স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের সময়সীমা বাংলাদেশ চাইলে বিলম্বিত করতে পারে। এটি করা কঠিন কিছু নয়। বরং অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, অধিকাংশ এলডিসি দেশই এই সুযোগ নিয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) সেমিনারকক্ষে এলডিসির তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন বক্তারা। আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের কারিগরি সহায়তায় ও মানবাধিকার সংস্থা নাগরিক উদ্যোগ বাংলাদেশের আয়োজনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে এলডিসি ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি নিয়ে তিনজন বিশেষজ্ঞ আলোচনা করেন। তাঁরা হলেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক সানিয়া রিড স্মিথ ও রঞ্জা সেনগুপ্ত এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মেধাস্বত্ব আইনবিশেষজ্ঞ তাসলিমা জাহান।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি বিশ্লেষক সানিয়া রিড স্মিথ জানান, এলডিসি উত্তরণের প্রক্রিয়ায় তিনটি ধাপ রয়েছে। এগুলো হলো জাতিসংঘের ডেভেলপমেন্ট পলিসি কমিটির মূল্যায়ন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) অনুমোদন এবং সাধারণ পরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদন। এই তিন ধাপের যেকোনো এক জায়গায় বিলম্ব চাওয়া সম্ভব। এলডিসির জন্য নির্ধারিত সময় পেছানোর বেশ কিছু উদাহরণ আছে বলে জানান সানিয়া রিড স্মিথ। তিনি বলেন, অনেক দেশ এলডিসি উত্তরণের সময় বাড়িয়েছে। যেমন ভানুয়াতু এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রায় দেড় দশক সময় পেছাতে পেরেছে। আবার মিয়ানমার, তিমুরসহ কয়েকটি দেশ জাতিসংঘের কমিটি পর্যায়ে মানদণ্ড পূরণ করেও রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণ দেখিয়ে উত্তরণ পিছিয়েছে।

সানিয়া রিড স্মিথ বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উত্তরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বিগত সরকারের সময়। এরপর বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের রাজনীতি ও বাণিজ্যে বড় পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি গত ২০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক বাণিজ্য ধাক্কা তৈরি করেছে। এসব বিষয় বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় জানা ছিল না। ফলে এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশকে এলডিসি পেছানোর জন্য যৌক্তিকতা তৈরি করে দেয়।

অর্থনৈতিক সুবিধা হারাবে দেশ

সানিয়া রিড স্মিথ মনে করেন, এলডিসি উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুবিধা হারাবে। যেমন এলডিসি থাকার কারণে বর্তমানে ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বের বিধিনিষেধ ছাড়াই নতুন ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে। উত্তরণের পর এসব ওষুধের ওপর পেটেন্ট বাধ্যতামূলক হবে, ফলে বিনিয়োগ কমতে পারে। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা ও মেধাস্বত্বসংক্রান্ত ছাড় হারাতে হবে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন প্রশ্ন করেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ইতিবাচক সংকেত যাবে কি না। জবাবে সানিয়া বলেন, ইতিবাচক সংকেত গেলেও সেটি বিবেচ্য কিছু হবে না। কারণ, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের গবেষণা বলছে, বিনিয়োগ আসে বড় বাজার, প্রাকৃতিক সম্পদ, দক্ষ শ্রমশক্তি, অবকাঠামো ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে—দেশের ‘লেবেল’ দেখে নয়।

থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক রঞ্জা সেনগুপ্ত জানান, গত এক দশকে অন্তত ৯টি দেশ এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়েছে। এর মধ্যে কিছু দেশ দুই থেকে তিন বছর সময় নিয়েছে, আবার কিছু দেশ পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে। উত্তরণ মানে শুধু মাথাপিছু আয়ের মানদণ্ড পূরণ নয়; বরং আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্ক সুবিধা হারানোর পর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে কি না, সেটি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রস্তুতি না থাকলে তাড়াহুড়া করা ঝুঁকিপূর্ণ।

মেধাস্বত্ব আইনবিশেষজ্ঞ তাসলিমা জাহান বলেন, এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মেধাস্বত্বে (আইপিআর) কিছু বিশেষ শিথিলতা বা ছাড় পেত। উত্তরণের পর এসব সুবিধা ধীরে ধীরে সীমিত বা বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে আইপিআর–সংক্রান্ত অবকাঠামো ও মান এখনো পুরোপুরি শক্তিশালী নয়। ফলে আমরা সেই চাপ কতটুকু মোকাবিলা করতে পারব, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সময় এলড স

এছাড়াও পড়ুন:

গোলাপের স্ত্রী গুলশান আরার বিরু‌দ্ধে মামলা কর‌বে দুদ‌ক

নির্ধা‌রিত সময়সীমার মধ্যে সম্পদের হিসাব না দেওয়ায় আওয়ামী লী‌গের সা‌বেক দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপের স্ত্রী গুলশান আরা মিয়ার বিরু‌দ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশন।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুদ‌কের মহাপ‌রিচালক আক্তার হো‌সেন এ তথ‌্য জানান।

আরো পড়ুন:

মাদারীপুরে কবরস্থানে বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান

পলাতক থাকলেও বিদেশে টাকা পাচার অব্যাহত জাবেদের: দুদক

তি‌নি ব‌লেন, “গুলশান আরা মিয়ার বিরু‌দ্ধে জ্ঞাত আয় ব‌হির্ভূত সম্পদ অর্জ‌নের অভিযোগ খ‌তি‌য়ে দেখ‌তে নির্ধা‌রিত সম‌য়ে সম্প‌দের হিসাব দি‌তে বলা হলেও তি‌নি জমা দেন‌নি। ফ‌লে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় (১) একটি মামলা রুজুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”

দুদক জানায়, আওয়ামী লী‌গের সা‌বেক দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপের স্ত্রী গুলশান আরা মিয়ার বিরু‌দ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জ‌নের অভিযোগ উঠে। অভিযোগ আম‌লে নি‌য়ে অনুসন্ধান শুরু ক‌রে ক‌মিশন। এক পরিচালক এর সমন্বয়ে দুই সদস্য বিশিষ্ট টিমও গঠন করা হয়। অনুসন্ধা‌নের এক পর্যা‌য়ে গোলা‌পের স্ত্রীর অর্জিত সম্পদের পরিমাণ, সম্পদ অর্জনের উৎস ও উৎসসমূহের সঠিকতা বা যথার্থতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরুপণে কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা অনুযায়ী গত  ১৫ এপ্রিল তা‌কে সম্প‌দের হিসাব দা‌খি‌লের নো‌টিশ দেওয়া হয়। নো‌টিশ পে‌য়ে তি‌নি সম্পদ বিবরণীর দাখিলের সময় বৃদ্ধির জন্য গত ২৩ জুলাই আবেদন করেন।

আবেদনের প্রেক্ষিতে পূর্বোক্ত সময়সীমার ধারাবাহিকতায় আরো ১৫ কার্যদিবস সময় বর্ধিত করা হয়। বর্ধিত ২১ আগস্টের মধ্যে তার সম্পদ বিবরাণী দাখিলের সময় শেষ হয়ে গেলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুলশান আরা মিয়া সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি। কিন্তু তিনি নির্ধারিত ও বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ প্রাপ্তির পর তদনুযায়ী লিখিত বিবৃতি বা তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় (০১) একটি মামলার অনুমোদন দেয় দুদক।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোলাপের স্ত্রী গুলশান আরার বিরু‌দ্ধে মামলা কর‌বে দুদ‌ক