‘তোমাদের কাছে ফিলিস্তিনকে আমানত রেখে যাচ্ছি’
Published: 12th, August 2025 GMT
গাজায় আলজাজিরার সাংবাদিক আনাস আল শরিফ রবিবার (১০ আগস্ট) রাতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিশ্ববাসীর জন্য তিনি একটি শক্তিশালী বার্তা রেখে গেছেন। সংবাদের বাইরে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার সারকথা রয়েছে তার এই বার্তায়, যেটিকে তার শেষ বার্তা বলা হচ্ছে।
এই শেষ বার্তায় আনাস আল শরিফ প্রতিশ্রুতি ব্যক্তি করে গেছেন, বলে গেছেন- মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও তিনি তার জনগণের অবিচল কণ্ঠস্বর হয়ে থাকবেন এবং গাজার দুঃখ-কষ্ট ও স্বাধীনতার আশার সত্যকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেবেন।
জন্মভূমির প্রতি, নিজভূমের মানুষের প্রতি, গাজার সন্তানদের প্রতি; বিশ্ববাসীর প্রতি এই বছরের এপ্রিলে আনাস আল শরিফ তার শেষ ইচ্ছা জানিয়ে যান। ইসরায়েল তাকে হত্যার পর আনাসের সহকর্মীরা তার বার্তাটি এক্সে পোস্ট করেছেন।
সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’ আনাস আল শরিফের বার্তাটি হুবহু ও বিনা সম্পাদনায় পুনঃপ্রকাশ করছে:
এটি আমার আকাঙ্ক্ষা এবং আমার শেষ বার্তা। যদি এই কথাগুলো তোমাদের কাছে পৌঁছায়, জেনে রেখো, ইসরায়েল আমাকে হত্যা করতে এবং আমার কণ্ঠস্বর নীরব করতে সফল হয়েছে।
প্রথমেই, তোমাদের প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আল্লাহ জানেন, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের গলিপথ ও রাস্তায় চোখ মেলবার পর থেকেই আমি আমার সর্বশক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে আমার জনগণের কণ্ঠ ও অবলম্বন হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার আশা ছিল, আল্লাহ আমার আয়ু বাড়িয়ে দেবেন, যাতে আমি আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে আমাদের মূল শহর দখলকৃত আসকালানে (আল-মাজদাল) ফিরে যেতে পারি। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাই আগে এসেছে, আর তার ফয়সালা চূড়ান্ত।
আমি জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটিতে যন্ত্রণা অনুভব করেছি, বহুবার দুঃখ-কষ্ট ও হারানোর স্বাদ পেয়েছি। তবু আমি কখনো সত্যকে যেমন আছে তেমনভাবে তুলে ধরতে দ্বিধা করিনি; বিকৃত বা ভ্রান্ত না করে, যাতে আল্লাহ সাক্ষী থাকেন তাদের বিরুদ্ধে, যারা নীরব থেকেছে, যারা আমাদের হত্যাকে মেনে নিয়েছে, যারা আমাদের নিঃশ্বাস রুদ্ধ করেছে, আর যাদের হৃদয় আমাদের শিশু ও নারীদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহাবশেষে নড়েনি; যারা কিছুই করেনি এই গণহত্যা থামাতে, যা আমাদের জনগণ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে সহ্য করছে।
আমি তোমাদের কাছে ফিলিস্তিনকে আমানত রাখছি, যা মুসলিম বিশ্বের মুকুটের রত্ন, সারা বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন মানুষের হৃদস্পন্দন।
আমি তোমাদের কাছে আমানত রাখছি এর জনগণকে, এর অবিচারপীড়িত ও নির্দোষ শিশুদের, যারা স্বপ্ন দেখার বা নিরাপদে শান্তিতে বাঁচার সুযোগই পায়নি। তাদের পবিত্র দেহ হাজার হাজার টন ইসরায়েলি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের নিচে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে, ছিন্নভিন্ন হয়ে দেয়ালে ছিটকে পড়েছে।
আমি তোমাদের অনুরোধ করছি— শৃঙ্খল যেন তোমাদের নীরব না করে, সীমানা যেন তোমাদের আটকাতে না পারে। তোমরা যেন সেতু হও, এই ভূমি ও এর জনগণের মুক্তির পথে; যতক্ষণ না মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য আমাদের লুট হয়ে যাওয়া মাতৃভূমির আকাশে উদিত হয়।
আমি তোমাদের কাছে আমার পরিবারকে আমানত রাখছি। আমি তোমাদের কাছে আমার প্রিয় কন্যা শামকে আমানত রাখছি, যে আমার চোখের আলো; যাকে আমি আমার স্বপ্নের মতো বড় হতে দেখতে কখনোই পারিনি। আমি তোমাদের কাছে আমার প্রিয় পুত্র সালাহকে আমানত রাখছি, যাকে আমি জীবনপথে সমর্থন দিতে এবং তার শক্তি বাড়িয়ে তুলতে চেয়েছিলাম, যাতে সে আমার বোঝা বহন করে মিশন চালিয়ে যেতে পারে।
আমি তোমাদের কাছে আমার প্রিয় মাকে আমানত রাখছি, যার বরকতময় দোয়া আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছে, যার প্রার্থনা ছিল আমার দুর্গ, আর যার আলো আমার পথ প্রদর্শন করেছে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাকে শক্তি দান করেন এবং আমার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেন।
আমি আমার জীবনসঙ্গিনী, প্রিয় স্ত্রী উম্মে সালাহকেও (বায়ান) তোমাদের কাছে আমানত রাখছি, যার কাছ থেকে যুদ্ধ আমাকে দীর্ঘদিন ও মাস আলাদা করে রেখেছে। তবু সে আমাদের সম্পর্কের প্রতি অনুগত থেকেছে, জলপাই গাছের কাণ্ডের মতো অবিচল থেকেছে; ধৈর্যশীল, আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা, আর আমার অনুপস্থিতিতে পূর্ণশক্তি ও ঈমান নিয়ে দায়িত্ব বহন করা।
আমি তোমাদের আহ্বান করছি, তোমরা যেন তাদের পাশে থাকো, আল্লাহ সর্বশক্তিমানের পর তাদের অবলম্বন হও।
যদি আমি মারা যাই, তবে আমি আমার নীতিতে অবিচল থেকে মরব। আমি আল্লাহর সামনে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি তার ফয়সালায় সন্তুষ্ট, তার সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে নিশ্চিত এবং নিশ্চিত যে, আল্লাহর কাছে যা আছে তা-ই উত্তম ও চিরস্থায়ী।
হে আল্লাহ, আমাকে শহীদদের কাতারে কবুল করুন, আমার অতীত ও ভবিষ্যতের গোনাহ মাফ করুন, আর আমার রক্তকে এমন আলো বানান, যা আমার জনগণ ও পরিবারকে স্বাধীনতার পথে আলোকিত করবে। যদি আমি কোনো ক্ষেত্রে ত্রুটি করে থাকি, তবে আমাকে ক্ষমা করুন, আর আমার জন্য রহমতের দোয়া করুন, কেননা আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি এবং কখনো তা পরিবর্তন বা বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।
গাজাকে ভুলে যেও না… আর আমাকে ভুলে যেও না; তোমাদের আন্তরিক ক্ষমা ও কবুলিয়াতের দোয়ায়।
আনাস জামাল আল-শরিফ
০৬.
০৪.২০২৫
ঢাকা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জনগণ আম দ র আল ল হ আম র প আম র জ
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগের লকডাউন, অগ্নিসন্ত্রাস ও ‘রাজনৈতিক মৃত্যু’
কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচির দিন ঢাকা শহরের অনেক মানুষ বাইরে বের হওয়ার সাহস করেননি। কিছু বিচ্ছিন্ন ককটেল বিস্ফোরণ আর যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা এই ভয়কে আরও ঘনীভূত করে।
এই থমথমে পরিবেশকে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা ‘নীরব বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছেন; কিন্তু আসলেই কি এটা বিপ্লব? আদতে এটা তো ছিল ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে স্থবিরতা সৃষ্টি, যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ দলটি কতটা জনবিচ্ছিন্ন এবং তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু কতটা আসন্ন।
এই ভয়ের বিপরীতে মাত্র এক বছর আগের জুলাই-আগস্ট মাসের স্মৃতি এখনো আমাদের মনে উজ্জ্বল। সেদিন ঢাকার রাজপথ ছিল লোকে লোকারণ্য। দেশের প্রায় সব শহরেও নেমে এসেছিল মানুষ। কোনো দলের ডাকে নয়, কোনো রাজনৈতিক নেতার আহ্বানে নয়, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী আর আপামর জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছিলেন রাস্তায়।
কোটা সংস্কারের মতো একটি নির্দিষ্ট দাবি থেকে শুরু হওয়া সেই আন্দোলন অল্প দিনেই রূপান্তরিত হয়েছিল স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এক গণ-অভ্যুত্থানে। সেই আন্দোলনে ছিল গণমানুষের শক্তি, সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার তেজ।
জুলাই দেখিয়েছিল, জনগণ রাস্তায় নেমে এলে রাষ্ট্রযন্ত্রও তাকে থামাতে পারে না। সেই গণ–অভ্যুত্থানের দেড় বছর পর ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি দেখাল, ভয় দেখিয়ে মানুষকে হয়তো সাময়িকভাবে ঘরে আটকে রাখা যায়, কিন্তু তাদের মন জয় করা যায় না। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার দুটি ভিন্ন মেরু স্পষ্ট যে —একটি গণশক্তির উত্থান, অন্যটি একটি দলের রাজনৈতিক দর্শনের দেউলিয়াত্ব।
‘লকডাউন’ ব্যর্থতার ব্যবচ্ছেদ: ভয় যখন অস্ত্রআওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সবকিছু স্বাভাবিক রাখার আশ্বাস সত্ত্বেও মানুষ কার্যত ‘ঘরবন্দী’–ই ছিল। গত কয়েক দিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ২৫টির অধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও অনেক জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা জনমনে যে আতঙ্ক তৈরি করেছিল—স্কুল-কলেজ একরকম বন্ধই ছিল, ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলতে দ্বিধায় ভোগেন এবং সাধারণ মানুষ গণপরিবহন এড়িয়ে চলে। ঢাকার আশপাশে কিছু এলাকায়ও অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগ এই পরিস্থিতিকে তাদের কর্মসূচির সাফল্য হিসেবে দেখতে চেয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জনগণ কি তাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘরে বসে ছিল, নাকি আগুন–সন্ত্রাসের ভয়ে? উত্তরটি স্পষ্ট। একজন সাধারণ বাসচালককে বলতে দেখলাম, ‘দৈনিক আয়ে আমার পরিবার চলে, কিন্তু আমি আহত হলে বা মারা গেলে আমার সন্তান ও পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে? তাই গাড়ি বের করিনি।’ যখন একটি রাজনৈতিক দল জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে, ভীতি সৃষ্টি করে তাদের কর্মসূচি সফল করতে চায়, তখন বুঝতে হবে মূলধারার, রাজনীতিতে তাদের প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুনদ্য উইকে শেখ হাসিনার নিবন্ধ, অস্বীকারের রাজনীতি ও অসত্য চর্চার নমুনা১৪ নভেম্বর ২০২৫এ উল্লাস কি রাজনৈতিক মৃত্যুর উদ্যাপন নয়?ইতালীয় তাত্ত্বিক আন্তোনিও গ্রামশির তত্ত্ব অনুযায়ী, যখন কোনো রাজনৈতিক শক্তির প্রতি জনগণের সম্মতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে, তখন টিকে থাকার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় ভয় ও নিপীড়ন। ১৩ নভেম্বরের ‘লকডাউন’ প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগ গণমানুষের সমর্থন হারিয়ে এখন কেবল ভীতি প্রদর্শনের পথেই হাঁটছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাশকতার অভিযোগে আটক ব্যক্তির অনেকেই ঢাকার বাইরের এবং অর্থের বিনিময়ে কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসেছিলেন। ডিএমপি কমিশনারের ভাষ্যমতে, ‘অধিকাংশই রাজধানীর বাইরে থেকে আসা। অর্থের বিনিময়ে তাঁরা ঢাকায় এসে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করে আবার ঢাকার বাইরে চলে যান।’
টিভি চ্যানেলগুলোর ভিডিও প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর ওপারে আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকায় তাদের ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে দেখা গেছে, প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র, হাতে ককটেল নিয়ে মিছিল করেছেন তাঁরা। সহিংস মনোভাবের বিষয়টি লুকানোরও প্রয়োজন মনে করেননি সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, এমনকি আওয়ামী মহলের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও তাঁদের নেতা-অ্যাকটিভিস্টদের ফেসবুক পোস্ট থেকেও স্পষ্ট হয় যে এটি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নয়; বরং ভাড়া করা শক্তি দিয়ে আতঙ্ক তৈরির একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা, যা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকেই স্পষ্ট করে তোলে।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা কি তাহলে পুলিশের ওপরই সব দায় চাপিয়ে দিলেন০৬ নভেম্বর ২০২৫স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন বনাম গণবিরোধী আন্দোলনসারা বিশ্বে তরুণ প্রজন্ম যেভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থান ছিল তারই এক শক্তিশালী উদাহরণ। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কেবল সংগঠিত হওয়ার জন্য ব্যবহার করেনি; বরং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের প্রতিটি মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিল।
জুলাইয়ের আন্দোলনের মতো স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন এ দেশে আগেও নানা ইস্যুতে হয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক ইস্যুতে ছোট-বড় অনেক স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনই এ দেশে নতুন নয়। বিপরীতে, ১৩ নভেম্বরের ‘লকডাউন’ ছিল একটি শীর্ষ পর্যায় থেকে চাপিয়ে দেওয়া কর্মসূচি। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলীয় নেত্রীর বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা। এই কর্মসূচিতে জনগণের আবেগ বা সমর্থন কোনোটাই ছিল না। মরিয়া হয়ে কর্মসূচি সফল করতে পুরোনো ভিডিও বিকৃতভাবে উপস্থাপন, এআই দিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেও এ ‘লকডাউন’ জনভিত্তি পায়নি। জুলাইয়ের আন্দোলন যেখানে প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেখানে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি দাঁড়িয়েছিল গুজব আর ভীতি প্রদর্শনের ওপর।
১৩ নভেম্বরের জনশূন্য ঢাকা আসলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শনের এক করুণ প্রতিচ্ছবি। আওয়ামী লীগ আজ এতটাই জনবিচ্ছিন্ন যে ভয় দেখিয়ে নিজেদের কর্মসূচির ‘সাফল্য’ উদ্যাপন করতে হচ্ছে। এই ফাঁকা রাজপথ তাদের বিজয়ের চিহ্ন নয়; বরং রাজনৈতিক মৃত্যুর শোকলিপি।অতীতে সহিংস রাজনীতির ব্যর্থতাসহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি বাংলাদেশে নতুন নয়। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার অবরোধকে কেন্দ্র করে অগ্নিসন্ত্রাসের স্মৃতি এখনো মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। সেই সময়েও সাধারণ মানুষ এ অগ্নিসন্ত্রাসের প্রধান শিকার হয়েছিল।
কিন্তু বিএনপি–জামায়াতের সেই অবরোধ আন্দোলন সফল হয়নি। কারণ, তাতে গণমানুষের সমর্থন ছিল না; বরং সেসময়ের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরও ক্ষমতাশালী হতে সাহায্য করেছিল।
শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর হস্তে দমন করার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং নিজেকে স্থিতিশীলতার জন্য অত্যাবশ্যক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এভাবে বিরোধী দলের কিছু ভুল রাজনৈতিক কৌশল শেখ হাসিনাকে ধীরে ধীরে স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হওয়ার পথ সুগম করে দিয়েছিল। এরপর আমরা দেখতে পাই পরের ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যেখানে ভিন্নমতকে দমন করা হতো এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ আজ সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে। তারা ভুলে গেছে যে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন করে জনসমর্থন আদায় করা যায় না; বরং তা বুমেরাং হয়ে নিজেদের দিকেই ফিরে আসে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার ভোরে গাজীপুর নগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকায়