গত কোরবানির ঈদের আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাবার লাশ দাফন করে আবার ঢাকায় গরুর হাটে গিয়েছিল যে আরিফুল, তাদের এক বিঘা আউশ ধানের খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আরিফুলের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পলাশী ফতেপুর গ্রামে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে আরিফুল সেই ধান গলাপানি থেকে কেটে তুলছিল। খেতের এক পাশে একটি টিনের কড়াইয়ে ধান কেটে রাখছিল। আরেক পাশে রাখা নৌকায় করে সেগুলো বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল। বাড়ির বাইরের আঙিনা ডুবে গেছে, ভিটাটুকু ভেসে আছে, সেখানেই ধান রাখা হচ্ছিল।

আরিফুল জানায়, ধান এখনো পুরোপুরি পাকেনি। হয়তো তিন ভাগের এক ভাগ ধান পাওয়া যাবে। একজন শ্রমিকের খরচ পড়ে ৮০০ টাকা। নিজেদের ধান ডুবে যাচ্ছে, সহ্য করা যাচ্ছে না বলে কেটে ফেলছে। শ্রমিকদের খরচ মেটাতে গেলে হয়তো তেমন কিছুই থাকবে না, তাই নিজেই এ কাজে লেগে পড়েছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ইউনিয়নের পলাশী ফতেপুর গ্রামের ২০০ বাড়ি, কালিদাসখালীর ২০০ ও আতারপাড়ার ১০০, চৌমাদিয়ার ও দিয়াড়কাদিরপুরের ১০০ বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ এর  চারপাশে ৫০টি পরিবার পদ্মা নদীভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। ইউনিয়নের ৫০ বিঘা পেয়ারাবাগান, ৩০০ বিঘা কাউন, ৪০০ বিঘা আউশ ধান, ২০০ বিঘা ভুট্টাখেত, ৫০০ বিঘা পেঁপে ও ২০০ বিঘা কলাবাগান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

আরিফুলের বাড়িতে যাওয়ার পথে দেখা গেল, গ্রামের দুজন নারী-পুরুষ প্রায় গলাপানিতে নেমে ধান কাটছিলেন। বন্যায় ধানখেতের সঙ্গে গোচারণভূমিও ডুবে গেছে। তাই তাঁরা নিজের জমির কাঁচা ধান গরুকে খাওয়ানোর জন্য কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের সব মাঠের ফসল গত চার দিনের বন্যার পানিতে এভাবেই ডুবে গেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০০ পরিবার।

এই দুই নারী-পুরুষ হলেন চায়না বেগম (৩৫) ও তাঁর স্বামী সমশের আলী (৪০)। তাঁরা ২৫ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে জমি ইজারা নিয়ে পাঁচ বিঘা আউশ ধান চাষ করেছিলেন। প্রতি বিঘা ধান চাষে তাঁদের খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা করে। সমশের আলী বলেন, ‘কাঁচা ধান গরুর লাইগি কাটতিচি, এবার আমরা কী খাইয়া বাঁচমু, হেই চিন্তায় মরতিচি।’

লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে গিয়ে দেখা গেল, বিদ্যালয়ের বেড়ার অর্ধেক পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। পাশেই বাথরুমের গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চনকা মিস্ত্রির বাড়ির মেঝে পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম (৩৫) ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না। চারদিক থেকে পোকা পানিতে ভেসে বাড়িতে চলে আসছে। তাই অন্য জায়গা থেকে রান্না করে এনেছেন।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, তাঁরা প্রায় ২২০টি পরিবার পানিবন্দী হওয়ার খবর পেয়েছেন। গতকাল বুধবার তাদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ফ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাবাকে দাফন করে গরু নিয়ে হাটে যাওয়া সেই আরিফুলের ধানও বন্যায় তলিয়ে গেছে

গত কোরবানির ঈদের আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাবার লাশ দাফন করে আবার ঢাকায় গরুর হাটে গিয়েছিল যে আরিফুল, তাদের এক বিঘা আউশ ধানের খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আরিফুলের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পলাশী ফতেপুর গ্রামে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে আরিফুল সেই ধান গলাপানি থেকে কেটে তুলছিল। খেতের এক পাশে একটি টিনের কড়াইয়ে ধান কেটে রাখছিল। আরেক পাশে রাখা নৌকায় করে সেগুলো বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল। বাড়ির বাইরের আঙিনা ডুবে গেছে, ভিটাটুকু ভেসে আছে, সেখানেই ধান রাখা হচ্ছিল।

আরিফুল জানায়, ধান এখনো পুরোপুরি পাকেনি। হয়তো তিন ভাগের এক ভাগ ধান পাওয়া যাবে। একজন শ্রমিকের খরচ পড়ে ৮০০ টাকা। নিজেদের ধান ডুবে যাচ্ছে, সহ্য করা যাচ্ছে না বলে কেটে ফেলছে। শ্রমিকদের খরচ মেটাতে গেলে হয়তো তেমন কিছুই থাকবে না, তাই নিজেই এ কাজে লেগে পড়েছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ইউনিয়নের পলাশী ফতেপুর গ্রামের ২০০ বাড়ি, কালিদাসখালীর ২০০ ও আতারপাড়ার ১০০, চৌমাদিয়ার ও দিয়াড়কাদিরপুরের ১০০ বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ এর  চারপাশে ৫০টি পরিবার পদ্মা নদীভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। ইউনিয়নের ৫০ বিঘা পেয়ারাবাগান, ৩০০ বিঘা কাউন, ৪০০ বিঘা আউশ ধান, ২০০ বিঘা ভুট্টাখেত, ৫০০ বিঘা পেঁপে ও ২০০ বিঘা কলাবাগান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

আরিফুলের বাড়িতে যাওয়ার পথে দেখা গেল, গ্রামের দুজন নারী-পুরুষ প্রায় গলাপানিতে নেমে ধান কাটছিলেন। বন্যায় ধানখেতের সঙ্গে গোচারণভূমিও ডুবে গেছে। তাই তাঁরা নিজের জমির কাঁচা ধান গরুকে খাওয়ানোর জন্য কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের সব মাঠের ফসল গত চার দিনের বন্যার পানিতে এভাবেই ডুবে গেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০০ পরিবার।

এই দুই নারী-পুরুষ হলেন চায়না বেগম (৩৫) ও তাঁর স্বামী সমশের আলী (৪০)। তাঁরা ২৫ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে জমি ইজারা নিয়ে পাঁচ বিঘা আউশ ধান চাষ করেছিলেন। প্রতি বিঘা ধান চাষে তাঁদের খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা করে। সমশের আলী বলেন, ‘কাঁচা ধান গরুর লাইগি কাটতিচি, এবার আমরা কী খাইয়া বাঁচমু, হেই চিন্তায় মরতিচি।’

লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে গিয়ে দেখা গেল, বিদ্যালয়ের বেড়ার অর্ধেক পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। পাশেই বাথরুমের গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চনকা মিস্ত্রির বাড়ির মেঝে পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম (৩৫) ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না। চারদিক থেকে পোকা পানিতে ভেসে বাড়িতে চলে আসছে। তাই অন্য জায়গা থেকে রান্না করে এনেছেন।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, তাঁরা প্রায় ২২০টি পরিবার পানিবন্দী হওয়ার খবর পেয়েছেন। গতকাল বুধবার তাদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ