জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোষ্য ভর্তি পুনর্বহাল রেখে প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিন্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বাতিল করা হয়েছে শিক্ষকদের ভাই-বোন কোটা।

এদিকে, কোটা পুনর্বহালের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড.

এ বি এম আজিজুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা পোষ্য কোটা পুনর্বহালের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

ডাকসু নির্বাচন: তৃতীয় দিনে মনোনয়ন নিলেন ২২ প্রার্থী

কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক সংস্কারে জরুরি টেন্ডার দাবি শিক্ষার্থীদের

জানা যায়, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কিছু শর্তসাপেক্ষে পোষ্য ভর্তি বহাল রাখা হয়েছে। পোষ্যদের ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। কোনো পোষ্য যদি ভর্তি হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করে, তাহলে তার ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও শিক্ষকদের স্বামী-স্ত্রী ও ভাই-বোনদের জন্য থাকা কোটা বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে শুধু ঔরসজাত সন্তানরাই পোষ্য কোটার আওতায় ভর্তির সুযোগ পাবে।

পোষ্য কোটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম লিখেছেন, “পোষ্য ভর্তি নিয়ে প্রশাসন যে ধৃষ্টতা দেখাল, এটা সত্যিই আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। যারা দাবি করেছিল, পোষ্য ভর্তি বাতিল করতে হবে; তাদের দাবিকেও কর্ণপাত করা হলো না। আর যারা যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছে, তাদের দাবিও কর্ণপাত করা হল না।”

তিনি বলেন, “সকল যুক্তির ঊর্ধ্বে উঠে প্রশাসন যাচ্ছেতাই একটা সিদ্ধান্ত নিল। এতদিন পর্যন্ত প্রশাসন যে প্রহসন করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বিশ্রিতম প্রহসন হল এই সিদ্ধান্ত। ডেয়ার প্রশাসন, আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, শিক্ষার্থীরা ম্যানেজড না।”

শাখা ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পোষ্য ভর্তি বাতিল করলেও হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে তা আবার ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছে। আমরা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আর্থ-সামাজিকভাবে অগ্রসর এবং উন্নত জীবনমানের সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য এ সুবিধা কতটা যৌক্তিক-সে প্রশ্ন দৃঢ়ভাবে রেখে আসছি। প্রশাসনকে আহ্বান জানাচ্ছি দ্বিমুখী আচরণ না করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য।”

ইংরেজি বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতী লিখেছেন, “আমরা অনশন করেছি, আন্দোলন করেছি, সারাদিন রোদে ঘামে ভাই-বোনেরা একসঙ্গে থেকেছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি, তবুও পিছিয়ে যাইনি। প্রশাসনিক ভবনের পশ্চিম পাশে প্রতীকীভাবে পোষ্য কোটাকে কবর দিয়েছি “

তিনি আরো লিখেছেন, “আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, পোষ্য কোটা বাতিল। কিন্তু কে জানত, তারা আবারো সুযোগ বুঝে আঘাত হানবে। জাকসুকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নতুন তামাশা করবে! মুখের কথা যদি রাখতে না পারেন, মনে যদি অসৎ উদ্দেশ্য লালন করেন, তাহলে ওই চেয়ার আপনাদের জন্য নয়। এ চেয়ার শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষাকারীর জন্য, প্রতারণাকারীর জন্য নয়।”

এর আগে চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার ধারাবাহিক আন্দোলন ও অনশনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে টানা ১৯ ঘণ্টার গণঅনশনের পর উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।

এরপর উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান ঘোষণা দেন, পোষ্য কোটা স্থগিত থাকবে, তবে কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও তখন জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির তথ্য অনুযায়ী, পোষ্য কোটায় আবেদনকারী ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মিলত। প্রতি বিভাগে চারজন করে সর্বোচ্চ ১৪৮ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পেতেন। যদিও বিগত ৫ বছরে এই কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ৫৫ জন।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ষ য ভর ত ব ত ল কর ত কর ছ র জন য য় ভর ত

এছাড়াও পড়ুন:

উপাচার্যের মায়ের মৃত্যুর কারণে অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মা মারা যাওয়ার কারণে ৩০ ঘণ্টা পর অনশন তুলে নিলেন শিক্ষার্থী আক্তারুজ্জামান সাজু।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেল ৫টায় অনশন তুলে নেন তিনি। এর আগে সোমবার (১১ আগস্ট) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (মাকসু) প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন তিনি।

তার সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সংহতি জানিয়ে প্রতীকী অনশন শুরু করেন। পরে রাতে সাজু অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে স্যালাইন পুশসহ বিভিন্ন চিকিৎসা দেয়া হয়।

আরো পড়ুন:

রাকসুতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ঘোষণা

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগের দাবিতে মানববন্ধন

এ দিকে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ অনশনরত শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ‘‎ভাত নয়, আইন খাব’, ‘‎তালা ভাঙ্গছি, মাকসু আনব’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগানে ‎প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে।

অনশনরত শিক্ষার্থী সাজু জানিয়েছেন, উপাচার্য স্যারের মা মারা যাওয়ার কারণে অনশন স্থগিত করা হয়েছে। তবে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। এছাড়াও দাবি মানা না হলে আগামী শনিবার থেকে অনশনে বসবেন তিনি।

তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির অন্যতম হলো দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্যেই তারা ২১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও রিজেন্ট বোর্ড থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ‎‎পরবর্তীতে ২ আগস্ট পুনরায় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে ১০ আগস্টের মধ্যে রিজেন্ট বোর্ডে প্রস্তাবটি পাশ করানোর আহ্বান জানানো হয়। তবে সেই সময়ও পেরিয়ে গেছে, দাবিটি বাস্তবায়িত হয়নি।

অনশনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ইমাম হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমি অবহিত হয়েছি। শিক্ষার্থীদের একটি আবেদনের বিষয়ে প্রশাসন আলোচনা করেছে এবং আবেদনটি আমলে নিয়ে একটা মিটিংও করেছে। শিক্ষার্থীদের আবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ি কি করা যেতে পারে বা না পারে, সেটার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। আর নিরাপত্তার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি।”

ঢাকা/কাওছার/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাকসু নির্বাচনে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনসহ ৩ দাবিতে গণ–অনশন
  • শের–ই–বাংলা মেডিকেলের কর্মীদের ধাওয়া ও মারধরে শিক্ষার্থীদের অনশন কর্মসূচি পণ্ড
  • ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলন চলবে, সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের
  • জনদুর্ভোগে বাড়ছে ক্ষোভ, মহাপরিচালকের আশ্বাসেও দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা
  • স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবি বাস্তাবায়নে দীর্ঘসময় লাগবে: স্বাস্থ্য মহাপরিচালক
  • বিসিএসে অযৌক্তিক অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
  • নির্বাচনের সময় অপরিবর্তিত রেখে রাকসুর তফসিল পুনর্বিন্যাস, ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের দাবি
  • স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট ভাঙাসহ তিন দাবিতে বরিশাল ব্লকেড, জনভোগান্তি
  • উপাচার্যের মায়ের মৃত্যুর কারণে অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা