ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সুস্বাস্থ্যের জন্য কৈশোরে সঠিক পুষ্টি 

কিশোরকালে শরীর ও মনের দ্রুত বৃদ্ধি ও পরিবর্তন ঘটে। শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি, হাড় ও পেশির গঠন, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নয়ন ও হরমোনের ভারসাম্য স্থাপিত হতে থাকে। তাই এই বয়সে পুষ্টিহীনতা শুধু সাময়িক দুর্বলতা নয়, বরং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ও জীবনমানকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করে।

সঠিক পুষ্টি না পেলে যা হয়

ওজন-উচ্চতা দ্রুত বাড়ে বলে কিশোরকালে পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে পেশি ঠিকভাবে গড়ে ওঠে না, হাড়ের ঘনত্ব কমে, উচ্চতা কাঙ্ক্ষিত হয় না, সহজে ক্লান্তি লাগে। ফলে প্রাপ্ত বয়সে শরীর হয় দুর্বল ও সক্ষমতাও কমে যায়।

কিশোরকালে বিশেষ করে কিশোরীদের ক্ষেত্রে আয়রনের ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়। এ থেকে রক্তস্বল্পতা, মাথা ঘোরা, মনোযোগ কমে যাওয়া, শারীরিক পরিশ্রমে অসুবিধা, ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এটি পড়াশোনা ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

কৈশোরে মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও একাগ্রতার দক্ষতা তৈরি করে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি হলে শেখার ক্ষমতা কমে, স্মৃতিশক্তি দুর্বল, মানসিক চাপ সহ্যের ক্ষমতা কমে। এভাবে পুষ্টিহীনতা ধীরে ধীরে শিক্ষাগত অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে।

একজন কিশোরী অপুষ্টির শিকার হলে সে ভবিষ্যতে মা হলে তার গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়, জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হতে পারে। এ ছাড়া মা অপুষ্টিতে থাকলে শিশুর মধ্যেও অপুষ্টির ঝুঁকি থেকে যায়। একইভাবে অপুষ্টি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে, যাকে বলা হয় ‘অপুষ্টির দুষ্টচক্র’।

যেসব খাবার খেতে হবে

শর্করার উৎস হিসেবে আছাঁটা চাল, গোটা গমের আটা, লাল চিড়া ও ওটস রাখা উচিত। নন-স্টার্চি সবজি যেমন শাকপাতা, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, করলা, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, গাজর ও মুলা ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস।

আমিষের জন্য দুধ, টকদই, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল ও শিমজাত খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি পাওয়া যায় দুধ, দই, পনির, ছোট মাছ, কচুশাক, শজনেপাতা, কুমড়ার বীজ ও রোদে হালকা হাঁটাহাঁটি থেকে। জিংকের জন্য মাংস, মাছ, ডাল ও কুমড়ার বীজ উপকারী। 

আয়োডিনের জন্য দুধ, দই, ডিম, চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। আয়রনের চাহিদা পূরণে মাছ, মাংস, ডিম, কচুশাক, পুঁইশাক, তরমুজ, জাম, খেজুর, পাকা তেঁতুল ভালো। ভিটামিন সি পাওয়া যায় পেয়ারা, আমড়া, আমলকী, লেবু, জলপাই, জামরুল, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদিতে।

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, বাইরের অস্বাস্থ্যকর ভাজা-পোড়া খাবার, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও লবণাক্ত খাবার, সফট ড্রিংক পরিত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি পরিমিত মাত্রায় খাবার খাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ কৈশোরকালীন স্থূলতার জন্য দায়ী।

মো. নাহিদ নেওয়াজ, টেকনিক্যাল অফিসার, নিউট্রিশন, হীড বাংলাদেশ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুস্বাস্থ্যের জন্য কৈশোরে সঠিক পুষ্টি