বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে হারাচ্ছে আবাসিকতা
Published: 30th, June 2025 GMT
ধানমন্ডির মতো বৃহত্তম আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর—সবকিছুই লাগবে। তবে পরিমিত মাত্রায়। সব হতে হবে প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশবান্ধব। বর্তমানে এসবের কিছুই হচ্ছে না। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা তার চরিত্র হারিয়েছে। এখানে যে ভবনগুলোতে হাসপাতাল চালু রয়েছে, সেগুলো মূলত আবাসিক ভবন।
বলছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডির ১৪/এ সড়কের স্থায়ী বাসিন্দা, জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। সম্প্রতি ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
সকাল-দুপুর, বিকেল-রাত ধানমন্ডিতে যানজট লেগে থাকে প্রধান সড়ক এমনকি অলিগলিতেও। ধানমন্ডির মতো একই চিত্র দেখা গেছে লালমাটিয়াতেও। লালমাটিয়ার আবাসিক ভবনগুলোতে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ফলে একসময়ের নিরিবিলি আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত লালমাটিয়ায় এখন যানবাহনে গিজগিজ করে। এ দুই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নান্দনিক লেক, খেলার মাঠ ও প্রশস্ত রাস্তা। কিন্তু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দাপটে এ দুই আবাসিক এলাকার যে সুনাম, তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে ধানমন্ডি
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি সাজিদ বিন দোজার লেখা থেকে জানা যায়, ‘এক শতাব্দী আগেও ধানমন্ডি ছিল উলুখাগড়া আর ছনগাছের রাজ্য। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ধানমন্ডি নামের এই প্রান্তিক গ্রামে মানুষজন বসবাস শুরু করে।’
এখন ধানমন্ডি ২৭ ও সাতমসজিদ রোড দিয়ে হাঁটলেই চোখে পড়বে দুই পাশজুড়ে হাসপাতাল, ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, কফিশপ, শোরুম—সব মিলিয়ে ধানমন্ডির প্রতিটি বড় রাস্তা যেন একেকটি বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। মূল সড়ক দুটির লাগোয়া সড়কেও গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ধানমন্ডির ১৫/এ সড়কে রয়েছে একটি হাসপাতাল। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজন, ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ভিড় করে সড়কটিতে।
আবাসিক ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা সীমিত। ফলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডিতে আসা গাড়িগুলো অলিগলিতে পার্ক করে রাখা হয়েছে। এই চিত্র দেখা গেল ধানমন্ডির ১৪/এ সড়কে এসে। প্রশস্ত সড়কটির এক পাশে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ওষুধ বিপণনকর্মীরা সকালের গ্রুপ মিটিং রাস্তাতেই সেরে নিচ্ছেন। সড়কটি বেশ প্রশস্ত। সংস্কারকাজ চলছে। গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী জটিলতায় কাজ বন্ধ ছিল দীর্ঘ সময়। এই সড়কটির অপর পাশের ফুটপাত দখল করে চলছে মাছ-মাংস-ভাত-ডাল রান্নার কাজ। সড়কে পাতা হয়েছে টেবিল। খোলা পরিবেশে ধুলাবালুর মধ্যে রোগীর আত্মীয়স্বজন খোলা বাংলা হোটেলে পেটের ক্ষুধা মেটাচ্ছেন। সড়কটিতে একটি মেডিকেল কলেজ, একটি ডেন্টাল কলেজ, একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল রয়েছে।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে অবস্থিত এবি ব্যাংকের পাশের সড়কটির নম্বর ১৬। এই সড়কে নামফলকহীন পাশাপাশি দুটি পুরোনো দ্বিতল বাড়ি এখনো টিকে আছে। বাড়ি দুটির আঙিনায় এখনো কিছু গাছপালা দেখা যায়। কিন্তু নতুন বহুতল ভবনগুলোতে ফাঁকা জায়গা বা সবুজের অস্তিত্ব নেই। আশির দশকেও ধানমন্ডির প্রতিটি প্লটে এ রকম একটি করে সুন্দর একতলা বা দোতলা বাড়ি ছিল।
ইতিহাসবিদ ও গবেষক মুনতাসীর মামুনের বিখ্যাত গ্রন্থ ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী থেকে জানা যায়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার গোড়াপত্তন হয় ১৯৪৮-৪৯ সালে, পাকিস্তান আমলে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধিগ্রহণে এটি ঢাকার প্রথম পরিকল্পিত আবাসিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠে।
লালমাটিয়া আবাসিক এলাকাকে কেন্দ্র করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও খাবারের দোকানে রমরমা ব্যবসা চলছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ নমন ড র
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙ্গা–বরিশাল মহাসড়কের ৪৯ কিলোমিটার বেহাল, ‘ভরসা’ জোড়াতালির মেরামত
বরিশাল থেকে সপ্তাহে দুবার ঢাকায় যাতায়াত করেন নাঈম হাওলাদার। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করছেন। নাঈম হাওলাদার বলেন, বরিশাল থেকে বাসে এত ঝাঁকুনি লাগে যে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। অনেক যাত্রী বমিও করে ফেলেন। মন দুরুদুরু করে, কখন কী হয়ে যায়!
বরিশাল থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এমনই বেহাল। সড়কের পিচ, পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়কটিকে সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করতে ইট ফেলে খানাখন্দ ভরাট করে ওপরে বালু ফেলা হচ্ছে। এরপর দেওয়া হচ্ছে পিচের প্রলেপ।
তবে যাত্রী ও যানবাহনের চালক–সহকারীরা বলছেন, প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাতবার সড়ক মেরামত করা হয়। কিন্তু মাস ঘুরতেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সাময়িক সংস্কার অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
কুয়াকাটা-ঢাকা পথের একটি বাসের চালক কেরামত আলী বলেন, ‘সড়কের যে অবস্থা, তাতে বাস চালাতে অনেক ঝুঁকি। যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন। আমাদের সময়ও বেশি লাগে। যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।’
বরিশাল থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকে। এ ছাড়া জুলাই মাসে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ফলে এ অংশের প্রায় পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার সড়ক বরিশাল সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতায়, বাকিটা ফরিদপুর সওজের অধীনে।
যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।কেরামত আলী, বাসচালকগতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের ওই অংশ ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তে বালু, ইটের সুরকি ও পিচ ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার শিকারপুর সেতুর পূর্ব প্রান্তে একদল শ্রমিক মেরামতের কাজ করছেন। কয়েক কিলোমিটার পর গৌরনদীর বার্থী এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেল।
বার্থী এলাকায় সওজের একটি ট্রাকের চালক মো. শাহজাহান সরদার বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। আগে ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করতাম, এখন তার ওপর পিচ ও বালু দিয়ে প্রলেপ দিচ্ছি, যাতে যান চলাচলে ব্যাঘাত কমে এবং যাত্রীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।’
পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সাগর হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘দেড়-দুই মাস আগে একইভাবে রাস্তা মেরামত হয়েছিল, কিন্তু টেকেনি। এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়।’
একই কথা বললেন ভুরঘাটাগামী একটি মাহেন্দ্রর চালক আবদুল বাছেদ।
বার্থী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত আরও একটি ট্রাকে মেরামতের কাজ চলছিল খাঞ্জাপুর এলাকায়। কাজ তদারক করছিলেন সওজের কার্য সহকারী (ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট) মো. জাকির হোসেন সরদার। তিনি বলেন, সাময়িক ভোগান্তি কমাতে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় কাজ চলছে।
সওজ সূত্র জানায়, সত্তরের দশকে বরিশাল–ভাঙ্গা সড়ক ছিল ১২ ফুট প্রশস্ত। এখন বেড়ে হয়েছে মাত্র ২৪ ফুট। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বেড়েছে তিন গুণ। এত চাপ নিতে পারছে না সড়কটি।
ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে উল্লেখ করে বরিশাল সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, তহবিল পাওয়া গেলে দ্রুত ছয় লেনের কাজ শুরু করা যাবে। আপাতত জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছেন।
পটুয়াখালী–কুয়াকাটা মহাসড়কও বেহালটানা বর্ষণে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়কের প্রায় ৭১ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একাধিক বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বাস মালিক সমিতি ও সওজ সূত্র জানায়, এই সড়কে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার যান চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটাগামী যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগ বাড়ছে।
মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, একটু পরপর গর্ত। বিশেষ করে আমতলী চৌরাস্তা, মানিকঝুড়ি, শাখারিয়া, সাহেববাড়ি, আমড়াগাছিয়া, পাটুখালী, বান্দ্রা ও পখিয়া এলাকায় গর্ত বেশি। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ইট ফেলে সাময়িকভাবে ভরাটের চেষ্টা চলছে।
পটুয়াখালী সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ করিম বলেন, ‘আমরা জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে খানাখন্দ মেরামতের কাজ করছি। আশা করি, এতে ভোগান্তি লাঘব হবে।’