ফেনীতে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলিসহ সাবেক দুই ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছের বাহিনী। গতকাল রোববার মধ্যরাতে সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের লস্করহাট দমদমা ও মধ্য লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে অস্ত্রসহ তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন (৪২) ও রহমত উল্লাহ (৪৩)। এদের মধ্যে দেলোয়ার ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও রহমত উল্লাহ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সদস্য। দেলোয়ার সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে ও রহমত উল্লাহ ওই গ্রামের শফিকুর রহমানের ছেলে।

পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাত একটার দিকে সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের লস্করহাট দমদমা ও মধ্য লক্ষ্মীপুর এলাকায় অভিযান চালায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী। এ সময় একটি ৭ দশমিক ৬২ এমএম পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও একটি গুলিসহ দুই ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার দুপুরে আসামিদের ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল

এছাড়াও পড়ুন:

মহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে

কুরাইশের নেতৃস্থানীদের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে মুসলিমদের প্রথমবার মক্কা ছাড়ার অনুমতি দেন নবীজি (সা.) নবুয়তের পঞ্চম বর্ষে।

৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে আরবি রজব মাসে চারজন নারীসহ বারো থেকে পনেরোজন মানুষ আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। মক্কার সবাই মুসলিম হয়ে গেছে, এই খবর শুনে কয়েক মাস পরে আবার তাঁরা ফিরে আসেন জন্মভূমিতে। কাছাকাছি পৌঁছে শুনতে পান খবরটি মিথ্যা। কয়েকজন যে-পথে এসেছেন সে-পথেই ফিরে যাবেন বলে থমকে যান, কয়েকজন ফিরে যান মক্কাতেই। যাঁরা আবার আবিসিনিয়ায় ফিরবেন বলে ভাবেন, তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও শতাধিক নারী-পুরুষ। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন নবীজি (সা.)–র চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবু তালিব (রা.)।

প্রশ্ন হলো, নবীজি (সা.) মদিনায় হিজরত করলেন? আবিসিনিয়ায় বা অন্য কোথাও নয়। এর বেশ কয়েকটি কারণ প্রখ্যাত সিরাত গবেষক আবুল আলি নদভি (র.) তাঁর নবিয়ে রহমত গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন।

নবীজি (সা.) তাঁদের সঙ্গে ছিলেন না। আবিসিনিয়ায় হিজরতকারীরা যখন আবার হেজাজের পথ ধরেন, ততদিনে নবীজি (সা.)–ও অবশ্য মক্কায় নেই। ৬২১ খ্রিষ্টাব্দের জুনের শেষ দিকে নবীজি (সা.) ইয়াসরিবে চলে গেছেন, যা পরে ‘মদিনাতুন্নবি’ বা ‘নবির শহর’ হয়ে মদিনা নামে খ্যাত হয়েছে। আবিসিনিয়ার মুহাজিরগণ আরও প্রায় সাত বছর পরে ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে সরাসরি মদিনায় এসে নবীজি (সা.)–র সঙ্গে মিলিত হন।

আরও পড়ুনতাঁর জানাজা পড়িয়েছিলেন স্বয়ং রাসুল (সা.)২৬ এপ্রিল ২০২৩

প্রশ্ন হলো, নবীজি (সা.) মদিনায় হিজরত করলেন? আবিসিনিয়ায় বা অন্য কোথাও নয়। এর বেশ কয়েকটি কারণ প্রখ্যাত সিরাত গবেষক আবুল আলি নদভি (র.) তাঁর নবিয়ে রহমত গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন।

প্রথমতঃ আল্লাহর নির্দেশ। কী রহস্য ছিল এই নির্দেশের পিছনে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

দ্বিতীয়তঃ ৬২১ ও ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে হজের সুযোগে মক্কায় একদল মদিনাবাসী যেভাবে নবীজি (সা.)–এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন এবং নবীজি (সা.)–কে রক্ষার দৃঢ় শপথ করেছেন, আল্লাহর কাছে অত্যন্ত সন্তোষজনক বলে মনে হয়েছে। মদিনাকে দারুল হিজরত বা ইসলামের দাওয়াতের কেন্দ্র হিসাবে নির্বাচনের পেছনে মদিনাবাসীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন ছিল অন্যতম একটি কারণ।

আরও পড়ুননবীজি (সা.)–এর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু০২ মে ২০২৩

তৃতীয়তঃ ইয়াসরিবের ভৌগোলিক সুবিধা। পর্বত, ঘন খেজুর বন আর ‘হাররা’য় (লাভায় গড়া স্থান) তিন দিক থেকে বেষ্টিত নিরাপদ অঞ্চল। এ ছাড়া তা ছিল কৃষি অঞ্চল। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে মদিনার অবস্থান ছিল দুর্গের মতো নিরাপদ। আরব উপদ্বীপের কাছাকাছি আর কোনো শহর এর সমকক্ষ ছিল না।

চতুর্থতঃ ইয়াসরিবের অধিবাসীদের সহমর্মী মানসিকতা। মদিনার প্রধান দুটি গোত্র আওস ও খায়রাজ জাতীয় মর্যাদাবোধ, আত্মসম্মান, অশ্বারোহণ ও শৌর্য-বীর্যে ছিল বিশিষ্ট। কোনও বড় গোত্র বা হুকুমতকে কখনও তারা কর বা জরিমানা দেয়নি।

পঞ্চমতঃ মদিনার বনি আদি ইবনে নাজ্জার গোত্র ছিল বনি হাশিমের মাতৃকুল। সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) ছিলেন সে বংশের একজন। মদিনায় পৌঁছে নবীজি (সা.) তার ঘরে অবস্থান করেন।

বিয়ের পরে ব্যবসার উদ্দেশ্যে হাশিম সিরিয়ায় গেলে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। সালমার গর্ভে রেখে যান তার অনাগত সন্তান শাইবাকে।

বর্তমান সৌদি আরবের স্বপ্নদ্রষ্টা আবদুল ওয়াহাব নজদির (১৭০৩-১৭৯২) লেখা একটি সিরাত গ্রন্থ হলো মুখতাসার সিরাতুর রসুল (সা.)। এই বইয়ে তিনি সিরাতে ইবনে হিশাম থেকে নিয়ে এই পঞ্চম বিষয়টির একটা সারসংক্ষেপ লিখেছেন। মহানবি (সা.) কেন ইয়াসরিবে গেলেন—তাঁর আলোচনা এ প্রশ্নের চমৎকার একটা মানবীয় ব্যাখ্যা দেয়।

ব্যাখ্যাটা এমন:

মহানবীর (সা.) দাদা আবদুল মুত্তালিবের বাবা হাশিম সিরিয়ায় যাওয়ার পথে ইয়াসরিবের সালমা বিনতে আমেরকে বিয়ে করেন। ইয়াসরিবের দুটি প্রধান গোত্র আওস ও খাজরাজ। সালমা খাজরাজের শাখা বনু নাজ্জার অংশের মেয়ে। বিয়ের পরে ব্যবসার উদ্দেশ্যে হাশিম সিরিয়ায় গেলে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। সালমার গর্ভে রেখে যান তার অনাগত সন্তান শাইবাকে।

আরও পড়ুনমদিনায় রাসুল (সা.)-কে যিনি আশ্রয় দিলেন২৭ এপ্রিল ২০২৩

হাশিমের ছিল আরও তিন ভাই—মুত্তালিব, আবদে শামস এবং বৈমাত্রেয় ভাই নওফল। মুত্তালিব ছিলেন হাশিমের পরে কুরাইশের নেতা। তাঁর কোনো সন্তানাদি ছিল না। বহু বছর পর মুত্তালিব জানতে পারেন, তার ভাইয়ের ছেলে শাইবা ইয়াসরিবে আছেন। তিনি তাকে চাদরে পেঁচিয়ে মক্কায় নিয়ে আসেন। সালমাকে জানান, তাঁর ইচ্ছা, শাইবাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করবেন।

মক্কার লোকেরা প্রথমে ভেবেছিল, ছেলেটা মুত্তালিবের দাস হবে। ফলে তারা তাকে ‘আবদুল মুত্তালিব’ বা ‘মুত্তালিবের দাস’ নামে ডাকতে থাকে। ধীরে ধীরে প্রজ্ঞায়–প্রশংসায় সবাইকে ছাড়িয়ে মুত্তালিব পরবর্তী নেতৃত্বের শীর্ষে চলে আসেন আবদুল মুত্তালিব।

এ নিয়ে মুত্তালিবের অন্য দুই ভাই নওফল ও আবদে শামসের সঙ্গে বিবাদ হয়। কুরাইশের অন্যান্য অংশেও সহায়তা না পেয়ে নিরুপায় আবদুল মুত্তালিব চিঠি লেখেন সেই ইয়াসরিবে—তার মাতুলালয়ে—তার নাজ্জারি মামাদের কাছে। জানা যায়, কয়েক ছত্র কবিতার মাধ্যমে তিনি আর্জি জানিয়েছিলেন। মামা আবু সাদ বিন আদি ভাগ্নের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন।

মক্কাবাসীদের সিরিয়ায় যাওয়ার প্রধান বাণিজ্যপথে ইয়াসরিব হয়েই যেতে হতো। ফলে ইয়াসরিবের প্রধানতম গোত্র খাজরাজি বা নাজ্জারিদের সঙ্গে শত্রুতার পরিণতি নিয়ে আবদে শামসের শঙ্কা থাকারই কথা।

জানা যায়, কয়েক ছত্র কবিতার মাধ্যমে তিনি আর্জি জানিয়েছিলেন। মামা আবু সাদ বিন আদি ভাগ্নের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন।

তা ছাড়া মক্কারই একটি গোত্র বনু খুজায়া আবদুল মুত্তালিবের নাজ্জারি মামাদের সহায়তায় করেন। এমনকি তারা দারুন নদওয়া  বা মক্কার কংগ্রেসনাল সভায় নওফল ও আবদে শামসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে। উল্লেখ্য, হাশিমের দাদি মানে আবদে মানাফের মা আতিকার বংশ ছিল বনু খুজায়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

মামার পক্ষের এই শক্তি আবদুল মুত্তালিবকে মক্কার নেতৃত্বে পুনর্বাসনে সহায়তা করে।

আশ্রয়ের জন্য ইয়াসরিব বা মদিনাকে বেছে নেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ছিল আত্মীয়তার শক্তি। আত্মীয়-কুটুম্বের গুরুত্ব সে-সময় আরবে ছিল বিরাট। একে উপেক্ষা করা হতো না। ইয়াসরিবের ভূমি মহানবীর (সা.) দাদা আবদুল মুত্তালিবের সময় থেকেই তার বংশধরদের জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিল, বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে আত্মীয়তা যেমন সহায়তা হয়ে থাকে।

আবদুল মুত্তালিবের বৈরী চাচা আবদে শামসের ছেলেই উমাইয়া। তার ছেলে হারব। তার ছেলে আবু সুফিয়ান। তার ছেলে মুয়াবিয়া। তার ছেলে ইয়াজিদ। পুরোনো নেতৃত্বের প্রশ্নে বনু হাশেমের সঙ্গে বনু উমাইয়ার বৈরিতার রেশ থেকে যাওয়া অস্বাভিক নয়। তা ছাড়া বনু খুজায়ার সঙ্গে সেই থেকেই আবদুল মুত্তালিব বংশের সদ্ভাব। হোদায়বিয়ার ঘটনার পরে তাদের ওপর যখন কুরাইশদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বনু বকর আক্রমণ করে, সেটাই হয়ে ওঠে মহানবীর (সা.) মক্কা অভিযানের প্রধান অনুঘটক।

আরও পড়ুননবীজি (সা.)-এর মুজিজা২৫ এপ্রিল ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে