ইবিতে ফের ছাত্রী হেনস্তাসহ নানা অভিযোগ এক শিক্ষকের বিরূদ্ধে
Published: 1st, July 2025 GMT
আবারো ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, হেনস্তাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত শিক্ষক বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলাম।
গত ২২ জুন বিভাগটির অন্তত ডজনখানেক ছাত্রী এসব অভিযোগ উল্লেখ করে বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত দেন। একইসঙ্গে তারা তদন্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান।
আরো পড়ুন:
হল থেকে উত্তরপত্র নিয়ে পালাল পরীক্ষার্থী
নকল সরবরাহের সময় ছাত্রদলের সভাপতি গ্রেপ্তার
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় বিভাগটি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টায় শিক্ষকরা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করছেন।
তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষক বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে আসছিলেন। তবে এতদিন কেউ মুখ খোলার সাহস করেননি। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ২২ জুন বিভাগের সভাপতি বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাকে বিরত রেখেছে বিভাগটি। তবে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা।
অভিযোগে এক ছাত্রী লেখেন, “স্যার আমাকে ইমোতে ভিডিও কল দেন। আমি কল রিসিভ না করায় পরে অডিও কল দেন। তখন তিনি বলেন, ‘অনেকদিন তোমাদের দেখি না, তোমরা মোটা হয়েছো না চিকন হয়েছো দেখার জন্য ভিডিও কল দিচ্ছি।’ তারপর উনি বলেন, ‘তোমার কি কথা বলার লোক আছে?’ আমি বলি, না নেই। তখন তিনি বলেন, ‘এখন বলছো কেউ নাই, কিছুদিন পর তো দেখবো ক্যাম্পাসে কোনো ছেলের হাত ধরে ঘুরছো।’ এছাড়াও দাম্পত্য জীবন, ব্যক্তিগত শারীরিক ও প্রাইভেট পার্ট নিয়েও জিজ্ঞাসা করেন।”
আরেক ছাত্রী লেখেন, “স্যার একদিন আমাকে আলাদাভাবে রুমে ডেকে বলেন, ‘তুমি ভালো বাসা পেলে আমাকেও একদিন রুমে দাওয়াত দিও। তোমাকে বলেছিলাম, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে শারীরিক সম্পর্ক না থাকলে সংসার টিকে না। তুমি আমার কথা শুনো নাই।’ এ সময় তিনি আমাকে বিয়ে বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ও ফ্রি-মিক্সিং এর উপকারিতা বোঝান।”
অপর এক ছাত্রীকে ওই শিক্ষক বলেন, “এত সুন্দর হয়ে কী লাভ? যদি কোনো বয়ফ্রেন্ডই না থাকে।”
ভুক্তভোগী আরেক ছাত্রী বলেন, “ওই শিক্ষক দ্বারা হেনস্তার শিকার ছাত্রীদের অনেকেই বিবাহিত হওয়ায়, তারা তাদের পরিবারের কথা ভেবে এতদিন মুখ খোলেননি। কেউ কেউ তার যন্ত্রণায় আত্মাহত্যা করতে চেয়েছিল। সাময়িক অব্যাহতি কোনো সমাধান নয়, আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানাই।”
শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ অসত্য দাবি করে অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন, “আমি তাদের সঙ্গে যে দৃষ্টিভঙ্গিতে কথা বলেছি, তারা সেটাকে ইতিবাচকভাবে নেয়নি। আমি কোনো শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করিনি। বরং তারা আমার কথা ও কাজকে ভুলভাবে নিয়েছে। আমি মনে করি পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে অসত্য অভিযোগ দিয়েছে। আর কখন কোন পরিস্থিতিতে কি বলেছি, তা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।”
তিনি বলেন, “বিভাগের বিভিন্ন কাজের সুবাদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনেক প্রোগ্রাম ও মিটিং করেছি। আমি তাদের আন্তরিকতা নিয়ে সুন্দর ড্রেস পড়ে আসার কথা বলেছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি সবার মেন্টালিটি সমান না। আর অনেক সময় ক্লাসে দেরি করে আসলে তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে যদি কথা বলি, এটা কি খারাপ কিছু?”
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড.
গত ৭ অক্টোবর ছাত্রী হেনস্তা, শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, কথা না শুনলে মার্ক কম দেওয়া ও ছাত্রদের জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করাসহ নানা অভিযোগ ওঠে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত দুইটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চবিতে শিবিরকে নিয়ে ছাত্রদলের মিথ্যাচারের অভিযোগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে শাখা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের মিথ্যাচার ও অপবাদের অভিযোগ তুলে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চবি শিবির।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁঞা স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) চাকসু নির্বাচন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে শাখা ছাত্রদল। সেখানে লিখিত ও মৌখিকভাবে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ শাখা শিবিরের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ করেন।
আরো পড়ুন:
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দেয়াল টপকাতেই হাতে ঢুকল রড
৬ ঘণ্টা পর রেলপথ ছাড়লেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) চাকসু নির্বাচন ও ক্যাম্পাস পরিস্থিতি বিষয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চবি ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নানান অপবাদ এবং সুস্পষ্ট মিথ্যাচার করেছে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে শাখা ছাত্রশিবির।
সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনগুলোর আলোচনায় শিবির এমফিল-পিএইচডির পক্ষে ও বয়স ৩০ এর কথা বলাই প্রশাসন সেটা নির্ধারণ করেছে বলে জানায়।
এর জবাবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ছাত্রশিবির এমফিল, পিএইচডির পক্ষে ছিল মর্মে ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের দেওয়া উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, এমফিল-পিএইচডিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবেই পরিগণিত হয়। এজন্য সে সভায় উপস্থিত ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ এই বিষয়ে নীরব থেকে অন্যদের মতামতকে সম্মান জানিয়েছে।
এমফিল ও পিএইচডিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়ে পরবর্তীতে গৃহীত সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একান্ত নিজস্ব। এতে ছাত্রশিবিরের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে হলে আসন বরাদ্দ এবং ডাইনিং পরিচালনা নিয়ে শাখা ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনের বক্তব্যের জবাবে বলা হয়েছে, চবির হল ও ডাইনিং পরিচালনা প্রশাসনের নির্ধারিত নিয়ম ও নীতিমালার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী তারা মেধার ভিত্তিতেই সবগুলো হলে আসন বরাদ্দ দিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ডাইনিং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রশিবির কোনোভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণ বা মতপ্রকাশে বাধা প্রদান করে না। বরং শিবির সর্বদা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত ব্যবস্থাপনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরা চবি ছাত্রদল সভাপতির এমন মিথ্যাচার ও অপবাদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
কমিটি নিয়ে চবি ছাত্রদল সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানের বক্তব্যের উত্তরে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অজ্ঞতাবশত অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ভুল তথ্য ছড়িয়েছেন। চবি ছাত্রশিবির প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও প্রত্যেকটি হল ও অনুষদে বছরের শুরুতেই কমিটি নবায়ন করেছে এবং সেটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ঘোষণা করা হয়েছে।
কমিটি ঘোষণার পর থেকে বিগত ৭ মাস যাবত প্রকাশ্যেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন, কল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। অপরদিকে, শাখা ছাত্রদল হল কমিটি দূরে থাক, ২০২৩ সালে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দিলেও লোকবল সংকট বা গুপ্ত রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে অথবা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ সন্ত্রাসী হানিফ ও ইকবাল কর্তৃক ককটেল বিস্ফোরণ এবং দোকান ভাঙচুরের পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে যেখানে সরাসরি আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয় এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। উক্ত ঘটনাকে মব বলে সন্ত্রাসীদের পক্ষপাতীত্ব করা এবং হামলাকে সহজিকরণ করার হীন চেষ্টার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
গত ৬ আগস্ট জীববিজ্ঞান অনুষদের একটি কক্ষে কিছু শিক্ষার্থীর মাঝে কুরআন বিতরণ করে জীববিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রশিবির। যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে, শ্রেণী কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক সম্প্রীতি নষ্টের উদ্দেশ্যেই ছাত্রদের জন্য কল্যাণমূলক এই কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে জলঘোলা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে চবি ছাত্রদলের দেওয়া লিখিত বক্তব্যের ৩ নং পয়েন্টে শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন রনিকে নিয়ে মিথ্যা দোষারোপ করা হয়েছে। বর্ণিত ঘটনার প্রকৃত রূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। ৫ আগস্টের পর চবির বন্ধ হল থেকে গার্ডদেরকে ধাক্কা দিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দাউদ সালমানকে সনদ এবং অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের হাতে ব্যাগভর্তি নেশাজাতীয় দ্রব্য এবং শটগানসহ হাতেনাতে আটক হয়।
পরবর্তীতে তাকে শটগানসহ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী উপস্থিত সাংবাদিক এবং বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার উপস্থিতিতে গুলিসহ সন্ত্রাসী আটক হয়েছে মর্মে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনাকে ভিন্নভাবে বর্ণনা দিয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে শাখা ছাত্রশিবির।
বিবৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করে চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, “চবি ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শাখা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের এমন মিথ্যাচার ও অপবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৫ আগস্ট পরবর্তী এ দেশে আমরা এমন অপরাজনীতি আশা করিনি।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী