ঝিনাইদহে বিদ্যালয়ে সহকর্মীর হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত, পদত্যাগ দাবি
Published: 12th, August 2025 GMT
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর নারায়ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহেল রানার বিরুদ্ধে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতেই বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
আরো পড়ুন:
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগের দাবিতে মানববন্ধন
জবিতে র্যাগিংয়ের নামে ‘অমানবিক’ নির্যাতনের অভিযোগ
বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার সকালে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা কয়েকজন অতিথির সাথে কথা বলছিলেন। এজন্য ক্লাসে যেতে তার কিছুটা দেরি হয়। এ নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল লতিফকে গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ জানালে অভিযুক্ত শিক্ষক সোহেল রানা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার পরই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় সুশীল সমাজ অভিযুক্ত সোহেল রানাকে বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেন। পরে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা ১ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, শিক্ষার্থীদের মারধর, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত তিনি একাধিক শিক্ষকের গায়ে হাত তুলেছেন। রাজনৈতিক প্রভাবে কারণে তাকে কেউ কিছু বলতে পারেনি।
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিশাত বলেন, “গতকাল লতিফ স্যারের ক্লাস ছিল না। কিন্তু রানা স্যার লতিফ স্যারকে বকাঝকা করেন। এক পর্যায়ে সোহেল রানা স্যার লতিফ স্যারকে চড় মারেন এবং ধাক্কা মেরে ফেলে দেন।”
সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেন, “একটা প্রোগ্রামের কারণে সব শিক্ষকরা মিলে কিছু কাজ করছিলাম। সে সময় সব শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সোহেল রানা খারাপ ভাষায় কথা বলেন। তখন আমি তাকে খারাপ ভাষায় কথা বলতে নিষেধ করি। এজন্য তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে চড় মারেন এবং ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
তবে সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা বলেন, “শিক্ষকরা ক্লাসে না গিয়ে অন্য কাজ করছিল। ক্লাসের ২৫ মিনিট সময় পার হয়ে গেলেও তারা ক্লাসে না গিয়ে গল্প করছিল। এ সময় আমি শিক্ষকদের ক্লাসে যেতে বলি। কিন্তু লতিফ স্যার আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলেন। তখন আমি লতিফ স্যারকে বলি আপনি এমনভাবে কথা বলছেন কেন। তখন তিনি আমার দিকে আরো উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে এলে আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়। মারধর বা কোন লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেনি।”
তিনি বলেন, “বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং সব শিক্ষকরা মিলে মিটিং হসেছে। সেই মিটিংয়ে আমি লতিফ স্যারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। এরপর আমার টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের বিরিয়ানীও খেতে দিয়েছি। কারো মাঝে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আজ তৃতীয় পক্ষ ষড়যন্ত্র করে শিক্ষার্থীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ বলেন, “সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা বিগত সময়েও শিক্ষকদের সঙ্গে এমন আচরণ করছে। সোমবার সকালে সব ক্লাস শেষে শিক্ষকরা মিলে একটা প্রোগ্রাম নিয়ে কথা বলছিলাম। এ সময় সোহেল রানা শিক্ষকদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। সে সময় সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ প্রতিবাদ করলে তার উপর চড়াও হয়। তার মুখে চড় মারে এবং লাথি মেরে ফেলে দেয়।”
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আরশাদ আলী বলেন, “বিদ্যালয়ের শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন দিলে আমি স্কুলে আসি। আব্দুল লতিফ এবং সোহেল রানার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানতে পারি। বিস্তারিত জানার পর সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জরুরিভাবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির একটা মিটিং ডাকা হয়েছে। বাকি সিদ্ধান্ত মিটিং থেকেই নেওয়া হবে।”
ঢাকা/শাহরিয়ার/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র শ ক ষকর র সহক র সব শ ক
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্নীতিগ্রস্ত উপদেষ্টাদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এনসিপি
বিরোধীদের নিয়ে কড়া বাক্য উচ্চারণের জন্য বহুল আলোচিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য রীতিমতো শঙ্কার বার্তা নিয়ে হাজির হলেন।
দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেছেন, “বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। অনেকের আত্মীয়-স্বজনের খবর আমরা পাচ্ছি। উপদেষ্টাদের কে কে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তা জনগণের সামনে আনতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এনসিপি।”
আরো পড়ুন:
বক্স অফিসে ‘ওজি’ সিনেমার দাপট: কে কত টাকা পারিশ্রমিক নিলেন?
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভারতের ভিসা জটিলতা কমবে: হাইকমিশনার
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতীক ইস্যুতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নাসীরুদ্দীন।
যে প্রতীক ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে, সে বিষয়ে জোর দিয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, “শাপলা পেতে কোনো আইনি বাঁধা দেখছি না। এখানে ইসি স্বৈরাচারী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। প্রতীক প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যাখ্যা দিয়েই কমিশনকে যেতে হবে।”
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “এনসিপির সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে ইসি। তারা একটি দলের পক্ষ নিয়ে তাদের সুবিধা দিচ্ছে।”
রাকঢাক ছাড়াই অভিযোগের তীর ছুড়ে নাসীরুদ্দীনের সোজা কথা, “অসাংবিধানিক আচরণের জন্য ইসি কমিশনারের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নে গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হওয়ার আলোচনার প্রসঙ্গ এলে এক্ষেত্রেও সেটি সরাসরি খারিজ করে দিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “একীভূত হওয়ার সুযোগ নেই। এনসিপিতে যোগ দিতে হলে সদস্য ফরম পূরণ করতে হবে। নির্বাচনেও এনসিপির হয়েই দাঁড়াতে হবে।”
অবশ্য এনসিপির অন্য নেতারা বলে আসছেন, একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। কোনো সিদ্ধান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন তারা।
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতাকে চ্যালেঞ্জন করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “আওয়ামী লীগ, ভারত, বিএনপি ও নির্বাচন কমিশন সব এক পক্ষে। এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব।”
বিএনপির বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, দলটি ভারতের পক্ষে কাজ করছে, তাদের বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করার আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজনীতির মাঠে বিরোধীদের নিয়ে কড়া বাক্য উচ্চারণ করায় এনসিপির নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাসীরুদ্দীন। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছিলেন, আগে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান ছিল, এখন শুনছি কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে।
নাসীরুদ্দীনের ওই মন্তব্যের জেরে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয় সালাহউদ্দিন আহমেদের জন্মভূমি কক্সবাজারের চকরিয়ায়।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল