রাস্তায় মানষিক ভারসাম্যহীন নারীর সন্তান প্রসব, যেভাবে বাঁচল নবজাতক
Published: 9th, August 2025 GMT
চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট মোড়ে শুক্রবার (৯ আগস্ট) এক মানষিক ভারসাম্যহীন নারী একটি সন্তান প্রসব করেন। ব্যস্ত সড়কের পাশে এই সন্তান প্রসবের ঘটনা তাৎক্ষণিক নজরে আসে দায়িত্বরত চট্টগ্রাম নগর ট্রাফিক বিভাগের এক ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টের।
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা নবজাতকসহ মানষিক ভারসাম্যহীন নারীকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্স যোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এবার হাসপাতালে এই নবজাতক শিশু মাকে বাঁচিয়ে তুলতে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চিকিৎসক টিম। এ ঘটনার পুরোটা তুলে ধরেছেন ওই সময়ে হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা.
অজ্ঞাতনামা শিরোনামে ডা. সামিরা লিখেছেন, “চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাদের গাইনি ইউনিট-২ এর এডমিশন, শুক্রবার (৮ আগস্ট) ছুটির দিন হওয়ায় রোগীর ভিড় কিছুটা কম। হঠাৎ একটার দিকে হালকা শোরগোল, কি হল! কি হল! সারসংক্ষেপে বুঝলাম, একজন অজ্ঞাতনামা মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা রাস্তায় প্রসব করেছেন, ফুল বের না হওয়ায় যারা সাথে থেকে ডেলিভারি করিয়েছিলেন সেই মহিলারা আর সাথে থাকা পুলিশ উনাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।”
আরো পড়ুন:
সাংবাদিক তুহিন হত্যা: ৭ আসামি দুই দিনের রিমান্ডে
মৌলভীবাজারে ছাত্রদল নেতাকে গলাকেটে হত্যা
তিনি বলেন, “রোগীর দিকে তাকিয়ে মন খারাপ হয়ে গেল,৩৮-৪০ বছর বয়স হবে, ছোট করে বয়কাট করা চুল, সারা শরীর প্রস্রাব-পায়খানায় মাখামাখি,পায়ের কাছে বাচ্চাটা পড়ে আছে, তখনো নাড়ী কাটা হয়নি, কি সুন্দর ফুটফুটে দেবশিশুটা, হাত পা ছুঁড়ে কান্না করছে। সাথে সাথে আমাদের এফসিপিএস ট্রেইনি ডা. সুলতানা লেবার রুমে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে রোগীর চিকিৎসা শুরু করেন, স্যালাইন-ইঞ্জেকশন-এন্টিবায়োটিকসহ সব ওষুধ দিয়ে রোগীর ফুল যেটা আটকে ছিল সেটা বের করেন।”
তিনি আরো বলেন, “অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসার জন্য উনাকে লেবারের পাশে পিপিএইচ রুমে অবজারবেশনে রাখা হয়। এবার পরবর্তী সমস্যা, রোগীর তো কোন অভিভাবক নেই। তাহলে এত ওষুধ, রক্ত, এতকিছু কিভাবে জোগাড় হবে? বাচ্চাটাকেও তো নবজাতক বিভাগে পাঠানো দরকার। এগিয়ে এলেন এম এস রেসিডেন্ট ডা. মুনিরা। রোগীর ওষুধপত্র সব নিজের টাকায় কিনলেন। আরেক রেসিডেন্ট ডা. মৌসুমী বাচ্চাকে নিজের রেফারেন্সে নবজাতক বিভাগে ভর্তি করালেন, ওরা সব ওষুধ কিনে চিকিৎসা শুরু করালেন।”
ডা. সামিরা বলেন, “সমস্যা তো তারপরও শেষ হয় না। রোগী একেবারেই বোধহীন, প্রস্রাব-পায়খানা বুঝতে পারেন না, বারবার কাপড়চোপড় নষ্ট করতে লাগলেন। ডা. তৃষিতা পরম মমতায় ওটি থেকে ম্যাক্সি পেটিকোট জোগাড় করে পাল্টে দিলেন পোশাক, ক্যাথেটার করে দিলেন যাতে বারর প্রস্রাবের কারণে রোগী ভিজে না যান। সিএ ডা. সামিহা, আরএমও ডা.কানিজ, ডা. নুজহাত রোগীর খাবারসহ যাবতীয় দরকারি জিনিস ব্যবস্থা করে দিলেন।”
ডা. সামিরা আরো বলেন, “সব তো হলো, মা যে মানসিক ভারসাম্যহীন, উনি তো বাবুকে খাওয়াতে পারছেন না, বাবুর কি হবে? এগিয়ে এলেন ইন্টার্ন ডা. খাদিজা, পরম মমতায় বুকের দুধ দিয়ে শিশুটির জীবন রক্ষা করলেন। ৩৩ নং ওয়ার্ডে যেসব ডাক্তার, নার্স এবং আয়ারা কর্তব্যরত ছিলেন, নিজের বোনের মত এই রোগীকে সেবা দিয়েছেন। নবজাতক বিভাগের ডা. এবং নার্সরা বাবুর যত্ন করছেন।”
“বিভাগীয় প্রধান ফাহমিদা ইসলাম, ইউনিট প্রধান সোয়েলা শম্পা, নবজাতক বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ শাহীন, চমেকহা পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন সকল ধরনের এডমিনিস্ট্রেটিভ সহায়তা প্রদান করেছেন। সেই নাম না জানা বোনেরা যারা রাস্তায় ডেলিভারি করেছেন এবং পুলিশ সদস্য মাজহারুল, যিনি রোগীকে হাসপাতালে আনা, সকল ফরমালিটিস পালন, ওষুধ ও রক্ত জোগাড় করেছেন। জেলা প্রশাসক রোগীকে দেখতে আসেন এবং সহযোগিতা প্রদান করেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অনেক দাতব্য সংস্থা।”
“আমরা যারা নিত্যদিনের শত রকম ঝঞ্ঝাট সহ্য করেও দেশের মায়া ছাড়তে না পেরে মাটি কামড়ে পড়ে থাকি, তাদের জন্য এই ধরনের ঘটনা যেন ছাই থেকে উঠে আসা ফিনিক্স পাখি। এখানে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে গর্ভবতী করার মত কুলাংগার যেমন আছে, রাস্তায় ডেলিভারি করিয়ে হাসপাতালে আনার মত মানবিক মানুষও এখনো আছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই রোগী আর তার বাচ্চাকে বাঁচাতে পেরেছে,” যোগ করেন ডা. সামিরা।
ঢাকা/রেজাউল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন প রসব
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা সঠিক মানুষকে সঠিক সম্মান দিতে পারি না: ইমরুল
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাছে ১২ হাজার টাকায় দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। যদিও শুরুর দিকে বিসিবি আমিনুলকে নিজেদের ব্যবস্থায় একটি পাঁচ তারকা হোটেলে রেখেছিল। পরবর্তীতে বিদেশি কোচরা যেখানে থাকেন সেখানে থাকার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
কিন্তু আমিনুল নিজের ইচ্ছাতে বিসিবির কোনো ব্যবস্থায় না থাকার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ট্রেলিয়ায় থাকে তার পুরো পরিবার। ঢাকার গেণ্ডারিয়াতে তার বেড়ে ওঠা। এখন সেখানে থাকার সুযোগ নেই। ঢাকায় অল্প কয়েকদিনের জন্য এলে আত্মীয়দের বাসাতেই উঠেন। এবার দেশে আসার পর তাকে দেওয়া হয় বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব। ফলে স্থায়ীভাবেই তাকে কয়েকমাস কাটাতে হচ্ছে বাংলাদেশে।
বিসিবি তার আবাসনের ব্যবস্থা করছে, এমন কথা শোনার পর নিজ থেকে সরে আসেন তিনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কম কথা হয়নি। পরবর্তী ১২ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপাক সাড়া ফেলেছে।
তবে এসবের আড়ালে একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে অসম্মান করা হয়েছে বলে মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে ইমরুল নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ স্ট্যাটাসে ইমরুল লিখেছেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে একটা বিষয় হয়তো আপনারা অনেকেই দেখেছেন—যে বিসিবি সভাপতি বর্তমানে মাত্র ১২ হাজার টাকার ভাড়ার একটি বাসায় থাকছেন। এই ব্যাপারটা আমার কাছে কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে হয়নি।’’
‘‘একজন মানুষ, যিনি নিজের স্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে এসে, শুধুমাত্র বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন, তাঁকে যদি এমন একটি বাসায় থাকতে হয়—তাহলে সেটা কতটা যুক্তিসঙ্গত, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।’’
‘‘আমার জানা মতে, বিসিবি শুরুতে তাঁকে ভালো মানের একটি থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ এবং কিছু দুষ্টচক্র সেই বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি শুরু করে, যা তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত করে। আর সেই সম্মানের খাতিরেই তিনি আজ এত সাধারণভাবে থাকছেন।’’
‘‘আমরা দেখে থাকি বিসিবি কত টাকা খরচ করে বিদেশি স্টাফ এবং কোচদের পেছনে, যার হিসাব কোটি টাকায় গড়ায়। অথচ, অন্যদিকে একজন সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান বোর্ড সভাপতিকে মাত্র ১২ হাজার টাকার একটি হোটেলে রাখা হচ্ছে। আমরা না হয় ব্যক্তি বুলবুলকে মূল্যায়ন না-ই করলাম, কিন্তু তাঁর মেধাকে তো অন্তত মূল্যায়ন করা উচিত, তাই না? নাকি আগের মতো যেভাবে সব কিছু চলেছে, সেভাবেই চলবে?’’
‘‘আসলে আমরা কবে শিখব একজন ভালো মানুষ কিংবা ভালো কিছুর সঠিক মূল্যায়ন করতে? কবে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশের উন্নয়নে যারা কাজ করছে, তাদের পাশে দাঁড়াব?’’
‘‘এমন কিছু সংখ্যালঘু মানুষ সব সময়ই থাকে—যারা শুধু দেশের ক্রিকেট নয়, বরং গোটা দেশেরই ক্ষতি করে। যেমনি করে বুলবুল ভাই নিজেই বলেছেন, কিছুদিন পর তিনি চলে যাবেন।’’
‘‘দুঃখের বিষয়, আমরা অনেক সময় সঠিক মানুষকে সঠিক সম্মান দিতে পারি না।’’
ঢাকা/ইয়াসিন