জিম্বাবুয়েতে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের যুবারা, ৯৫ রানের পর ৫ উইকেট রিজানের
Published: 10th, August 2025 GMT
রিজানের বলে বায়ান্দা মায়োলা আউট হতেই নিশ্চিত হলো জয়। উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ছুটলেন রিজানের দিকে—সেঞ্চুরি হারানোর আক্ষেপে পোড়া রিজানই যে জয়ের নায়ক। ব্যাট হাতে দলের বিপদের সময় দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন ঢাল হয়ে, বল হাতেও পেস বোলিংয়ে তিনি পেয়েছেন ৫ উইকেট। তাতে জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৩৩ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল হয়েছে চ্যাম্পিয়ন।
অথচ আজ ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েই শুরুটা ভালো ছিল না বাংলাদেশের যুবাদের। হারারেতে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৬৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। কালাম সিদ্দিকির সঙ্গী হয়ে দলের হাল এরপরপরই ধরেন রিজান। তাঁদের জুটিতেই নতুন করে আশা দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে ১১৭ রানের জুটি গড়েন দুজন।
৭৬ বলে ৬৫ রান করে আউট হয়ে যান কালাম। তবে রিজান ছুটতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে। শেষ পর্যন্ত তা তিনি পাননি, ফিরেছেন রানআউট হয়ে তাঁর সঙ্গী হয় রান আউটের দুর্ভাগ্য। ৪৮তম ওভারে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে ৯৬ বলে ৯৫ রানে রানআউট হন রিজান।
এরপর ২৯ বলে ৩৮ রান করা আবদুল্লাহ ও ৮ বলে ১৩ রান করা সামিউন বাসীর শেষ ১৫ বলে যোগ করেন ২৪ রান।
বড় রান তাড়ায় দুর্দান্ত একটা শুরু পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার যুবারাও। তাঁদের ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন আল ফাহাদ। ৩১ বলে ৪০ রান করা আদনান লাগাদিয়েনকে ফেরান তিনি। আরেক ওপেনার ইউরিখ ফন শালকবভিকও ২২ বলে ১৯ রান করে আউট হন তাঁর বলেই।
দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পরও দক্ষিণ আফ্রিকাকে কক্ষপথে রেখেছিলেন মোহাম্মদ বুলবুলিয়া ও জেসন রোলেস। তাঁদের ৪৫ রানের জুটি ভাঙেন রিজান। ৪৩ বলে ৩১ রান করে আউট হন বুলবুলিয়া, ৩৫ রানের বেশি করতে পারেননি রোলেসও।
এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকার যুবারা। শেষদিকে এমবাথার ২৯ আর সোনির ৩৪ কেবল ব্যবধানই কমিয়েছে। ফাইনাল জয়ের আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশের যুবারা। আর তাতে ব্যাটে-বলে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে নায়ক রিজান। রাতটা নিশ্চিতভাবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে তাঁর জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৫০ ওভারে ২৬৯/৫ (রিজান ৯৫, কালাম ৬৫, আবদুল্লাহ ৩৮; এমবাথা ২/৫০, মায়োলা ১/৪১)
দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দল : ৪৮.
ফল: বাংলাদেশ অ–১৯ দল ৩৩ রানে জয়ী।আরও পড়ুনদুবার জীবন পেয়ে ডেভিডের ৮৩, জিতেছে তাঁর দলই২ ঘণ্টা আগে
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বল হাতে দুর্দান্ত মারুফা, ব্যাট হাতে রুবাইয়া—পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
তিন বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকে একটিই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেটি এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর আজ সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। গত এপ্রিলে যে পাকিস্তানের কাছে বাছাইপর্বে হেরে শঙ্কার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, সেই দলটিকেই ১২৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৩০ রানের লক্ষ্যটা ১৮.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যান নিগাররা।
রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য শঙ্কা জাগিয়েছিল। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান করতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওপেনার ফারজানা হক ১৭ বলে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লু হয়েছেন ডায়ানা বেগের বলে।
পাওয়ার প্লের পর ১২তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান তিনে নামা শারমিন আক্তার। ১০ রান করতে ৩০ বল খেলতে হয়েছে শারমিনকে। শারমিন ফেরার পর ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও নিগার সুলতানা পরের দুই ওভারে তুলতে পারেন মাত্র ২ রান।
বাংলাদেশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ১৫তম ওভারে। পাকিস্তান নারী দলের সাদিয়া ইকবালকে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানি অফ স্পিনার রামিন শামীমের করা পরের ওভারে আসে ১৩ রান, দুই চারে যার ৯-ই নিগারের। রান-উৎসবে এরপর যোগ যেন রুবাইয়াও। বাঁহাতি স্পিনার নাশরা সান্ধুর করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা রুবাইয়া।
শেষ পর্যন্ত অভিষেকটা ফিফটি করে রাঙিয়েছেন তিনি। ৬২ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফিরে গেলেও ২৮ বছর বয়সী রুবাইয়া ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, সঙ্গে একটা রেকর্ড নিয়েও। ৭৭ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। রুবাইয়া ভেঙেছেন আয়েশা রহমানের রেকর্ড, ২০১১ সালে বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান করেছিলেন আয়েশা।
৪৪ বলে ২৩ রান করে নিগারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৯ বলে করেন অপরাজিত ২৪ রান। ৬টি চার ছিল সোবহানার ইনিংসে।
এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে ফেরান মারুফা। দুর্দান্ত এক বলে প্রথম উইকেটটি পেয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ফুলার লেংথের বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকে লেগ স্টাম্পে আঘাত হানে। ‘গোল্ডেন ডাক’ পান পাকিস্তান ওপেনার ওমাইমা। পরের বলে আরেকটি ‘গোল্ডেন ডাক।’ এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, সিদরা ড্রাইভ করতে গিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যান লেগ স্টাম্পে। হ্যাটট্রিক অবশ্য পাননি মারুফা, থেমেছেন এই ২ উইকেট নিয়েই।
তবে ম্যাচ সেরা মারুফার ওই শুরুটাকেই টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। তাঁদের মধ্যে আলাদা করেই বলতে হয় লেগ স্পিনার স্বর্ণা আক্তারের কথা। ৩.৩ ওভার বল করে মাত্র ৫ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাঁর পুরো করা তিনটি ওভারই ছিল মেডেন।
২ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর মুনিবা আলীকে নিয়ে ৪২ রান যোগ করেন পাকিস্তানের রামিন শামীম। পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদ আক্তার। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফল, ৩৮.৮ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট পাকিস্তানের মেয়েরা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের করা ৯ উইকেটে ১৪০ রান। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৩৬ রানে। আজ এমন কিছুর শঙ্কা দূর হয়েছে অভিষিক্ত রুবাইয়াতের ব্যাটে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ অক্টোবর, গুয়াহাটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (রামিন ২৩, সানা ২২, মুনিবা ১৭, ডায়না ১৬*, সিদরা ১৫, আলিয়া ১৩; স্বর্ণা ৩/৫, নাহিদা ২/১৯, মারুফা ২/৩১)।বাংলাদেশ: ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, সোবহানা ২৪*, নিগার ২৩; ডায়না ১/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মারুফা আক্তার।