৯ বছর আগের এই দিনেই ঢাকার গুলশানের এক নিরিবিলি সন্ধ্যা রূপ নেয় বিভীষিকায়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যার পর গুলশানে কূটনৈতিক এলাকার একটি রেস্তোরাঁ, হোলি আর্টিজান বেকারিতে সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা।
সেই রাতে ২০ জন নিরীহ মানুষ নির্মমভাবে প্রাণ হারান জঙ্গিদের হাতে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন ছিলেন ইতালি, জাপান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন জঙ্গিদের নিক্ষেপ করা বোমায়।
রাতভর চলা সেই জিম্মি পরিস্থিতির অবসান ঘটে পরদিন সকালে, সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর মাধ্যমে। ওই অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জন জিম্মিকে।
হামলার দায় স্বীকার করে ওই রাতেই বিবৃতি দিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তৎকালীন সরকার আইএসের এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছিল, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি এই হামলার জন্য দায়ী।
নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় দুটি ধাপ পেরিয়েছে। এ মামলায় বিচারিক আদালতের পর হাইকোর্টে রায় হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন দণ্ডিত আসামিরা, যা শুনানির অপেক্ষায়।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে ‘নব্য জেএমবির’ সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এরপর ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন। রায়ে সাত আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা গত মাসে (জুন) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক লিভ টু আপিল করেন বলে জানান আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো.
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। এঁদের মধ্যে আসলাম হোসেন গত বছরের ৬ জুন গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে কারারক্ষীদের গুলিতে নিহত হন। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ওই কারাগারে কারারক্ষীদের জিম্মি করে ২০৯ জন বন্দী পালিয়ে যায়। তখন কারারক্ষীদের গুলিতে মোট ৬ জন নিহত হন।
এই মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় গত ১৭ জুন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রাসঙ্গিক বিবরণে বলা হয়, তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ফরেনসিক, ব্যালিস্টিক, ডিএনএ ও ইমিগ্রেশন রিপোর্ট এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় জানা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতৃত্বে অতি উগ্র অংশ নব্য জেএমবি পরিচয়ে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা চালায়।
সেই হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজন সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হন। তাঁরা হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ২২ জনকে হত্যা করেছে বলে প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষ্য থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)(অ) ধারার অপরাধে ওই পাঁচজন সন্ত্রাসী অপরাধী। তাঁদের মধ্যে যদি কেউ বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাঁকে এই আইনের অধীনে বিচার শেষে ৬(১)(ক)(অ) ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ৬(২)(অ) ধারায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত। বিচারিক আদালত ‘একই অভিপ্রায়ের’ বিষয়টি উল্লেখ করে আপিলকারীদের (সাত আসামি) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, তা সঠিক হয়নি। বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(আ) ধারায় সাত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।
এদিকে হোলি আর্টিজানের সেই পুরোনো ঠিকানায় এখন আর আগের মতো কোনো রেস্তোরাঁ নেই। জায়গাটির মালিকপক্ষ পরবর্তী সময়ে রেস্তোরাঁটি আর চালু না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে সেটি একটি আবাসিক ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে ভবনের দেয়ালের ভেতর আজও জমে থাকা স্মৃতি কেউ কেউ ভুলতে পারেননি। সেই রাতের ঘটনা শুধু নিহতদের নয়, গোটা জাতির স্মৃতিতে আজও স্পষ্ট হয়ে আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ত আস ম ল ইসল ম ন ওরফ জ এমব
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে