আরও উত্তপ্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক
Published: 1st, July 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি এক সপ্তাহ পার হয়েছে। সাত দিন ধরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যেসব উত্তপ্ত কথা চালাচালি হয়েছে, তাতে আশঙ্কা ছিল যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাবে। ইরান-ইসরায়েল পরস্পরকে অবিশ্বাসের কথা জানায়। পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের বক্তব্যে নাখোশ হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সব সহযোগিতা বন্ধ ঘোষণা করে ইরান।
ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলে ট্রাম্প আবারও হামলা চালানোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন। এ অবস্থায় যত দিন যাচ্ছে, ততই যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। গতকাল সোমবার ‘ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির এক সপ্তাহ : যা এখনও অজানা’ শীর্ষক এপির প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা উঠে আসে।
গত ১৩ জুন ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরে ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালালে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত শুরু হয়ে যায়। পরে শেষ পর্যন্ত ২৩ জুন যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হলেও সব পক্ষ সম্মত হয় ২৫ জুন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বিশ্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ভঙ্গুর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলেও অনেক কিছু এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটা পিছিয়ে পড়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা ফের শুরু হওয়ার আভাস মিলেছে। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে গাজায় ২০ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন কিনা, তা এখন বড় প্রশ্ন।
ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন হামলায় ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। তবে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়নি বলে জানানো হয়েছে।
এরই মধ্যে রোববার আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সিবিএসের ফেস দ্য নেশন অনুষ্ঠানে বলেন, ইউরেনিয়াম শোধন, রূপান্তর ও সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ইরানি স্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনও কিছু টিকে আছে। যেহেতু সক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়নি, তারা আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করতে পারে। তিনি বলেন, আইএইএ যদি সম্পূর্ণ পরিদর্শনের অনুমতি পায়, তাহলে ক্ষতি নিরূপণ করা যাবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর ইরানের ওপর কয়েক দশক ধরে চলা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনা করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ইরান কর্মসূচি থেকে সরে এলে দু’দেশের বাণিজ্য খাত ব্যাপক সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এই সম্প্রীতির আলোচনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
যুদ্ধবিরতির পর যখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি জনসমক্ষে দাবি করেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের মুখে চড় বসিয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সংক্রান্ত আলোচনা প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। ইরান ট্রাম্পের এই অবস্থানকে ‘গেম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
অন্যদিকে সাইবার যুদ্ধের মাধ্যমে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্তিমত্তা দেখিয়েছে। এটিকে হুমকি মনে করে ওয়াশিংটন। তেহরানের হ্যাকার গোষ্ঠী ইতোমধ্যে মার্কিন ব্যাংক, প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। যদিও এখনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাঘাত তারা ঘটাতে পারেনি। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ ইরানের সাইবার হুমকির ব্যাপারে পাবলিক সতর্কতাও জারি করেছে। সংস্থা বা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি ইরানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন না বা তাদের কিছু দিচ্ছে না। এর আগে চাউর হয়, বেসামরিকভাবে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে ইরানকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে ট্রাম্প প্রশাসন।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তখত-রাভানচি বিবিসিকে বলেছেন, নতুন আলোচনার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে ফের ইরানের হামলার হুমকির বিষয়টি প্রত্যাহার করতে হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসের কাছে লেখা এক চিঠিতে ইরান দাবি করেছে, ‘১২ দিনে যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল দায়ী’ জাতিসংঘ যেন এটাকে স্বীকৃতি দেয়। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি এই চিঠি লেখেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
গুরু-শিষ্যের লড়াইয়ে আজ মায়ামি বনাম পিএসজি
ক্লাব বদল হলেও স্মৃতি বদলায় না। আর স্মৃতি যদি হয় প্যারিসের মতো শহরের, তা হলে তো প্রশ্ন আরও জটিল। আজ রাতেই সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে ফুটবল বিশ্ব, যখন লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি মুখোমুখি হবে তার পুরনো ক্লাব পিএসজি’র।
বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় যুক্তরাষ্ট্রের মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে আলোচিত এই লড়াই। মেসির সামনে এবার শুধু প্রতিপক্ষ নয়, পুরনো পরিচিত মুখগুলোর ছায়াও।
মায়ামির কোচ জাভিয়ের মাশচেরানো এক সময় বার্সেলোনায় ছিলেন লুইস এনরিকের শিষ্য। আজ তারই বিপক্ষে নামছেন কোচ হিসেবে। এনরিকে এখন পিএসজির দায়িত্বে। আর মেসির তো পুরো পিএসজি অধ্যায়টাই ছিল অনেকটা বিস্বাদে ভরা, যার অবসান ঘটে ২০২৩ সালের আগে।
আরো পড়ুন:
চার বছরের অপেক্ষার অবসান: বার্সার কাছ থেকে বকেয়া পাচ্ছেন মেসি
ঝড়, পেনাল্টি, অতিরিক্ত সময়- সব পেরিয়ে চেলসি শেষ আটে
এই ম্যাচটা তাই শুধু ১৬-রাউন্ড নয়, বরং এক ব্যক্তিগত পুনর্মিলনের নাট্যশালা।
পিএসজির ভরসা এখন তরুণ প্রজন্ম— দিজিরে দুয়ে, বারকোলা আর প্রতিভাবানদের কাঁধে আস্থার ভার। অন্যদিকে মায়ামি যেন এক দল ‘বার্সেলোনা নস্টালজিয়া’। মেসি, সুয়ারেজ, বুসকেটস, জর্ডি আলবা— যাদের চিনে রেখেছেন এনরিক। যারা জানেন কীভাবে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে হয়।
পিএসজি কোচ এনরিক ম্যাচপূর্ব সাক্ষাৎকারে বলেন, “মেসি সবসময় বলের সঙ্গে জাদুকর। আর বাকি সাবেকরা এখনও আগের মতোই শার্প। ওদের বিপক্ষে খেলাটা সহজ হবে না।”
মাশচেরানোর কথা আরও সাবধানী, “তারা কে, কী করেছে, সেটা নয়; আমরা কিভাবে খেলি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। ফুটবলে কোনো কিছু আগেই বলা যায় না।”
ক্লাব বিশ্বকাপে এখনও অপরাজিত ইন্টার মায়ামি। গ্রুপপর্বে এক জয় ও দুই ড্র নিয়ে দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলোতে উঠেছে। মেসিও এই টুর্নামেন্টে আনবিটেন থাকার রেকর্ড ধরে রাখতে চাইবেন। যদিও মায়ামির বড় সুবিধা উসমান দেম্বেলে ইনজুরির কারণে আজকের ম্যাচে খেলছেন না।
মেসির জন্য আজকের ম্যাচ নিছক ৯০ মিনিটের খেলা নয়, এটা একটা অধ্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নতুন গল্প রচনা করার মুহূর্ত। মাঠে যেমন থাকবে কৌশলের লড়াই, তেমনি আবেগ, ইতিহাস আর প্রত্যাশার ভারও।
কে জিতবে? মায়ামির অভিজ্ঞতা নাকি পিএসজির তরুণ বিদ্যুৎ? আজ রাতেই হবে সেই মীমাংসা।
ঢাকা/আমিনুল