ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রশাসন নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বলে দাবি করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সংগঠনটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন এ দাবি করেন।

সম্প্রতি উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক এবং দেশের ২৩টি ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে বেশির ভাগ সংগঠন ক্যাম্পাসে গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ করার প্রস্তাব দেয়। শুধু ছাত্র অধিকার পরিষদ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

ওই বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয় ক্যাম্পাস, আবাসিক হল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে কীভাবে ছাত্ররাজনীতি চলবে এবং এর ধরন কী হবে, সে বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা হবে।

আজকের বৈঠকে ছাত্রদলের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল ওই রূপরেখা প্রণয়নের অগ্রগতি, গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটার তালিকায় ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের’ অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ এবং নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়গুলো নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক ডাকসু ভোটার তালিকায় ১৫০ জনের বেশি ছাত্রলীগের ‘সক্রিয় সন্ত্রাসীর’ নাম রয়েছে। এর মধ্যে কারাগারে থাকা এসএম হল ছাত্রলীগ সভাপতির নামও আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বছর ধরে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে; কিন্তু তারা তা করেনি। ফলে তারাই ভোটার তালিকায় রয়ে গেছে।’

নাছির উদ্দিন আরও বলেন, ছাত্রদলের ঘোষিত হল কমিটিতে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপমানজনকভাবে হয়রানি ও বুলিং করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, ফেসবুকের দুটি গ্রুপ—‘শিক্ষার্থী সংসদ ১’ এবং ‘শিক্ষার্থী সংসদ ২’ ব্যবহার করে ছাত্রদল ও এর নারী সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে ‘শিক্ষার্থী সংসদ ১’ গ্রুপের প্রশাসক হলেন ‘অতীতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত’ জুলিয়াস সিজার, যিনি ডাকসুর ভোটার তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত।

নাছির উদ্দিনের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে বলা আছে, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কেউ এসব সংগঠনের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। কিন্তু সম্প্রতি এসব সংগঠনে ‘গুপ্ত শিবির’ পরিচয় গোপন করে অনুপ্রবেশ করছে এবং দখলদারত্ব কায়েম করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই প্রমাণসহ উপাচার্যের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেছি।’

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, উপাচার্য তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন যে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হচ্ছে, যেটি ক্যাম্পাস, হল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে ছাত্ররাজনীতির ধরন ও কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় উপাচার্য ও অন্য শিক্ষকেরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সমস্যাগুলোর পেছনে গুপ্ত রাজনীতি জড়িত।’

রাকিবুল ইসলাম দাবি করেন, উপাচার্য গুপ্ত রাজনীতির একটি সংজ্ঞা ও কয়েকটি মানদণ্ডও তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো যেকোনো ছাত্রসংগঠনকে তাদের প্রাথমিক সদস্যদের তালিকা প্রকাশ্যে জানাতে হবে, যাতে গোপন পরিচয়ে রাজনীতি করার সুযোগ না থাকে।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, বৈঠকে গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে অনুপ্রবেশ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে উপাচার্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বুলিংয়ে জড়িত সংশ্লিষ্ট ফেসবুক গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে অপসংস্কৃতি বন্ধে কঠোর নজরদারি চালানো হবে। এ ছাড়া কমিটি দ্রুত কাজ শেষ করে রূপরেখা প্রণয়ন করবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতও অন্তর্ভুক্ত করবে।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়েও ছাত্রদল অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘আমরা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে চাই, কিন্তু প্রশাসন এক বছরের প্রস্তুতিতেও ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বাদ দিতে পারেনি। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্রলীগের জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা প্রধান দাবি ছিল। এ বিষয়ে প্রশাসনের গাফিলতির জন্য পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় এই চিহ্নিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রশাসন কাজ করছে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে।

এদিকে ছাত্রদলের ঘোষিত হল কমিটিগুলো থাকবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই, এটা তো স্যাররাই বলেছেন হল কমিটি থাকবে।’

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে ৮ আগস্ট মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদের মুখে হলে প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ।

আরও পড়ুনঢাবির হলে প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে, প্রক্টরের আশ্বাসে বিক্ষোভ থামালেন শিক্ষার্থীরা০৮ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক ত ক স গঠন র ক ব ল ইসল ম গ প ত র জন ত ছ ত রদল র উপ চ র য স গঠন র প রস ত প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

সংসদে নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম এই কমিটি আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্রত্যাখ্যানের কথা জানায়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে মনোনয়নের মাধ্যমে ২০৪৩ সাল পর্যন্ত ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা বাড়ানো ও সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচনব্যবস্থা চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে নারী সংগঠনগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করলেও এ বিষয়ে একমত হয়নি দলগুলো। এ অবস্থায় নারী আসন নিয়ে আগের ব্যবস্থাই বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে আজ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে সমান অধিকার, সমমর্যাদা ও দায়িত্বের সঙ্গে ভূমিকা পালন করতে বাংলাদেশের নারীরা এখন প্রস্তুত রয়েছেন। সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে এলে গণতান্ত্রিক চর্চা আরও শক্তিশালী হবে, যা নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে আরও বিস্তৃত ও অর্থবহ করে তুলবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নারী সমাজের দীর্ঘদিনের এই আন্দোলন ও দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পশ্চাৎপদ সিদ্ধান্তে কীভাবে একমত হলো, সে বিষয়েও সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গভীর বিস্ময় প্রকাশ করছে।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, জাতীয় সংসদের সাধারণ আসনে নারী–পুরুষ উভয়ই নির্বাচন করতে পারবেন। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনও থাকবে। জাতীয় সংসদে মোট আসনসংখ্যা ৪৫০ করতে হবে, যেখানে ৩০০ সাধারণ আসন ও ১৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের প্রথা বাতিল করে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ ব্যবস্থাটি দুই থেকে তিন মেয়াদের জন্য বলবৎ থাকবে।

বিবৃতিতে নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংসদে নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান
  • শুল্ক বৃদ্ধি আরো ৯০ দিন স্থগিত রাখতে একমত যুক্তরাষ্ট্র-চীন