জাতীয় পার্টির নামে সম্মেলন আয়োজন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলের জি এম কাদের অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এই সম্মেলনকে ‘বেআইনি’ দাবি করে তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দেশে আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত অফিস করছেন। তিনি কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেননি। চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনো পন্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁদের কার্যক্রম বেআইনি ও অবৈধ।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ কথা বলেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ আগামীকাল শনিবার গুলশানের একটি মিলনায়তনে দলের দশম সম্মেলন ডেকেছেন। দলের সাবেক রাজনৈতিক সহকর্মীদের প্রতি শামীম হায়দার পাটোয়ারী আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, তাই শিষ্টাচারের কারণে আমি মনে করি, তাঁরা কাউন্সিল থেকে বিরত থাকবেন। তাঁদের এই কাউন্সিল রাজনীতিতে কোনো সুবাতাস আনবে না। কারণ, তাঁদের এই কাউন্সিল আহ্বান সম্পূর্ণ অবৈধ।’

বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির মূলধারার কোনো নেতা-কর্মী যাবেন না বলে দাবি করেন শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘যারা জাতীয় পার্টি ভেঙেছে, তারা কেউই রাজনীতিতে সফল হতে পারেনি। এরশাদের জাতীয় পার্টি বা জি এম কাদেরের জাতীয় পার্টি হচ্ছে মূলধারার জাতীয় পার্টি। মূলধারার জাতীয় পার্টি টিকে ছিল, টিকে থাকবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, পার্টির চেয়ারম্যানসহ দুজনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

শামীম হায়দার বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনাটি হলো, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও দপ্তর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে বাতিল করা হয়নি, চেয়ারম্যান পদ অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি এবং বর্তমান চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। মানে হচ্ছে, যারা প্রাথমিক সদস্যপদসহ বহিষ্কৃত হয়েছে, তারা অদ্যাবধি পর্যন্ত বহিষ্কৃত আছে। ফলে বহিষ্কৃতদের পক্ষে জাতীয় পার্টির কোনো সভায় অংশ নেওয়া অবৈধ।’

এক প্রশ্নের জবাবে শামীম হায়দার বলেন, ‘দেশে এখন নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। রাষ্ট্রের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এমন বাস্তবতায় মনে হচ্ছে নির্বাচন করার জন্য সরকারের কোনো আন্তরিকতা ছিল না। নির্বাচন নিয়ে সরকার নতুন ইনিংস শুরু করেছে। আমরা দেখতে চাই, এই ইনিংসে সরকার কেমন ব্যাটিং-বোলিং করে। এরপরেই আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে সঠিক মন্তব্য করতে পারব। তবে এখন যদি সরকার সচেষ্ট হয় তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে হয়তো নির্বাচন করা সম্ভব হবে।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে শামীম হায়দার বলেন, ‘দেশে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত স্বাভাবিক না থাকে, পুলিশ ও প্রশাসন যদি সঠিকভাবে কাজ না করে এবং নির্বাচনে “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” (সমান সুযোগ) না থাকে, তাহলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হচ্ছে হাত–পা বেঁধে সাঁতার কাটতে নামার শামিল। সরকার যদি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ হয়, তবেই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’

জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব আরও বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে বর্তমান সরকার অবিচার করছে। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও নির্বাচন কমিশন দফায় দফায় সভা করছে, কিন্তু নিবন্ধিত এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ জাতীয় পার্টিকে সভায় ডাকছে না। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের শপথ নিলে অবশ্যই জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় ডাকা উচিত। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার একটি বড় নিদর্শন হচ্ছে, জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় ডাকা হচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে শামীম হায়দার পাটোয়ারী গতকাল গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার তীব্র প্রতিবাদ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর শিকদার, ইকবাল হোসেন, মহসিনুল ইসলাম, মমতাজ উদ্দিন, মইনুর রাব্বি চৌধুরী, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হেনা খান, গোলাম মোস্তফা, খলিলুর রহমান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম ক দ র ক উন স ল র জন ত আহ ব ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে

১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।

এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।

আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪

এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।

এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ