গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত ও ঢালাও অভিযোগের প্রতিবাদ সম্পাদক পরিষদের
Published: 13th, August 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলনে গণমাধ্যম সম্পর্কে ঢালাওভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযোগ তোলার প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সব পক্ষকে তথ্যভিত্তিক ও দায়িত্বশীল বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্পাদক পরিষদ উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছে যে আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’ আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’-এ গণমাধ্যম সম্পর্কে ঢালাওভাবে একগুচ্ছ অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযোগ তোলা হয়েছে। সম্মেলনে অভিযোগ আনা হয়েছে ‘গণমাধ্যম গণ–অভ্যুত্থানে জড়িতদের চরিত্রহননের চেষ্টা করছে’ এবং শেখ হাসিনার স্বৈরাচার আমলের মতো ‘গোয়েন্দা সংস্থার মুখপাত্র’ হিসেবে কাজ করছে।
সম্পাদক পরিষদ স্পষ্টভাবে এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বরং গত বছরের ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা নানা ধরনের নিপীড়ন, হয়রানি ও দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন।’
গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থান চলাকালে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু গণমাধ্যমের সাহসী প্রতিবেদনে জনগণের সামনে উঠে এসেছে। বিশেষ করে অধিকাংশ মুদ্রণ গণমাধ্যম নির্ভীকভাবে তথ্য তুলে ধরে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে জনমত গঠনে বিশেষ অবদান রেখেছে এবং একই সঙ্গে অনেক ভয়ভীতির মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বেশির ভাগ মুদ্রণ গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রাখা ও সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই: বাম গণতান্ত্রিক জোট
চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা বলেছে, জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সারা দেশে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে।
আজ সোমবার বিকেলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোটের অস্থায়ী কার্যালয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ২৭ ও ২৮ জুন দেশপ্রেমিক জনগণের ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চে চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে। দেশের সচেতন মানুষ সরকারের যেকোনো গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এখনো পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আমরা আশা করেছিলাম, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সরকার বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বন্দর ইজারা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা থেকে সরে আসবে। কিন্তু সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। যা নৌপরিবহন উপদেষ্টার বক্তব্যে ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।’
দেশের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। দেশের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের সরকারের সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষিত হয়েছে। জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না।’
জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করার দাবি জানানো যাচ্ছে। একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু সরকার ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণ–আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সব বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শামীম ইমাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ বক্তব্য দেন।