বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্ররাজনীতির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হয়েছে। ফলে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভয়ের মধ্যে আছেন। শিক্ষার্থীদের সেই ভয়কে কাজে লাগিয়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বর্তমানে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতি করার চেষ্টা হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে ‘ছাত্ররাজনীতির সংস্কার বিষয়ে ক্যাম্পাসে সামাজিক চুক্তির লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনসমূহের রাজনৈতিক সংলাপ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ছাত্রসংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন। ডাকসু ভবনের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এ সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির সংস্কারের জন্য ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ৯ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাব পাঠ করেন ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক সজীব হোসেন।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বাধ্যতামূলক করে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা, ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও অপরাধের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করা, অনলাইন অপপ্রচার ও মানহানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, সব ছাত্রসংগঠনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সেল গঠন করা, হলের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে রেখে আবাসিক হলে রাজনীতি চালু রাখা, জুলাই অভ্যুত্থানে হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা।

ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে সংলাপে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয় বা ট্রমাকে কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতি করার চেষ্টা হচ্ছে।’
গত এক বছরে ছাত্রদল পেশিশক্তির রাজনীতি দেখায়নি দাবি করে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করলে নানা সমস্যা দাঁড়িয়ে যাবে। রাজনীতি না থাকলে নিষিদ্ধ ও গুপ্ত রাজনীতির কার্যক্রম চালাতে সুবিধা হবে। সে কারণেই সম্প্রতি ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে আন্দোলন হলো।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিগত সময়ে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হয়েছে। অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে প্রত্যাশা ছিল সিট দখল, চাঁদাবাজি, নিপীড়নের রাজনীতি ফিরে আসবে না। এই চাওয়াগুলো কতটুকু পূরণ হবে, তা নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর। কিন্তু এখনো আবাসনসংকট নিরসন করা হচ্ছে না। এ কারণে আবাসনসংকটের সুযোগ নিয়ে অনেকেই অপরাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে।’

ক্যাম্পাসে ইতিবাচক ছাত্ররাজনীতি দেখতে চায় উল্লেখ করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, ‘ভবিষ্যতে ছাত্ররাজনীতি কীভাবে চলবে, সেই বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর একটি জায়গায় আসার লক্ষ্যে আজকের সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলে থাকতে হবে। তবে সেটি কোন কাঠামোয় পরিচালিত হবে, সেটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির সংস্কৃতি পরিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠন—সব পক্ষের দায়িত্ব পালন করা জরুরি। হলের আসন বণ্টন থেকে শুরু করে সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে। প্রশাসনের জায়গায় কোনো ছাত্রসংগঠন দায়িত্ব নিলে নতুন করে ফ্যাসিজমের জায়গা তৈরি হবে।

সংলাপে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সানাউল্লাহ হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে বর্তমান উপাচার্যকেই উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন করে কোনো সংগঠন যেন ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে উপাচার্যকেই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব সাকিবুর রনির সঞ্চালনায় সংলাপে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমা, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আমিরুল করিম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামির ফাইয়াজ, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় শাখার সদস্য সীমা আক্তার বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর জন ত র জন ত র র র জন স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ