শেয়ারবাজারে বিও হিসাব খুলবেন কীভাবে, কী কী লাগে
Published: 12th, August 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে একটি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব খুলতে হবে। এই হিসাব খুলতে হবে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসে। ব্যাংকে টাকা জমা বা ঋণ নিতে যেমন ব্যাংক হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক, তেমনি শেয়ারবাজারে শেয়ার কেনাবেচায়ও বিও হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক।
কোনো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর শেয়ার হোক বা সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেন, উভয় ক্ষেত্রেই বিও হিসাব ছাড়া শেয়ার কেনাবেচা কোনোটাই করা যাবে না।
সাধারণত ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে বিও হিসাব খুলতে হলেও মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমেও বিও হিসাব খোলা যায়। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের সঙ্গে সমন্বয় করে এই বিও হিসাব খুলে থাকে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি বড় জেলা শহরেও ব্রোকারেজ হাউসের শাখা রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনেও বিও হিসাব খোলার ব্যবস্থা রয়েছে শেয়ারবাজারে।
কী কী লাগবেব্যাংক হিসাবের মতো বিও হিসাব খোলার ক্ষেত্রেও কিছু কাগজপত্র লাগে। এসব কাগজপত্র ছাড়া বিও হিসাব খোলা যায় না। এবার দেখা যাক, কী কী কাগজপত্র ও তথ্য লাগে।
১.
২. মুঠোফোন নম্বর ও ই–মেইল
৩. পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি
৪. কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদের কপি
৫. ব্যাংক হিসাবের সাধারণ তথ্য
৬. পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রীর নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্য
৭. নমিনির তথ্য, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ছবি
খরচ কতবিও হিসাব খুলতে সার্ভিস চার্জ হিসেবে কিছু টাকা খরচ হয়। ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকভেদে এর পরিমাণ কিছু কমবেশি হয়। তবে মোটাদাগে বিও হিসাব খোলার খরচ এক হাজার টাকার মধ্যে থাকে।
বিও হিসাব কেন লাগেবেশ কয়েকটি কারণে শেয়ারবাজারে লেনদেনে বিও হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে—
১. শেয়ার কেনাবেচার রেকর্ড রাখার জন্য বিও হিসাব লাগে। আগে কাগুজে শেয়ার ছিল। এখন প্রায় সব শেয়ার অনলাইনে ডিম্যাট ফর্মে থাকে। বিও অ্যাকাউন্ট ছাড়া আপনার শেয়ার আপনার হিসাবভুক্ত হবে না।
২. ডিভিডেন্ড ও বোনাস শেয়ার পেতে সুবিধা হয়। কোম্পানির লভ্যাংশ, বিশেষ করে বোনাস লভ্যাংশ জমা হয় সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে। আর নগদ লভ্যাংশ জমা হয় বিও হিসাবের সঙ্গে দেওয়া ব্যাংক হিসাবে।
৩. শেয়ার কেনাবেচা সহজ হয়। আপনি ব্রোকার বা অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে শেয়ার কিনলে সেই শেয়ার জমা হবে বিও হিসাবে আর বিক্রি করলে বিও হিসাব থেকে ওই শেয়ার বাদ যাবে।
মুঠোফোন ও ই-মেইল কেন জরুরিবিও হিসাব খোলার ক্ষেত্রে আপনার মুঠোফোন ও ই-মেইল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আপনার বিও হিসাবে কোনো শেয়ার কেনাবেচা হলে তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মুঠোফোনে বার্তা যাবে। আবার আপনার বিও হিসাবে শেয়ার লেনদেনের হালনাগাদ চিত্র নিয়মিত আপনার ই-মেইল ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয় ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক। এতে আপনি নিজের বিনিয়োগ সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানাতে পারবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যবিত্তের ভরসা সঞ্চয়পত্র: কোনটিতে কত মুনাফা
বিনিয়োগের জন্য মধ্যবিত্তের অন্যতম পছন্দ সঞ্চয়পত্র। এ বিনিয়োগ নিরাপদ ও মুনাফার হারও বেশি। ব্যাংকে টাকার রাখার চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। এমন চিন্তা থেকে অনেকেই সঞ্চয়পত্র কেনেন। অনেকে সংসার খরচের একটা অংশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে জোগান দেন। ফলে সঞ্চয়পত্র এখন সামাজিক সুরক্ষার অংশও হয়ে গেছে।
বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চার ধরনের সঞ্চয় আছে। এগুলো হলো পরিবার সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। এসব সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও কাছাকাছি। তবে সঞ্চয়পত্রভেদে ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। আছে শর্ত। তাই মুনাফার হারের পাশাপাশি অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে সঞ্চয়পত্র কিনতে হবে। ভাবতে হবে, কোনটি আপনার জন্য বেশি লাভজনক।
মুনাফা কত
এবার দেখা যাক, কোন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কত। এখানে বলা প্রয়োজন, গত জুলাই মাস থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়েছে সরকার।
দেশে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের যত ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছরের মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ করা হয়েছে।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পঞ্চম বছর শেষে, অর্থাৎ মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার সবচেয়ে বেশি।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এ ছাড়া তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙলে মুনাফা কমে যায়। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র না ভাঙাই ভালো।
কে কত বিনিয়োগ করতে পারবেন
সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নারীরাই কিনতে পারবেন। তবে যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ এবং ৬৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকের পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ আছে।
একক নামে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। কিনতে পারবেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ও মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী বা স্ত্রী বা সন্তান।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কেনায় সীমা হলো ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৩০ লাখ টাকা অথবা যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভবিষ্য তহবিলে মোট স্থিতির ৫০ শতাংশ। তবে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকার কেনা যাবে।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কেনায় সীমা হলো ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৩০ লাখ টাকা অথবা যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা হলো ভবিষ্য তহবিলে মোট স্থিতির ৫০ শতাংশ। তবে তা হবে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে এই সীমা ফার্মের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা এবং অটিস্টিক সহায়ক প্রতিষ্ঠান, দুস্থ ও অনাথ শিশুদের নিবন্ধিত আশ্রয় প্রতিষ্ঠান (অনাথ আশ্রম, শিশু পরিবার, এতিমখানা ইত্যাদি) এবং প্রবীণদের জন্য নিবন্ধিত আশ্রয়কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা।
কোথায় পাওয়া যায়
জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও ডাকঘর থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো যায়।