বস্ত্র ও পোশাক খাতের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় চায় বিজিএমইএ
Published: 1st, July 2025 GMT
বস্ত্র ও পোশাক খাতের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় চায় তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। পোশাক শিল্পকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে না রেখে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হলে প্রয়োজনীয় সেবা আরও সহজ হবে বলে মনে করছেন তারা। পাশাপাশি রপ্তানি আয় আরও বাড়বে বলে মত দেন সংগঠনের নেতারা। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বিজিএমইএর তরফে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে ।
সোমবার বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান দেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অসামান্য অবদানের প্রশংসা করেন। পোশাক শিল্পের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব জোরদার করার পাশাপাশি বিডা সব ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন তিনি।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, উচ্চ ব্যাংক সুদ এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘন ঘন মূল্য বৃদ্ধি পোশাক শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিডার সহযোগিতা প্রয়োজন ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিজিএমইএ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমান, সহ-সভাপতি ভিদিয়া অমৃত খান ও পরিচালক সামিহা আজিম। বিডা ও বেজার কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিডার নির্বাহী সদস্য মো.
আলোচনায় বিজিএমইএ সভাপতি চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক কারখানাগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বন্দর নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কারখানাগুলোকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে সমন্বিত পোশাক শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। তিনি চট্টগ্রামে বিজিএমইএ’র অনুকূলে প্রতীকী দামে একখন্ড জমি বরাদ্দের জন্য বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান। নির্বাহী চেয়ারম্যান বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বিজিএমইএ ও বিডা প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের কথা জানান। তারা এক সপ্তাহের মধ্যে একটি কর্ম-পরিকল্পনা পেশ করবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও রিসাইক্লিং শিল্পে বিনিয়োগ বিষয়ে সাসটেইনেবিলিটি ও সার্কুলারিটি বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন বিজিএমইএ নেতারা। তারা জানান, পোশাক শিল্পে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার অপরিহার্য। পোশাক কারখানায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে জ্বালানি রূপান্তর উৎসাহিত করতে এ ব্যাপারে পথনকশা প্রনয়ন এবং কারখানাগুলোকে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। পোশাক শিল্পে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হলে যথাযথ নীতি প্রনয়ন, খাতকে করমুক্ত করা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের তদারকির আওতায় আনা জরুরি।
অলোচনায় অন্য প্রসঙ্গের মধ্যে ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালায় বর্তমান ৩ মাসের রেয়াত কালকে ৬ মাসে উন্নীত করার অনুরোধ জানান তারা। এছাড়া তারা বন্ড অডিট প্রক্রিয়াকে সময়ক্ষেপণকারী, হয়রানিমূলক এবং রপ্তানি বাণিজ্যের দৈনন্দিন কার্যক্রমে গুরুতর বাধার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বন্ড নিরীক্ষার জন্য ২০ প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করার বিষয়েও অনুরোধ জানানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বস ত র খ ত ব জ এমইএ অন র ধ জ ন ন ব জ এমইএ র জন য ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।
সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।
একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।
তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।
এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।
গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগেএ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।
সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।