সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ছাত্রদল নেতা দুই ভাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুরোনো বিরোধের জেরে এক ব্যক্তিকে সালিশে মারধরের জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া কিল্লা গ্রামে এ হামলা হয়।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, হামলায় নেতৃত্বদানকারীরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা।
এলাকাবাসী জানায়, খোলপেটুয়া কিল্লা এলাকার মো.
ইমরান হোসেনের দাবি, মঙ্গলবার বিকেলে ইটভাটার টাকা নিয়ে একটি বিরোধের সালিশ বসে কিল্লা মোড়ে। সেখানে ছিলেন তাঁর চাচা ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ খান। পুরোনো বিরোধের জেরে তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা করেন ২০২৪ সালে সংঘটিত আবুল কাশেম কাগুচী হত্যা মামলার আসামি বুলবুলি গাজী। এ সময় উপস্থিত লোকজনের সামনেই বুলবুলিকে মারধর করেন হাবিবুল্লাহ।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বুলবুলির পক্ষ নিয়ে তাঁর স্বজনরা সংঘবদ্ধ হয়ে আবু মুছা গাজী ও লোকমান হোসেনের নেতৃত্বে হাবিবুল্লাহর ওপর হামলার চেষ্টা করেন। তিনি কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান জানিয়ে ইমরান বলেন, ঘটনাস্থলের কাছাকাছিই তাদের বাড়ি। যে কারণে উত্তেজিত লোকজন তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে নেতৃত্ব দেওয়া লোকমান হোসেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুছা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, বিচারস্থলে বুলবুলিকে পেয়ে পুরোনো বিরোধের জেরে ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহর নেতৃত্বে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ইউপি সদস্যের দুই ভাতিজার বাড়িতে হামলা করে।
আবু মুছা গাজীও একই রকম দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বুলবুলিকে মারার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজন ইমরান ও কাদেরকে খুঁজতে বাড়িতে যায়। তবে ভাঙচুর বা লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। বুলবুলির অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় অবস্থা বেগতিক দেখে ইমরান ও তাঁর ভাই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।’
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির জানান, খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আহত বুলবুলিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রকৃত ঘটনা জানতে তদন্ত চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ন ত ম রধর ইমর ন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখলো সিন্ডিকেট, নবজাতকের মৃত্যু
শরীয়তপুরে একটি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় অসুস্থ অবস্থায় এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, শরীয়তপুরের অ্যাম্বুলেন্স চালক সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দীর্ঘসময় আটকে থাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
রোগীর স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর এলাকার নূর হোসেন সরদারের স্ত্রী রুমা বেগম সন্তান সম্ভবা ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে তার প্রসব বেদনা উঠলে স্বজনরা তাকে জেলার নিউ মেট্রো ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। তবে বাচ্চাটি ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই কিছুটা ঠান্ডার সমস্যায় ভুগছিল। পরে শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেন হাসপাতালের চিকিৎসক।
পরিবারের লোকজন তখন শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য ঢাকাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া করেন। পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলে গাড়িটির গতিরোধ করে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক সবুজ দেওয়ান ও আবু তাহের দেওয়ান নামের দুই ব্যক্তি।
তাদের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় যেতে দিতে রাজি নয় তারা। এক পর্যায়ে তারা ঢাকাগামী সেই অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করতে থাকে। এসময় রোগীর লোক বাঁধা দিলে তাদেরকেও লাঞ্চিত করা হয়। এমন অবস্থায় দীর্ঘ ৪০ মিনিট আটকে থাকার পর অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই শিশুটির মৃত্যু হয়।
রোগীর স্বজন রানু আক্তার বলেন, “আমরা তাদের অনেক অনুরোধ করেছি গাড়িটিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি। চালকের কলার ধরে গাড়ির চাবি নিয়ে গেছে। পরে আমাদের বাচ্চাটি মারা যায়। ওদের সিন্ডিকেটের জন্যই আমাদের সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা ওদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
মারা যাওয়া শিশুটির নানী সেফালী বেগম বলেন, “আমার নাতীরে ঢাকায় নিতে পারলে ও বেঁচে যেতো। ওরা আমার নাতীরে বাঁচতে দেয়নি। ওদের জোরাজুরিতে আমার নাতির মুখ থেকে অক্সিজেন খুলে গেছে। ওদের আমি বিচার চাই।”
ঢাকার অ্যাম্বুলেন্স চালক মোশারফ মিয়া বলেন, “আমি ঢাকা থেকে ট্রিপ নিয়ে শরীয়তপুরে এসেছিলাম। পরে ফিরতি ট্রিপের জন্য হাসপাতালের পাশেই গাড়ি সাইড করে রাখি। রোগীর লোক ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমাকে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া করে। শিশুটির অবস্থা খারাপ হওয়ার আমি দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দেই। তখন কয়েকজন লোক এসে আমাকে জোর করে কলার ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে চাবি কেড়ে নেয়। আমি তাদের অনুরোধ করলেও ছাড়েনি। এক পর্যায়ে ওই লোকদের বলেছিলাম আপনারাই তাহলে এই পেশেন্ট নিয়ে যান কিন্তু পেশেন্টের লোক আমাকেই গাড়ি নিয়ে যেতে বলছিলো। পরে তারা আমাকে না ছাড়ায় বাচ্চাটা গাড়িতেই মারা যায়।”
এদিকে শিশুটির মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে ওই দুই স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক।
এ ব্যাপারে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, “আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।”
ঢাকা/আকাশ/এস