একটি সুন্দর দিনের গল্প লেখার কথা ছিল। কারণ, বোলিং ভালো হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত থাকার কথা ব্যাটারদের। সেটাই দেখা গেছে টপঅর্ডারে। ওপেনিং জুটি দ্রুত আউট হলেও নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে দারুণ খেলছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। তারা সেট হওয়ায় নির্ভার ছিল ড্রেসিংরুম। দিনের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ এক কাপ গরম কফি উপভোগ করছিলেন চোখে-মুখে জয়ের স্বপ্ন এঁকে। ৩০ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার বুঝতেই পারেননি কফি শেষ হওয়ার আগেই ব্যাটিং লাইনআপে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তিনি চেয়ে চেয়ে দেখলেন সব কেমন ধ্বংসের পথে। কফি ফেলে প্যাড পরে দৌড়ে গেলেন ২২ গজে। যে পথে গেলেন, শূন্য হাতে ফিরেও এলেন সেই পথে। লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজের মতো নামের পাশে শূন্য লিখে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ১০০ থেকে ১০৫ রানে ৭ উইকেটের পতনে পরাজয়ে শুরু সিরিজ।

অথচ শ্রীলঙ্কাকে ২৪৪ রানে বেঁধে ফেলার পর ব্যাটিংয়ের ভালো শুরু ছিল। সেটা দেখে ৬-৭ ওভার হাতে রেখে ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন তাসকিন। অনিশ্চয়তার ক্রিকেট মুহূর্তে বোকা বানিয়ে দেয় তাঁকে। সংবাদ সম্মেলনে নিজের সেই হতাশার কথা বলতে বলতে আক্ষেপেও পুড়ছিলেন ব্যাটিং ব্যর্থতায় আরাধ্য জয় হাতছাড়া করে। 

বাংলাদেশ শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। মাঝে টেস্টের ব্যস্ততা দেশে-বিদেশে। সেদিক থেকে খেলার মধ্যেই ছিলেন তারা। তাই ৬ রানে ৭ উইকেট হারানোর অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই। সেটা করার সাহস দেখাননি কেউ। বরং দলের সেরা পারফরমার তাসকিনকে সংবাদ সম্মেলনে পাঠিয়ে নিজেকে আড়াল করেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

কেন দলের এই হাল জানালেন তাসকিন, ‘আমরা বোলিং খুব ভালো করেছিলাম। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ভালো ছিল। ১ উইকেটে ১০০ রান হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে বাজেভাবে কলাপস করি। মিডলঅর্ডারে ধস নামে। অথচ আমাদের মনে হয়েছিল, দ্রুত ম্যাচটি জিতে যাব।’ শান্তর রানআউটে বিপর্যয়ের শুরু। ১২৫ রানে নবম উইকেট হারালে পরাজয় নিশ্চিত হয়। ব্যবধানটা কত হবে, সেটাই ছিল দেখার। জাকের আলী ও মুস্তাফিজুর রহমানের কল্যাণে ধ্বংসস্তূপ থেকে লড়াই করায় ৭৭ রানে হারতে হয় ম্যাচ। যেখানে জাকের ৬৪ বলে ৫১ রান করে দেখান সেট হলে বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। তাসকিনের মতে, “টপঅর্ডার ভালো খেলায় আমি কফি ‘চিল’ করছিলাম ড্রেসিংরুমে। হঠাৎ দেখি ৫ উইকেট নেই। কফি ফেলেই ছুটতে হয়। জেতা গেম হেরে গেছি। ক্রিকেটে এমনটা হয়। আমি নিশ্চিত, এই হারের পর কেউ স্বস্তিতে ঘুমাতে পারবে না।”

ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা তাসকিন গোড়ালির জড়তা নিয়েই সেরা বোলিং করলেন। নিজের বোলিং নিয়ে বলেন, ‘অনেক দিন পর ফেরায় একটু জড়তা ছিল। এর পরও চেষ্টা কম করিনি। পুরোপুরি ফিট থাকলে আরেকটু ভালো বোলিং করা যেত। আশা করি, দ্রুতই আগের মতো ছন্দে ফিরতে পারব।’ তাসকিন জানান, দেশের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়েই শ্রীলঙ্কা এসেছে বাংলাদেশ। ভালো ক্রিকেট খেলতে কঠোর পরিশ্রমও করছেন তারা, ‘আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু হচ্ছে না। বেশ কিছুদিন ধরে ফল পাচ্ছি না। তাই বলে এভাবে চলতে পারে না। অবশ্যই ঘুরে  দাঁড়াতে  হবে। সে পথ বের করতে হবে আমাদের। আশা করি, সামনের ম্যাচে ভালো করব।’ প্রেমাদাসার কন্ডিশন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্লো এবং লো হয়ে থাকে। সেই তুলনায় গতকালের উইকেট কিছুটা ভালো ছিল বলে জানান ডানহাতি এ বোলার। তাঁর মতে, ‘এখানে বড় স্কোর কমই হয়। পরে যারা ব্যাটিং করে তাদের ভালো করার রেকর্ডও কম। যদিও এই ম্যাচের উইকেট অতটা খারাপ ছিল না। জাকের আলী হাফ সেঞ্চুরি করে প্রমাণ করেছেন, সেট হলে বড় স্কোর করা সম্ভব।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনকে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দিতে রাজি হয়েছেন পুতিন: ট্রাম্পের দূত

ইউক্রেনকে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাজি হয়েছেন। রোববার সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। এটিকে মোড় বদলে দেওয়ার মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় বৈঠক করেন ট্রাম্প ও পুতিন। ওই বৈঠক থেকে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এমন কিছু ঘটেনি। কোনো চুক্তি ছাড়াই মস্কো ফিরে যান পুতিন। আর কয়েক দিন আগেও দ্রুত যুদ্ধবিরতির কথা বলা ট্রাম্প সুর বদলে বলেন, যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি রাশিয়া ও ইউক্রেনকে করতে হবে।

এরপর সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সেখানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারা যোগ দেবেন। তাঁদের আহ্বান—যুদ্ধ বন্ধের কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে যেন ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে পুতিনের রাজি হওয়ার বিষয়টি সামনে আনলেন উইটকফ। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়টিতে রাজি হয়েছেন পুতিন। একে আমি মোড় বদলে দেওয়ার মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করব।’

উইটকফ বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলো অনুচ্ছেদ–৫–এর মতো ভাষা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে।’ অনুচ্ছেদ–৫ বলতে উইটকফ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বিধানের পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা বুঝিয়েছেন।

এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জোটের কোনো সদস্যদেশ আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরা তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। অনেক আগে থেকেই ন্যাটোর সদস্য হতে চায় ইউক্রেন। তবে এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে রাশিয়ার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার প্রচেষ্টা।

সোমবার ট্রাম্প–জেলেনস্কি বৈঠক থেকে ভালো কিছুর আশা করছেন স্টিভ উইটকফ। তিনি বলেন, আলাস্কা থেকে ফেরার পথে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের খুঁটিনাটি আলাপ হয়েছে। ওয়াশিংটনে সোমবারের বৈঠক ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ