ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ও কামান থেকে চালানো হামলায় তছনছ হচ্ছে গাজা সিটির উত্তরাঞ্চল। রাতভর অঞ্চলটি কেঁপে কেঁপে উঠছে বিস্ফোরণের শব্দে। গত সোমবার রাতে সেখানে হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। আর গতকাল মঙ্গলবার থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে হত্যা করা হয়েছে ৮৯ ফিলিস্তিনিকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছিল। জুলাইয়ের শেষ দিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে আলোচনা থেকে সরে যায় দুই পক্ষ। এরপর গাজা সিটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে ইসরায়েল সরকার। তখন থেকেই সেখানে তীব্র হামলা চলছে। কত দিন এই হামলা চলবে, তা স্পষ্ট করেনি ইসরায়েল।

গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৮৯ জনের মধ্যে ৩১ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫১৩ জন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৫৯৯ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।

হতাহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় সবাই বেসামরিক মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে গাজা সিটির জাইতুন এলাকায় দুটি বাড়ি ও মধ্যাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ১১ জন নিহত হন। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি বাড়িতে হামলায় এক শিশু ও তার মা–বাবাসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। মাওয়াসি উপকূলে নিহত হয়েছেন চারজন।

তবে ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, গাজার বেসামরিক মানুষের হতাহত হওয়ার সংখ্যা যতটা সম্ভব কমাতে চাচ্ছে তারা। গতকাল তারা বলেছে, আগের মাসে উত্তর গাজায় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাজুড়ে সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধানও। তাঁর মতে, এতে গাজায় বেঁচে থাকা জিম্মিদের জীবন হুমকিতে পড়বে। এ ছাড়া এমন পরিকল্পনা ইসরায়েলি সেনাদের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হতে পারে। গাজায় বর্তমানে প্রায় ৫০ জন জিম্মি বন্দী আছেন। তাঁদের ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হয়।

এদিকে খাবারের চরম সংকটের কারণে গাজায় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গতকাল ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজায় না খেতে পেয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুটি শিশু। এ নিয়ে সংঘাত শুরুর পর থেকে অনাহারে ২২৭ জনের মৃত্যু হলো। তাঁদের মধ্যে শিশু ১০৩।

কায়রোয় যাবেন হামাস নেতা

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা আবার শুরু করতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় যাচ্ছেন হামাস নেতা খলিল আল–হায়া। আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরতে প্রস্তুত রয়েছেন হামাস নেতারা।

তবে যুদ্ধবিরতির মূল শর্তগুলো নিয়ে এখনো হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং হামাসের অস্ত্র ত্যাগের মতো শর্তগুলো। তবে স্বাধীন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র না প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠনটি।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আরবের একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর এখনো আলোচনা আবারও শুরুর আশা ত্যাগ করেনি। আর গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নতুন করে অভিযান শুরুর যে পরিকল্পনা, তা হামাসকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্যও হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯

ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।

দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।

আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।

স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪০ ঘণ্টা পর এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ আরেকজন
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
  • গরুর গোবর কুড়ানো থেকে সাত তারকা হোটেলে, জয়দীপের গল্প জানেন কি
  • টর্চলাইট
  • স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক
  • গাজীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার
  • খাগড়াছড়ির ঘটনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
  • ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করার নির্দেশ দিলো আদালত
  • ‘মোটা জেনারেলদের’ কড়া সমালোচনা করলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা হেগসেথ
  • ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯