সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে হামলা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা
Published: 15th, August 2025 GMT
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৩-২৪ মেয়াদের নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসী হামলা, ভোট জালিয়াতি, মারধর, হত্যাচেষ্টা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও সাবেক কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো.
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে হামলার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহবাগ থানায় দায়ের করা এজাহার অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় নীল প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা জানতে পারেন, আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা গোপনে ব্যালটে সিল মারছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে কয়েকজন আইনজীবী মারধরের শিকার হন। পরদিন ১৫ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সমিতির অডিটরিয়ামে প্রায় ৪০-৫০ জন আইনজীবী ও শতাধিক পুলিশ সদস্য জোরপূর্বক প্রবেশ করে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী ও ভোটারদের ওপর হামলা চালান।
এ সময় মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মাহদিন চৌধুরীসহ বহু প্রার্থী ও সদস্য গুরুতর আহত হন। নারী আইনজীবীদেরও মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে। রাইফেলের বাঁট, লাঠি ও বুটের আঘাতে কয়েকজন আইনজীবী রক্তাক্ত জখম হন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আইনজীবী রাসেল আহম্মেদ, ইব্রাহিম খলিল, সালাউদ্দিন রিগানসহ প্রায় তিন শতাধিক আইনজীবীকে লাঠি, রাইফেলের বাঁট ও বুটের আঘাতে আহত করা হয়। এ ছাড়া ভবনের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর, কাচ ভেঙে ফেলা, পুলিশের প্রবেশে সহযোগিতা, সাংবাদিকদের ওপর হামলারও অভিযোগ রয়েছে। আজকের পত্রিকা, জাগো নিউজ, মানবজমিন, এটিএন বাংলা, সময় টিভি, ডিবিসি নিউজ ও বৈশাখী টিভির অন্তত ২৫ জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।
বাদীর দাবি, তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। নির্বাচনের দ্বিতীয় দিন ১৬ মার্চও ভয়ভীতি ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। অবশেষে রাতে জাল ব্যালটের মাধ্যমে ১৪ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র ম ক র ট আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি
ব্যবসায় অংশীদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৭ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার’ অভিযোগের মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও তার ভাই আলিসান চৌধুরী।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক আফরোজা তানিয়া শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মেহজাবীন চৌধুরীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার।
আরো পড়ুন:
আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মেহজাবীন চৌধুরী
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে যা বললেন মেহজাবীন
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মেহজাবীন চৌধুরী তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তাতে এ মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী।
মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “একজন অজানা ব্যক্তি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে আমার ও আমার ১৯ বছর বয়সি ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত নয় মাসে আমি এই মামলার কোনো তথ্য পাইনি, কারণ অভিযোগকারী পুলিশকে আমার সঠিক ফোন নম্বর, সঠিক ঠিকানা বা কোনো যাচাইকৃত তথ্য দিতে পারেননি। তিনি দাবি করেন যে, ২০১৬ সাল থেকে তিনি আমার সাথে ‘ব্যবসা’ করছিলেন।”
মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অভিযোগকারী। এ বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তবে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, ‘তিনি ২০১৬ সাল থেকে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিতেন। কিন্তু তিনি যা দেখাতে পারেননি।’ একটি মেসেজ যেটা তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন মেসেজের, হোয়াটসঅ্যাপ বা আমার নম্বরে, কিংবা আমার পক্ষ থেকে একটি উত্তর, এমনকি একটি স্ক্রিনশটও না।”
অভিযোগকারীর পরিচয় অসম্পূর্ণ। এ তথ্য উল্লেখ করে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তার পরিচয় অসম্পূর্ণ। তার সম্পূর্ণ পরিচয়পত্র এখনো জমা দেয়া হয়নি। তার এনআইডি পর্যন্ত অনুপস্থিত। অভিযোগকারী ও তার আইনজীবী ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। গতকাল খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযোগকারী তার ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, এমনকি তার আইনজীবীর নম্বরও বন্ধ।”
আর্থিক লেনদেনের কোনো নেই। মেহাজাবীনের ভাষায়, “আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি দাবি করেন যে, তিনি আমাকে ২৭ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি দেখাতে পারেননি—কোনো ব্যাংক লেনদেন, কোনো চেক, বিকাশ লেনদেন, কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রশিদ, কোনো সাক্ষী, কিছুই না। একটি কাগজপত্রও নেই।”
অপহরণের অভিযোগের বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “১১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাটি সম্পূর্ণ প্রমাণহীন। তিনি দাবি করেন ১১ ফেব্রুয়ারি আমি তাকে চোখ বেঁধে হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম, আমার ছোট ভাইসহ আরো ৪–৫ জনকে নিয়ে। গত নয় মাসে তিনি দেখাতে পারেননি রেস্টুরেন্ট বা আশেপাশের রাস্তার এক সেকেন্ডেরও সিসিটিভি ফুটেজ, কোনো সাক্ষী, কোনো প্রমাণ, কিছুই না। হাতিরঝিল ঢাকার সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি-নিয়ন্ত্রিত এলাকা, তবু তিনি একটি ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেননি।”
মামলা হওয়ার পর ৯ মাস কেটে গেলেও কোনো নোটিশ পাননি মেহজাবীন চৌধুরী। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত নয় মাসে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। এই নয় মাসে আমি কোনো পুলিশ স্টেশনের ফোন কল, কোনো কোর্টের নোটিশ বা ডকুমেন্ট। একটি নোটিশ পেলেও আমি অনেক আগে থেকেই আইনি ব্যবস্থা নিতাম।”
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন মেহজাবীন। তার ভাষায়, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও, যখন জানতে পারলাম যে একটি অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, তখন আমি আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিন নিয়েছি। কারণ আমি আমাদের আইন ও নিয়ম মানি। প্রমাণ ছাড়া দায়ের করা মামলা কখনো সত্য হয়ে যায় না। সত্য খুব দ্রুতই আদালতে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখনকার দিনে কাউকে অপমান করা, মানহানি করা বা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যক্তির যে উদ্দেশ্যই থাকুক, আমার বা আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে, সে যা-ই করতে চায়—আমি বিশ্বাস করি সবকিছু খুব দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
অনুরোধ জানিয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “এর আগ পর্যন্ত আমি সবাইকে অনুরোধ করব—দয়া করে সহানুভূতিশীল হোন, দয়া করে মানবিক হোন এবং কাউকে না জেনে কোনো মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করবেন না। গত ১৫ বছর ধরে আমি আমার কাজ, আমার পেশা এবং আমার দর্শকদের জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে এসেছি, সেই পরিশ্রমের পরেও আজ আমাকে এসব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে—এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।”
ঢাকা/শান্ত