শুরু হচ্ছে বোর্ড সভা, উঠতে পারে শান্ত প্রসঙ্গ
Published: 30th, June 2025 GMT
টেস্ট সিরিজ শেষে নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ায় নাজমুল হোসেন শান্তর ওপর বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল হয়তো কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। মিডিয়াকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শান্তকে মনে করিয়ে দেন সিরিজ চলাকালে এভাবে ঘোষণা দেওয়া ঠিক হয়নি।
পরিস্থিতি তৈরির পেছনে একা শান্তকে দায় দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ তিনি আগেই ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে জানিয়েছিলেন, টেস্টের ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেবেন।
বিসিবি কর্তারা সব জেনেবুঝেও কেন আগে থেকে শান্তর সঙ্গে কথা বলেননি? কেন তাঁকে শ্রীলঙ্কা সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়নি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের আজকের সভায়।
পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক কাকে করা হতে পারে, তা নিয়েও কথা হতে পারে। যদিও বিসিবির একাধিক পরিচালক গতকাল নিশ্চিত করেছেন, টেস্টের নতুন অধিনায়ক মনোনীত হবে না। তবে নাজমুল হোসেন শান্তর পদত্যাগ যে গ্রহণ করা হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়ক হওয়ার মতো হাতেগোনা কয়েকজন আছেন বাংলাদেশ দলে। এ মুহূর্তে মেহেদী হাসান মিরাজ আর লিটন কুমার দাস ছাড়া বড় নাম নেই। মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম টেস্টের নেতৃত্বে ফিরবেন না আগের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে। সাদমান ইসলাম, তাইজুল ইসলামকেও অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করছেন না পরিচালকরা।
জাকের আলী বা পেস বোলারদের কেউই অধিনায়ক হওয়ার মতো অভিজ্ঞ নন। শেষ ভরসা মিরাজ আর লিটন। বিসিবি সভাপতি হয়তো মিরাজকেই বেছে নেবেন অলরাউন্ডার কোটায়। সেটা করা হলে তিন সংস্করণে তিন অধিনায়কের নীতিতে থাকা হবে না বুলবুলের।
টেস্ট অধিনায়ক বেছে নিতে যথেষ্ট সময় পাবেন বিসিবি কর্তারা। কারণ পরের সিরিজ নভেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। আপাতত ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকবে বাংলাদেশ।
বিসিবিও এ মুহূর্তে বেশি ব্যস্ত বাজেট অনুমোদনে। বছরের শেষ সভা হওয়ায় আজ বিগত এক বছরের বাজেট অনুমোদন করা হবে। ২০২৫-২৬ সালের সম্ভাব্য বাজেট অনুমোদন করা হবে বলে জানান পরিচালক ফাহিম সিনহা। এ ছাড়া দেশের চারটি ভেন্যুতে মিনি বিসিবি গড়ে তোলা, বিসিবিকে পেশাদার কাঠামো দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।
সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।
একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।
তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।
এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।
গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগেএ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।
সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।