প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল— ফ্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।। 

মঙ্গলবার (১ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত অভ‍্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন উপলক্ষে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যে লক্ষ্য নিয়ে তরুণ ছাত্র, জনতা, রিকশাচালক, শ্রমিকরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন-সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আমরা গত বছরের প্রতিটি দিনকে আবাররো পুনরুজ্জীবিত করব। এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আবার নতুন করে শপথ নেব এবং এটা আমরা প্রতি বছর করব, যাতে স্বৈরাচার আর যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে।”

আরো পড়ুন:

শৌচাগারে মিলল গৃহবধূর বস্তাবন্দি লাশ

লক্ষ্মীপুরে বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে গ্রেপ্তার

তিনি বলেন, “আজ ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ। এক বছর আগে, এই জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, জনতার এক জাগরণ। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল— “ফ্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থাণের স্বপ্ন ছিল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ এই মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, “আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করার যে অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি, এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। আমরা ১৬ বছর পরে বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল, তাৎক্ষণিক তার যে লক্ষ্য ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন- নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।”

স্বৈরাচার যেন আর কখনো ফিরে আসতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা প্রতি বছর এই সময়টা উদযাপন করব যাতে পরবর্তীতে আবার এই অভ্যুত্থান করার জন্য ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়। আমরা প্রতি বছর এটা করব, যাতে স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলেই তাৎক্ষণিক ভাবে আমরা তার বিনাশ করতে পারি।” 

সেটার জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন,  “স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়।”

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জুলাই গণঅভ্যুত্থাণে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে গভীর গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, সেই সব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের—যারা রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন; সাহস, ত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।” 

জুলাইকে ঐক্যের মাসে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, “আমরা আজ মাসব্যাপী যে কর্মসূচির সূচনা করছি, তা শুধুই স্মরণ নয় বরং একটি নতুন শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আমরা চাই, এই জুলাইয়ে সেই ঐক্য আবার সুসংহত হোক।” 

তিনি বলেন, “আমাদের এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য— জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানানো এবং রক্তের বিনিময়ে পাওয়া সংস্কারের এই সুযোগকে হারিয়ে না ফেলা। আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন, কিন্তু মস্ত বড় সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণ যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তিই তাদের রুখে দিতে পারে না। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি আপনাদের আহ্বান জানাই—আসুন, এই জুলাই মাসকে পরিণত করি গণজাগরণের মাসে; ঐক্যের মাসে।” 

জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক। আমাদের ঐক্য সর্বমুখী হোক, অটুট হোক আমাদের এই অনুষ্ঠানমালার লক্ষ্য।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বক্তব্য রাখেন।

তথ্যসূত্র: বাসস

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য গণঅভ য ত থ ন জ ল ই গণঅভ য ত থ অন ষ ঠ ন লক ষ য আম দ র নত ন ব স মরণ

এছাড়াও পড়ুন:

‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ থেকে সরে এলো সরকার

৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা দিয়েও সেখান থেকে সরে এলো অন্তর্বর্তী সরকার। ১৬ জুলাই শহীদ দিবস এবং ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম। 

সেখানে তিনি লেখেন, রবিবার উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’ এবং ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। তবে ৮ আগস্টের জন্য কোনো বিশেষ উদযাপন হবে না।

এর আগে গত ২৫ জুন রাতে সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থান দিবস, ৮ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ এবং ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস হিসেবে পালন করা হবে। 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার ডাক দিয়েছি, সেই দেশ গড়ে ঘরে ফিরব: নাহিদ
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পথেই এই বাংলাদেশকে চলতে হবে: নাহিদ ইসলাম
  • ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তি’ চালু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
  • গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনকে প্রত্যাহারের ঘোষণা
  • স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের জন্য মঙ্গলবার সারা দেশে বিশেষ দোয়া
  • আ.লীগের কাছে প্রচুর অবৈধ টাকা, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়: রিজভী
  • ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ থেকে সরে এলো সরকার
  • জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদা দিতে হবে: রিজভী