ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে শুনে মা শাহেদা বেগমের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। ঢাকার একটা জুয়েলারি দোকানে চাকরি করত ছেলে মো. ইশমামুল হক চৌধুরী। মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও ছাত্র–জনতার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকার চকবাজার থেকে শাহবাগ অভিমুখী ছাত্র–জনতার মিছিলে যোগ দিয়েছিল সে। মিছিলটি চানখাঁরপুল এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ গুলি চালায়। তখন দুপুর ১২টা হবে। সেখানে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ১৭ বছর বয়সী ইশমাম।

শাহেদা বেগম ঘটনার পরপরই ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানতে পেরেছিলেন। তবে সেদিন যানবাহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে ঢাকায় যেতে পারেননি। পরদিন ৬ আগস্ট শাহেদা ঢাকায় পৌঁছান। আর তার এক দিন পরেই মারা যায় ইশমাম। শেষ সময়ে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করেছে সে। কিন্তু শেখ হাসিনার পতন হয়েছে শুনে, সব ব্যথা ভুলে সে অবস্থায়ও খুশির হাসি হেসেছিল। আজ ছেলের মৃত্যুর এক বছর পূর্তির দিনে কেবল এসব কথাই মনে পড়ছে মা শাহেদা বেগমের।

ছেলেকে বারবার বলতাম, ‘বাবা, তুই এখনো ছোট। ঢাকার সব জায়গা চিনস না। বাসা আর দোকান থেকে বাইর হইস না। কিন্তু সে শুনত না। আমারে বলত, কিচ্ছু হবে না। আমরা না গেলে কে যাবে মিছিলে?’ শাহেদা বেগম, গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ মো.

ইশমামুল হক চৌধুরীর মা।

গতকাল বুধবার বিকেলে লোহাগাড়ার আমিরাবাদের তজু মুন্সিরপাড়ায় বাবার বাড়িতে বসে কথা হচ্ছিল শাহেদা বেগমের সঙ্গে। ছেলের কথা বলতে গিয়ে বারবার থামতে হচ্ছিল তাঁকে। কখনো চোখ মুছছিলেন, আবার কখনো সশব্দে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।

পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে ইশমাম ছিল মেজ। লোহাগাড়ার আমিরাবাদের দরজিপাড়ায় মাত্র এক শতক জমির ওপর ছোট একটা টিনশেডের কুঁড়েঘর ছিল তাদের। ইশমামের বাবা নুরুল হক মারা যান ২০১৭ সালে। তখন সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। অভাবের সংসারে পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়তে পারেনি। ২০২৩ সালে চাকরির খোঁজে পাড়ি দেয় ঢাকায়। পরে চকবাজারের একটি জুয়েলারির দোকানে চার হাজার টাকা মাসিক বেতনের চাকরি নেয়। মাস শেষে এ টাকার বড় অংশ মায়ের কাছে পাঠাত সে।

শাহেদা বেগম জানান, গত বছর গণ–অভ্যুত্থানের পুরো সময়টাতেই সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে ইশমাম। ৫ আগস্ট সকালেও মিছিলে গিয়েছিল। মিছিলেই গুলি খায় সে। চোখ মুছে শাহেদা বলেন, ‘ছেলেকে বারবার বলতাম, “বাবা, তুই এখনো ছোট। ঢাকার সব জায়গা চিনস না। বাসা আর দোকান থেকে বাইর হইস না।” কিন্তু সে শুনত না। আমারে বলত, কিচ্ছু হবে না। আমরা না গেলে কে যাবে মিছিলে?’

ইশমামের পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে উপজেলার আমিরাবাদের তজু মুন্সিরপাড়ায় নানাবাড়িতে থাকেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে বাড়ি সংস্কারের জন্য তিন লাখ টাকা পেয়েছেন। তবে সেটি দিয়ে বাড়ির কাজ শেষ হয়নি। বসবাসের উপযোগী করতে আরও অন্তত পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন।

শহীদ ইশমামুল হকের ছবি হাতে তার ভাই ও মা

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভাষা আন্দোলনের তাত্ত্বিক বিষয় আমাকে আকর্ষণ করেছিল’

ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ