জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আজাদ সরকার (৫২) হত্যায় প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন মিঠু কাজীকে (৫২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। চাঁদপুর জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার মনির হোসেন হাজীগঞ্জ উপজেলা সদরের টোরাগড় এলাকার কাজীবাড়ির মৃত হেন্দু মিয়া কাজীর ছেলে। তিনি হাজীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি। হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ জানায়, মনির হোসেন দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ মামলায় এর আগে হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলালউদ্দিন, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শুকুর আলম, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসানসহ কয়েকজন কারাগারে। এ ছাড়া মামলার আরও কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত আছেন।

গত বছর ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন টোরাগড় এলাকায় পৌরসভার সামনে বিএনপি নেতা ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি আহম্মেদ কবিরের (হিমেল) বাবা আজাদ সরকারকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে আহম্মেদ কবির বাদী হয়ে ১৪ আগস্ট হাজীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এজাহারে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৫ নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫ জনকে আসামি করা হয়।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) লুৎফুর রহমান বলেন, আজ বৃহস্পতিবার মনির হোসেন মিঠু কাজীকে আদালতে পাঠানো হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন র হ স ন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ