগবে। 

আবার কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের দল প্রধান বিরোধী দল হবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা আছে। সম্ভাব্য মধ্য ডানপন্থী সরকারি দল বা জোটের বিপরীতে যদি কোনো ডানপন্থী দল বা জোট শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে, তাহলে মধ্যপন্থী দলটি আরও ডান দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বা জোট যদি বামপন্থী বা মধ্য বামপন্থী দলের জোট হয়, তাহলে মধ্য ডানপন্থী সরকারি দল বা জোট বাধ্য হবে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির ওপর জোর দিতে।

বাংলাদেশে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির ব্যাপক শূন্যতা রয়েছে। একসময় অনেকে আওয়ামী লীগকে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক দল ভেবে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও আওয়ামী লীগ কখনোই তা ছিল না। গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুতির পর দলটির অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী আদেশে গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনও স্থগিত করা হয়েছে। এ রকম একটি অবস্থায়, যাঁরা সেক্যুলার ডেমোক্রেটিক ভেবে একসময় আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছেন, তাঁরা কাকে সমর্থন দেবেন?

চারদিকে উগ্র ডানপন্থার হাওয়া। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে একদিকে যখন রাষ্ট্র সংস্কার, নতুন বন্দোবস্তের আলাপ চলছে; অন্যদিকে তখন ধর্মীয়-লিঙ্গীয়-জাতিগত বিভাজন উসকে দেওয়া উগ্রবাদী পরিচয়ের রাজনীতি জোরদার হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সেক্যুলার ডেমোক্রেটিক শক্তির দীর্ঘদিনের শূন্যতা আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। বামপন্থীরা আছেন, কিন্তু নানান বিভক্তি ও দুর্বলতার কারণে জোটবদ্ধ হয়ে জনগণের সামনে শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে পারছেন না।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় বামপন্থীরা ধর্ম ও জাতিগত বিভাজনের ডানপন্থী রাজনীতিকে অগুরুত্বপূর্ণ করে দিয়ে মূলত অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে মানুষের মন জয় করেছেন। শ্রীলঙ্কার অ্যাকটিভিস্ট ও তাত্ত্বিকদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তাঁরা এককথায় অর্থনৈতিক সংস্কার ও দুর্নীতিবিরোধী এজেন্ডাকেই বামপন্থী দিশানায়েকের নেতৃত্বাধীন এনপিপি জোটের সফলতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশে এ রকম কোনো জোটবদ্ধ তৎপরতা ও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

উত্তরণকালে কে কী করছেন বা করছেন না, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সময়ের একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা বা না করার ফল সবাইকে বহুদিন ভোগ করতে হয়।

কল্লোল মোস্তফা  বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক

[email protected]

* মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র ক ষমত স ন ক র জন ত র র জন ত র জন ত ক র ব পর ত ন শ চয়ত ড নপন থ ব যবস থ ব মপন থ সরক র র পরবর ত র জন য দল থ ক বন দ ব ন র পর দ র বল এ রকম আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ