লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা–পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন জেলার তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ আলমগীর হোসেন (৪০)। আজ সোমবার ভোরে চন্দ্রগঞ্জ থানার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ইমাম উদ্দিন মিজি বাড়ির কাছ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আলমগীর হোসেন উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরী এলাকার আবুল কালামের ছেলে। সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের আলোচিত সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জিহাদীর সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর হোসেন।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

ফয়জুল আজীম নোমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় চারটি অস্ত্র মামলা, একটি হত্যা ও দুটি মাদক মামলা এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অপহরণসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন।

আলমগীরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পুলিশ জানায়, নোমান ও রাকিব খুনের মামলায় অন্যতম আসামি আলমগীর হোসেন। ওই মামলায় তিনি ২০২৩ সালের ৯ মে গ্রেপ্তার হন। পরে উচ্চ আদালত থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর আর আদালতে হাজিরা দেননি।

আলমগীর ২০১৩ সালের দিকে সন্ত্রাসী মাসুম বিল্লাহ লাদেন বাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি ২০১৫ সালের দিকে আবুল কাশেম জিহাদীর বাহিনীতে যোগ দেন। কাশেম জিহাদী চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। নোমান ও রাকিব হত্যার ২৩ দিন পর জিহাদীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আলমগীরের বিরুদ্ধে আজাদ হোসেন ওরফে বাবলু (২৫) নামের একজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গত ২ জুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় আজাদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মাদক বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার বশিকপুর, চাটখিল ও আশপাশের এলাকায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি

চাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোরশেদ আলম ভূঁইয়া আলমগীরের লোকজনের হাতে অপহরণের শিকার হন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ৩১ জুলাই তিনি ও তাঁর সহযোগী তারেক রহমানকে আলমগীর হোসেনের লোকজন অপহরণ করেন। রাত ১০টার দিকে শামসুল হুদা উচ্চবিদ্যালয়ের কাছ থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যান অপহরণকারীরা। এরপর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাঁদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়, যা পরবর্তী সময় ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহার করা হয়।

মোরশেদ আলম আরও জানান, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নেওয়ার পর পরদিন বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অপহরণের সময় তাঁদের মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর এলাকার মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও তাঁরা তাঁর দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। নয়তো জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করবেন, এই আশঙ্কা তাঁদের।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আলমগ র হ স ন সদর উপজ ল র লক ষ ম প র আলমগ র র

এছাড়াও পড়ুন:

শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ৩ রানের জয় খুলনার

‘এমন ফিফটি লইয়া আমরা কি করিব’—তানভীর হায়দারের ৪৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস নিয়ে এমন কথা বলতেই পারেন রংপুর সমর্থকেরা।

জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) টি-টোয়েন্টিতে আজ খুলনার বিপক্ষে রংপুরের এই অলরাউন্ডার ব্যাট করতে নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে, টিকে থাকলেন পুরো ২০ ওভার। কিন্তু দলকে জেতাতে পারলেন না। শেষ ওভারের রোমাঞ্চকর সমাপ্তিতে তানভীরের রংপুর বিভাগকে ৩ রানে হারিয়েছে খুলনা বিভাগ।

জয়ের জন্য শেষ ওভারে রংপুরের দরকার ছিল ১৩ রান। ওপেনার তানভীরের সঙ্গে ক্রিজে ছিলেন অভিজ্ঞ নাঈম ইসলাম। বোলিংয়ে মিডিয়াম পেস বোলিং অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান। প্রথম ডেলিভারিতেই তিনি দিয়েছেন ওয়াইড। এরপরও তানভীর ও নাঈম মিলে মোট ৯ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি।

উইকেটে থিতু তানভীর শেষ ওভারে ৪ বল খেলে নিতে পেরেছেন ৬ রান; কোনো বাউন্ডারি নেই। রংপুর ইনিংসের শেষ ১৫ বলেও কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ দলের হয়ে দুটি ওয়ানডে খেলা এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার।

রান তাড়ায় রংপুরের লক্ষ্য যে খুব বেশি ছিল, তা নয়। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেটে ১৪৯ রান করেছিল খুলনা। রংপুর করতে পেরেছে ৬ উইকেটে ১৪৬।

অথচ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একপর্যায়ে ১৫ ওভারে ২ উইকেটে ১০৩ রান তুলে ফেলেছিল রংপুর। উত্তরবঙ্গের দলটির রান তোলার গতি বেশি না হলেও হাতে ৮ উইকেট ও পরে নাঈম ইসলাম-নাসির হোসেনের মতো অভিজ্ঞরা থাকায় শেষ ৩০ বলে ৪৭ রানের সমীকরণ মেলানো খুব কঠিন মনে হচ্ছিল না।

কিন্তু অধিনায়ক আকবর আলীর আউটে তাঁর সঙ্গে তানভীরের ৪২ রানের জুটি ভাঙার পর আর বড় জুটি হয়নি। নাসির হোসেনকে ব্যাটিংয়েই নামায়নি রংপুর। এমনকি নাঈমকেও নামানো হয়েছে আবদুল গাফফার, আলাউদ্দিন বাবু, আবদুল্লাহ আল মামুনের পরে। তাঁরা তিনজনই ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

খুলনার পেসার রবিউল হক ৩২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। তবে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জাতীয় দলের সাবেক অলরাউন্ডার জিয়াউর ম্যাচসেরা হয়েছেন।

বোলিংয়ে ৩ ওভারে ১৯ রানে ১ উইকেট নেওয়ার আগে ব্যাট হাতে ৪ ছক্কায় ১৬ বলে ৩৬ বলে অপরাজিত থাকেন জিয়াউর। তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের রংপুরকে ১৫০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে খুলনা।

এই ম্যাচ দিয়ে এনসিএল টি-টোয়েন্টির চার রাউন্ড শেষ হলো। টানা দ্বিতীয় জয়ে খুলনা উঠে এসেছে পয়েন্ট তালিকার তিনে। ঢাকা বিভাগ শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

খুলনা বিভাগ: ২০ ওভারে ১৪৯/৪ (জিয়াউর ৩৬*, এনামুল ৩৫, মিঠুন ২৫, নাহিদুল ২০*; হাশিম ২/২০, নাসির ১/৭, জাহিদ ১/১৮)।
রংপুর বিভাগ: ২০ ওভারে ১৪৬/৬ (তানভীর ৬০*, অনিক ২৮, আকবর ১৯; রবিউল ৩/৩২, নাহিদুল ১/১৭, জিয়াউর ১/১৯, মৃত্যুঞ্জয় ১/২৭)।
ফল: খুলনা বিভাগ ৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জিয়াউর রহমান।

মাহমুদুলের ব্যাটে চট্টগ্রামের জয়

একই মাঠে দিনের প্রথম ম্যাচে মাহমুদুল হাসানের অপরাজিত ৭৮ রানের সুবাদে বরিশাল বিভাগকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ১২৮ রান করেছিল বরিশাল। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন ওপেনার ইফতেখার হোসেন ইফতি। তিনে নামা ফজলে মাহমুদ করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬।

বরিশালের শুরুটা অবশ্য দারুণ হয়েছিল। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪০ রান। এরপর ইফতি ও  ফজলে মিলে যোগ করেন ৩০ রান। তবে দশম ওভারে এই জুটি ভাঙার পর অধিনায়ক সোহাগ গাজী ছাড়া (১৪ বলে অপরাজিত ১৮) আর কেউ বলার মতো কিছু করতে পারেননি।

চট্টগ্রামের ফাস্ট বোলার মেহেদী হাসান রানা ২২ রানে ৩ উইকেট নেন। বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ ছিলেন বেশ ‘কিপটে’। ৩ ওভারে ১০ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

রান তাড়া করতে নেমে চট্টগ্রামকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন মুমিনুল হক ও মাহমুদুল হাসান। তাঁদের উদ্বোধনী জুটি থেকে ৩.৩ ওভারেই আসে ৪৩ রান। মুমিনুল আউট হওয়ার পর শাহাদাত হোসেন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।

তবে এরপর সৈকত আলীর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৬৭ রানের জুটি গড়ে বাকি কাজ অনায়াসে সারেন মাহমুদুল। ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তাঁরই হাতে।

টুর্নামেন্টে এখন মাহমুদুলই সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। ৩ ম্যাচে তিনি করেছেন ১৫৫ রান। আজ ৭৮ রানের ইনিংস খেলার পথে ছাড়িয়ে গেছেন রাজশাহী বিভাগের হাবিবুর রহমানকে (৩ ম্যাচে ১২৫ রান)।

টানা তিন জয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম। ঢাকার মতোই তাদের পয়েন্ট সমান ৭। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় ঢাকা শীর্ষে আছে। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা বরিশাল এখনো কোনো জয় পায়নি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বরিশাল বিভাগ: ২০ ওভারে ১২৮/৭ (ইফতি ৩৩, ফজলে ২৬, সোহাগ ১৮*; রানা ৩/২২, মুরাদ ২/১০, রুবেল ১/১৮, হাসান ১/২৯)।
চট্টগ্রাম বিভাগ: ১৬.৩ ওভারে ১৩৩/২ (মাহমুদুল ৭৮*, সৈকত ২৩*, মুমিনুল ২২; সোহাগ ১/৩০, তানভীর ১/৩১)।
ফল: চট্টগ্রাম বিভাগ ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাহমুদুল হাসান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকরির টাকায় চলছিল না সংসার, মাটি ছাড়া চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী তাওহিদ
  • সিরাজের বোলিং তোপে দিশেহারা ক্যারিবীয়রা, ভারতের দারুণ শুরু
  • গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজে জলকামান ছুড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী
  • ম্যাচ পরিত্যক্তর আগে হাবিবুর-সাব্বির ঝড়
  • আঁখির অতিথি সৈয়দ আবদুল হাদী
  • দেবী দুর্গা শক্তি ও সাহসের মূর্ত প্রতীক: মির্জা ফখরুল 
  • কাশিপুরে বিএনপি নেতা আলমগীর ও সাইদুর গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সংঘর্ষের আশঙ্কা
  • শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ৩ রানের জয় খুলনার
  • হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ৪১ জেলার ৪৩৮টি স্থানে
  • স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করা নিয়ে বিতণ্ডা, কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে প্রথম স্ত্রী আটক