ইলন মাস্ক কি আসলেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারবেন
Published: 2nd, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ কংগ্রেসে পাস হলে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন বলে গত সোমবার হুমকি দিয়েছেন ইলন মাস্ক। এই ধনকুবেরের মতে, বিলটি পাস হলে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে রিপাবলিকানদের আর কোনো পার্থক্য থাকবে না। ডেমোক্র্যাটরা করদাতাদের টাকা অপচয় করেছেন বলে রিপাবলিকানরা অভিযোগ করে থাকেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বিলটি গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটিকে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পাঠানো হয়েছে। বিলটিতে করছাড়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা ও দরিদ্রদের জন্য খাদ্যসহায়তা কমানোর কথা বলা হয়েছে।
মাস্ক গত মাসে একাধিকবার এই বিলের সমালোচনা করেছেন এবং জুনের শুরু থেকে নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত সোমবার মাস্ক তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘এই পাগলাটে বিল পাস হলে পরদিনই “আমেরিকা পার্টি” গঠন করা হবে।’
এই ধনকুবের আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান মিলিয়ে একটাই দল চলছে। মানুষের আসল কণ্ঠস্বর শোনার জন্য এখন একটা বিকল্প দরকার।’
একসময়ের ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্ক এখন এই বিলের অন্যতম কড়া সমালোচক। ৩ জুন এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত, কিন্তু আর সহ্য হচ্ছে না। এই বিশাল, অপ্রয়োজনীয়, অপচয়ে ভরা কংগ্রেসীয় ব্যয় বিলটি একেবারে জঘন্য।’এর আগের এক পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, ‘এই পাগলাটে খরচের বিল উত্থাপনের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে আমরা এখন একদলীয় দেশে বাস করছি, যার নাম “পর্কি পিগ পার্টি”! এই বিলের মাধ্যমে ঋণের সীমা রেকর্ড ৫ লাখ কোটি ডলার বাড়ানো হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ঋণের সীমা নির্ধারণ করে দেয়। এই ঋণসীমার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ কী পরিমাণ অর্থ ঋণ নিতে পারবে। বর্তমানে এই ঋণসীমা ৩৬ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার।
মাস্ক কেন বিরোধিতা করছেনএকসময়ের ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্ক এখন এই বিলের অন্যতম কড়া সমালোচক। ৩ জুন এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত, কিন্তু আর সহ্য হচ্ছে না। এই বিশাল, অপ্রয়োজনীয়, অপচয়ে ভরা কংগ্রেসীয় ব্যয় বিলটি একেবারে জঘন্য।’
একপর্যায়ে মাস্ক অভিযোগ করেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টাইনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও সেই পোস্টটি তিনি পরে মুছে ফেলেন।
তবে পরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, মাস্কের জন্য তাঁর শুভকামনা আছে। ট্রাম্পের এ কথার পর মনে হচ্ছিল, মাস্কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ঠিকঠাক হয়ে গেছে। এরপর ১১ জুন মাস্ক এক পোস্টে লেখেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।
‘নিশ্চিতভাবেই একটি তৃতীয় রাজনৈতিক দল চালানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা মাস্কের আছে, যা রিপাবলিকানদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। তবে তিনি আদৌ এই ঝুঁকি নেবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।’ (নাটাশা লিন্ডস্ট্যাড, ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সের রাজনৈতিক বিশ্লেষক)এরপরও মাস্ক অনলাইনে একের পর এক পোস্ট দিয়ে বিলটির সমালোচনা করেই যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, এই বিল পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের সীমা বেড়ে যাবে, দেশ দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে এবং লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারে।
মাস্ক বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের মালিক। ট্রাম্প প্রস্তাবিত বিলে সিনেট কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার ওপর ৭ হাজার ৫০০ ডলারের করছাড় বন্ধের প্রস্তাব রয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা কমে যেতে পারে।
মাস্কের প্রস্তাবিত ‘আমেরিকা পার্টি’ কীগত ৫ জুন ইলন মাস্ক তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে একটি অনলাইন জরিপ চালান। সেখানে তিনি অনুসারীদের প্রশ্ন করেন, ‘এখন কি যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সময় এসেছে, যা মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা ৮০ শতাংশ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করবে?’
ওই জরিপে ৫৬ লাখ মানুষ অংশ নেন। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ ‘হ্যাঁ’ উত্তর দিয়েছেন। এর পর থেকে মাস্ক বারবার এই ফল শেয়ার করে বলছেন, এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিক নতুন একটি রাজনৈতিক দল চান।
ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সের সরকার বিভাগের অধ্যাপক নাতাশা লিন্ডস্ট্যাড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘মাস্ক বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ মানুষ ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—এই দুই প্রধান দল নিয়ে সন্তুষ্ট নন এবং তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করা হচ্ছে না।’
মাস্কের অনলাইন জরিপের ফলাফল পুরো যুক্তরাষ্ট্রের জনমতকে তুলে না ধরলেও এর মধ্য দিয়ে ভোটারদের প্রবণতা বোঝা যায়। ২০২৪ সালের গ্যালাপ জরিপ অনুযায়ী, ৪৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক নিরপেক্ষ ভোটার, ২৮ শতাংশ রিপাবলিকান এবং ২৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক ভোটারের চেয়ে নিরপেক্ষ ভোটারের সংখ্যা বেশি।
এক্সে মাস্কের দেওয়া পোস্টের নিচে উত্তর দেওয়ার ঘরে তাঁর এক অনুসারী একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল ‘আমেরিকা পার্টি’। জবাবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্ক লেখেন, ‘আমেরিকা পার্টি’ নামটা দারুণ শোনায়। এটাই হবে সেই দল, যারা আসলেই আমেরিকাকে প্রতিনিধিত্ব করবে।
ইলন মাস্ক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র প বল ক ন প রস ত ব ত র প রস ত ব ইলন ম স ক এই ব ল র এক প স ট দল গঠন র জন য প স হল আম র ক ন র জন ন একট
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্র-জনতার ভয়ে ডোবায় ঝাঁপ সাবেক মেয়রের, পুলিশে সোপর্দ
যশোরের কেশবপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামকে ধরে পুলিশে দিয়েছেন ছাত্র-জনতা। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে পৌর শহরের ভবানীপুর এলাকায় একটি বাড়িতে ঘেরাও করেন ছাত্র-জনতা। পরে থানা ছাত্র-জনতার ভয়ে পালাতে গিয়ে একটি ডোবাতে ঝাঁপ দেন তিনি। পরে স্থানীয়রা ধরে মারধরের চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। একটি বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গতবছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রফিকুল ইসলাম তার ভবানীপুর মোড়লপাড়ার বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। বুধবার দুপুরের দিকে তার বাড়িটি স্থানীয় ছাত্র-জনতা ঘিরে ফেলেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে রফিকুল ইসলাম ওই এলাকার আরিফুর রহমান মিলনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে ছাত্র-জনতার ভয়ে পালাতে একটি ডোবায় ঝাঁপ দেন রফিকুল। পুলিশ জানতে পেরে রফিকুলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে নাশকতা, চাঁদাবাজিসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে কেশবপুরে ত্রাস সৃষ্টি করতেন জামাল বাহিনী। সেই জামাল বাহিনীর পরিচালনা করতেন সাবেক মেয়র রফিকুল। একটি বিস্ফোরক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।