চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে: গাজী আতাউর
Published: 26th, July 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই যোদ্ধাদের ভুলে গিয়ে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের গলায় ফাঁসির দড়ি রেখে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া কোনোভাবেই উচিত হবে না।
ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই শহীদ ও আহতদের সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। এই সনদে মাদ্রাসাছাত্রদের স্বীকৃতিও দিতে হবে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে গাজী আতাউর রহমান এসব কথা বলেন। ‘জুলাই শহীদ ও আহতদের সম্মাননা এবং সংবর্ধনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।
বিএনপির সমালোচনার জবাবে ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য আপনারা বক্তব্য দিচ্ছেন। কারা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দোসর ছিল জনগণ তা জানে। আপনারা ফ্যাসিবাদের দোসর বলেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন না। আন্দোলনে নেই বলে ঘোষণা দিয়েছেন।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে গাজী আতাউর রহমান আরও বলেন, ‘আপনারা ১৬ বছর ফ্যাসিবাদ দ্বারা নির্যাতন হয়েছেন ঠিক, কিন্তু জনগণের আস্থা আপনাদের ওপর নেই বলে জনগণ আপনাদের আন্দোলনে সাড়া দেয়নি। ছাত্রদের ওপর জনতার আস্থা ও বিশ্বাস ছিল বলেই জনগণ ছাত্রদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’
এর আগে শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে একজন ব্যবসায়ী থেকে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আগে ঘুষ দিতে হতো ১ লাখ টাকা, এখন দিতে হয় ৫ লাখ টাকা।’
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘জুলাই যুদ্ধের এক বছর পার হতে না হতেই ঘুষ–বাণিজ্য বেড়ে যাওয়া আশঙ্কাজনক। রাষ্ট্রের কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আপনারা শুদ্ধতা ফিরিয়ে আনতে পারলেন না। তাহলে কি জুলাই আন্দোলন ব্যর্থ হবে? আমরা এ আন্দোলন-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হতে দেব না।’
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সহসভাপতি আলতাফ হোসাইন, এম এইচ মোস্তফা, সেক্রেটারি আবদুল আউয়াল, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম শরীয়াতুল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে স্মৃতিচারণে অংশ নেন মুহাম্মদ জাহিদ হোসাইন, মাওলানা আবু মাহমুদ পাটওয়ারী, খন্দকার লিয়াকত আলী, মুহাম্মদ রনজু মিয়া, আনোয়ারুল ইসলাম, আল-আমিন, হাবীব ভূইয়া, মুহাম্মদ বাবুল হোসেন, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সেলিম সিকদার, মুহাম্মদ জিহাদ প্রমুখ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শহীদ সাজিদুর রহমানের বাবা শাহজাহান ভূইয়া, শহীদ রেজাউল করীমের বাবা আল-আমিন এবং শহীদ জিহাদের বড় ভাই মুহাম্মদ রিয়াদ হোসেন। আলোচনা শেষে আহত এবং শহীদ যোদ্ধাদের পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ম হ ম মদ র রহম ন ইসল ম আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি: ফখরুল
পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “জনগণের মধ্য থেকে এই দাবি উঠে এলেই তা সম্ভব হবে।”
রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে ‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে ‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’।
মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রায় আট কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা পদ্মা ব্যারেজ ও পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘ সাতবার সম্ভাব্যতা যাচাই হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
আরো পড়ুন:
দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে জগাখিচুড়ি চলছে: মির্জা ফখরুল
নিহত পাইলটের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ফারাক্কা ব্যারাজ শুধু ফরিদপুর বা নির্দিষ্ট কোনো এলাকার সমস্যা নয়, এটি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সমস্যা। এ অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা এবং জীবন-জীবিকা রক্ষায় পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।”
উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় মানুষ সেখান থেকে চলে যাচ্ছে, যা একটি গুরুতর সমস্যা। এ অঞ্চলের বহু মানুষ তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাচ্ছে কারণ তা আর বসবাসের উপযোগী থাকছে না। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু।”
তিনি আরো বলেন, “নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি নিয়ে সামনে দাঁড়াতে হবে, যে সরকারই আসুক না কেন, তাদের এই বিষয়ে কাজ করতে হবে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বিএনপি দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং জনগণের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন জড়িত থাকায় বিএনপি এই অঞ্চলগুলোর উন্নয়নে অত্যন্ত সচেতন। জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যেকোনো কঠিন কাজই সম্ভব।”
জনগণের ঐক্যবদ্ধ দাবিই পরবর্তী সরকারগুলোকে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বাধ্য করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি দেশের মানুষের পালস বুঝি। দেশের মানুষ উন্নতি চায়, একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়। আর এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সমস্ত সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে।”
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “সামনে নির্বাচন, নির্বাচননী প্রচারণা হবে। আমি প্রত্যাশা করব এই বিষয়টি (পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু) প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে যেনো স্থান পায়।”
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা এটিকে নির্বাচনী ইশতেহারে দিবেন। যেনো এই দাবি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়।”
তিনি বলেন, “আগামী সরকারে যারা আসবে তাদের প্রথম কাজ হবে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ বহুবিধি কাজে মধ্যম মেয়াদি পরিকল্পনা করা। আমি প্রত্যাশা করব, মধ্যম মেয়াদি বাজেটে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরের বাজেটে এই প্রকল্পটি যেনো অর্থায়নের জন্য সংযুক্ত হয়।”
সেমিনারের সভাপতিত্বে করেন আয়োজক কমিটির সভাপতি ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। সেমিনারে বক্তব্য রাখেস বিপ্লবী ওয়াকার্য পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ