যখন পর্দায় একেকটি দৃশ্য বদলে যায় নিখুঁতভাবে, যখন দর্শকের হৃদয় কাঁপে কোনো সংলাপের টানটান আবেগে, তখন খুব কম মানুষই খেয়াল করে, এসবের পেছনে একজন মানুষ আছেন– যিনি নিজ হাতে গড়েন গল্পের ছন্দ। এখন ঢাকার পোস্ট-প্রোডাকশন জগতে এক পরিচিত নাম জোবায়ের আবির পিয়াল। বগুড়ার এ তরুণের পথচলাটা ছিল যেমন পরিশ্রমে ভরা, তেমনি প্রেরণায়। 

তাঁর ভিডিও এডিটিংয়ের শুরুটা ছিল কৌতূহল থেকে। ছোটবেলায় সিনেমা দেখার সময় তাঁর মাথায় ঘুরত ‘এই দৃশ্যগুলো বানানো হয় কীভাবে?’ আলোর খেলা, শব্দের ছন্দ আর সময়ের নিখুঁত ব্যবস্থাপনায় কীভাবে তৈরি হয়? সেই আগ্রহই তাঁকে টেনে নিয়ে যায় ভিডিও এডিটিংয়ের এক নতুন জগতে। প্রথমে একটি সাধারণ ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে হাতেখড়ি। এরপর তাঁর সামনে খুলে যায় ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে নতুন নতুন সব দরজা। প্রতিটি কাট, প্রতিটি ট্রানজিশন যেন হয়ে উঠল গল্প বলার নিজস্ব এক টুল। প্রতিদিন এডিটিং টেবিলে তিনি শুরু করেন এক নিঃসঙ্গ অথচ রোমাঞ্চকর যাত্রা। পিয়াল বললেন, ‘শুরুর দিকে কিছুই জানতাম না। তখন শুধু জানতে চেয়েছি দৃশ্যগুলো কীভাবে তৈরি হয়। যখন কাটা শুরু করলাম তখনই খুঁজে পেলাম নিজের ভাষা। প্রতিটি কাটই তখন মনে হতো একেকটা শব্দ, যা দিয়ে আমি একটি গল্প বলতে পারি।’ এই কৌতূহলই তাঁকে টেনে নিয়ে আসে ঢাকায়। পোস্ট-প্রোডাকশন হাউসে সহকারী সম্পাদক হিসেবে শুরু হয় পিয়ালের জীবন। সেখানেই পান ভিডিও এডিটিংয়ের প্রথম গুরু ইকবাল কবির জুয়েলকে। পিয়াল বলেন, ‘জুয়েল ভাই শুধু বস ছিলেন না, ছিলেন আমার শিক্ষক। তাঁর হাত ধরেই বুঝতে শিখি, এডিটিং মানে শুধু দৃশ্য সাজানো নয়, গল্পের ভেতরের আবেগ বের করে আনা।’

এরপর এক দশকেরও বেশি সময়ের যাত্রা। বর্তমানে পিয়াল কাজ করছেন আলফাআই লিমিটেড-এ চিফ ভিডিও এডিটর হিসেবে। তাঁর প্রতিটি কাজেই যেন থাকে এক ধরনের ভিজ্যুয়াল সংবেদনশীলতা। শাহরিয়ার শাকিলের নেতৃত্বে কাজ করতে গিয়ে পেয়েছেন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। 

পিয়াল বলেন, ‘শাকিল ভাই সবসময় বলেন, একজন সম্পাদক যদি নির্মাণের সব স্তরে থাকতে পারে, তাহলে সে কেবল কাজ করে না, নির্মাণের আত্মাকেও ধরতে পারে।’ এই কথাটা আমি হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করি।

পিয়ালের কাজের পরিসর বিশাল। ওয়েব সিরিজ মহানগর, সিন্ডিকেট, আগস্ট ১৪, জিম্মি, কথোপকথন– এসব জনপ্রিয় প্রজেক্টের পেছনে তাঁর নিখুঁত কাট, আবেগ তৈরি করা টাইমিং, আর গল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। পিয়াল বলেন, ‘আমি প্রতিবার ভাবি– এই গল্পটা যদি আমার হতো, আমি কীভাবে বলতাম? সেই ভাবনা থেকেই আমি কাজ শুরু করি।’

ফিচার ফিল্ম দাগি-তে প্রধান এডিটর, সুড়ঙ্গ-এ পোস্ট-প্রোডাকশন সুপারভাইজার, তুফান ও তাণ্ডব-এ সহ-সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন পিয়াল। একক নাটকের সংখ্যাও তিনশর বেশি। তবে শুধু এডিটর হিসেবে নয়, তিনি কাজ করেছেন নন-ফিকশন প্রজেক্টেও। এক ডিশ দুই কুক, হলিডে প্ল্যানার, দ্য বক্স এসব কাজের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সহযোগী পরিচালকও। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে দিয়েছে নির্মাণের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট বোঝার সুযোগ। আর ভিএফএক্স? সেটিও তাঁর আরেক দক্ষতার ক্ষেত্র। 

‘সিন্ডিকেট’, ‘আগস্ট ১৪’, ‘মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ এগুলোতে ভিএফএক্স ডিজাইন ও এক্সিকিউশনের কাজেও রেখেছেন নিজের ছাপ। পিয়ালের ভাষায়, ‘ভিএফএক্স যদি ঠিকভাবে ব্যবহার না হয়, তাহলে সেটি গল্পের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন একটি চাকচিক্য হয়ে দাঁড়ায়। যখন গল্পের ছন্দে থাকে, তখন সেটি জাদুর মতো কাজ করে।’

পিয়াল তাঁর এই দীর্ঘ যাত্রায় পাশে পেয়েছেন দেশের বহু খ্যাতিমান নির্মাতা– শিহাব শাহীন, আসফাক নিপুণ, কাজল আরেফিন অমি, মিজানুর রহমান আরিয়ান, ভিকি জাহেদ, সুমন আনোয়ারকে– যাদের সান্নিধ্য তাঁকে করেছে আরও পরিপক্ব, আরও গভীর দর্শনসম্পন্ন। পিয়ালের কাজগুলো দেখে বলা যায় পর্দার আড়ালে থেকেও তিনি হয়ে উঠেছেন হাজারো গল্পের নেপথ্য নায়ক।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন টক ভ ড ও এড ট গল প র ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯

ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।

দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।

আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।

স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪০ ঘণ্টা পর এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ আরেকজন
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
  • গরুর গোবর কুড়ানো থেকে সাত তারকা হোটেলে, জয়দীপের গল্প জানেন কি
  • টর্চলাইট
  • স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক
  • গাজীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার
  • খাগড়াছড়ির ঘটনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
  • ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করার নির্দেশ দিলো আদালত
  • ‘মোটা জেনারেলদের’ কড়া সমালোচনা করলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা হেগসেথ
  • ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯