সবুজে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামে বিশাল পুরোনো বাড়ি, মালিক কে
Published: 9th, August 2025 GMT
বরগুনার আমতলীর সবুজে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রাম ঘোপখালী। সেই গ্রামে ঢুকলে হঠাৎ চোখে পড়ে বিশাল এক পুরোনো বাড়ি। গাছপালা আর নীরবতার আবরণে ঘেরা, যেন প্রকৃতির সঙ্গে লুকোচুরি খেলে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি।
একসময় এটি ছিল তিনতলা বাড়ি। তৃতীয় তলার বড় অংশ ধসে পড়ায় এখন কেবল দুইতলা দৃশ্যমান। ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামোর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা লাল-ধূসর ইটের এই ভবন যেন নিঃশব্দে উচ্চারণ করে চলেছে হারিয়ে যাওয়া কোনো ইতিহাসের ভাষ্য।
ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির আশপাশে সাত-আটটি পৃথক বাড়ি। সেখানে বসবাস করছেন এই বাড়ি নির্মাতার বংশধরেরা। বাড়িটির স্থাপত্যে ব্রিটিশ আমলের প্রভাব সুস্পষ্ট। খিলানযুক্ত বারান্দা, কারুকার্যপূর্ণ থাম ও অলংকৃত জানালাগুলো যেন সময়কে আটকে রেখেছে। বাড়িটির নিচতলার খিলান, মাঝের গম্বুজধর্মী কাঠামো এবং ওপরের জানালায় ব্যবহৃত কলামগুলো থেকে অনুমান করা যায়, এটি ব্রিটিশ আমলের।
বাড়ির ভেতরে ঢুকলে দেখা যায়, কাঠের দরজা-জানালাগুলো ভেঙে গেছে। ছাদ থেকে ঝরে পড়ছে মাটি ও ধুলা। ভবনটির ভেতরে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। একসময় যে কাঠের ছাদ শোভাবর্ধন করত, তা আজ ধসে পড়ার মতো অবস্থায়। জানালার রঙিন কাচ ভেঙে গেছে, খোদাই করা দরজাগুলো চূর্ণ–বিচূর্ণ।
ইট-চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত ভবনটির দেয়ালগুলো ২৪ ফুট চওড়া। ভবনটির প্রতিটি তলায় সুষমভাবে গঠিত খিলান ও জানালা আছে। নিচতলায় আছে ৭টি খিলান (অর্ধবৃত্তাকার), যা একটি দীর্ঘ বারান্দা তৈরি করেছে। এই খিলানগুলো রোমান-গথিক ধাঁচের, যা ব্রিটিশ আমলে প্রচলিত ছিল। প্রতিটি খিলানের ওপর রুফ-কার্নিশে ছোট ছোট অলংকরণ আছে।
ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামোর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এই ভবন যেন নিঃশব্দে উচ্চারণ করে চলেছে হারিয়ে যাওয়া কোনো ইতিহাসের ভাষ্য.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে জাপা নেতা ভোল্ট পাল্টে এখন বিএনপি নেতা!
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের রাজনীতিতে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন পিরোজপুর ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন।
একসময়ের জাতীয় পার্টির (জাপা) বড় নেতা হিসেবে পরিচিত দেলোয়ার এখন ভোল্ট পাল্টে বনে গেছেন বিএনপি নেতা। এ ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেলোয়ার হোসেন একসময় কাচপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে সোনারগাঁ অঞ্চলে তার প্রভাবশালী অবস্থান ছিল।
খোকার ছায়াতলে থেকে তিনি চাঁদাবাজি, দখলদারি, সালিশের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জাতীয় পার্টির অনেক নেতার মতো খোকাও আত্মগোপনে চলে যান। দেলোয়ারও কিছুদিন এলাকা থেকে বাইরে ছিলেন।
তবে সম্প্রতি তিনি এলাকায় ফিরে বিএনপির স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং অল্প সময়েই বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এখন তিনি প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন, এমনকি বক্তৃতাও দিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে পিরোজপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রতনপুর এলাকায় দেলোয়ার হোসেন নিজেই আয়োজন করেন বিএনপির ৩১ দফা লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি। আশ্চর্যের বিষয়, ওই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজিব। সেখানে সোনারগাঁ বিএনপি ও যুবদলের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তৃণমূল বিএনপির অনেক নেতা বলেন, “একজন জাতীয় পার্টির বিতর্কিত নেতা আজ বিএনপির মঞ্চে উঠে বক্তব্য দিচ্ছেন—এটা কর্মীদের সঙ্গে বড় ধরণের অবিচার। যারা বছরের পর বছর বিএনপির জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাদের পাশ কাটিয়ে একজন ভোল্ট পাল্টে আসা ব্যক্তি কিভাবে নেতার আসনে বসেন?”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেলোয়ার হোসেনের এই হঠাৎ রূপান্তর শুধু রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য। ক্ষমতার পালাবদলে টিকে থাকার জন্য তিনি নতুন আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন, আর স্থানীয় বিএনপির কিছু প্রভাবশালী নেতা তাকে গ্রহণ করায় তিনি নতুন পরিচয়ে মাঠে নামতে পেরেছেন।