রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে নানা তৎপরতা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে জিততে ‘ভোটের কৌশল’ ঠিক করছেন ছাত্রনেতারা। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করে ক্যাম্পাসে পরিচিত পাওয়া শিক্ষার্থীরাও ভোটের মাঠে নামছেন। এ ক্ষেত্রে সব মতের শিক্ষার্থীদের ভোট টানতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘সম্মিলিত প্যানেল’ গোছানোর চেষ্টা করছে সংগঠনগুলো।

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর রাকসুর ভোটগ্রহণ। অবশ্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ১৭ দিন পার হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো ছাত্রসংগঠন বা শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেননি। ২০ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

‘শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য’ প্যানেল গঠনকেই প্রাথমিকভাবে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সংগঠনগুলো। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখগুলোকে প্যানেলে টানতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন ছাত্রনেতারা।

ক্যাম্পাসের আমতলা, টুকিটাকি চত্বরে আড্ডায় প্রাধান্য পাচ্ছে রাকসু ইস্যু। ছাত্রসংগঠনগুলো প্যানেলে কাদের টানছে, শীর্ষ পদগুলোতে কারা নেতৃত্বে আসবে এবং কোন কোন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে, তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ ও তর্কবিতর্ক।আড্ডা-আলোচনায় রাকসু

সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ক্যাম্পাসে নির্বাচনের আমেজ তত বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডায় নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। ক্যাম্পাসের আমতলা, টুকিটাকি চত্বরে আড্ডায় প্রাধান্য পাচ্ছে রাকসু ইস্যু। ছাত্রসংগঠনগুলো প্যানেলে কাদের টানছে, শীর্ষ পদগুলোতে কারা নেতৃত্বে আসবে এবং কোন কোন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে, তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ ও তর্কবিতর্ক। সন্ধ্যার পর আবাসিক হলগুলোর গেস্টরুম ও সামনের চা-দোকানগুলোতে পরিচিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের সমর্থন আদায়ের।

দীর্ঘদিন পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসের পরিবেশ পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা তমা বলেন, ‘যে প্রত্যাশায় আমরা গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম, সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা আর নির্যাতন ও আধিপত্যের ক্যাম্পাস চাই না। আমরা চাই, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ হক। এমন নেতৃত্ব আসুক, যারা শিক্ষার্থীদের হয়ে কাজ করবে।’

আরও পড়ুনছাত্রদলের তৎপরতা কম, অন্যরা সক্রিয় ৩ ঘণ্টা আগেসবাইকে নিয়ে প্যানেল গড়ার চেষ্টা

শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোটের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারেন। ফলে নানা মতের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্মিলিত শিক্ষার্থী প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছে ছাত্রসংগঠনগুলো। বিভাগ ও অনুষদভিত্তিক কিছু পরিচিত মুখগুলোকে দলে টানতে চাইছে তারা। তা ছাড়া জেলা সমিতি, অঞ্চলভিত্তিক প্রার্থী ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রাকসু নির্বাচনে মোট ৫ থেকে ৬টি প্যানেল হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।

খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী, এবারের রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ২৫ হাজার ১২৭ জন। যার মধ্যে ৬১ দশমিক ৬৫ শতাংশ ছাত্র এবং ৩৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছাত্রী।

আমরা ক্যাম্পাসের স্বার্থে একটি বৃহৎ প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছি। প্যানেলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন অ্যাকটিভিস্টকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বেশ কয়েকজন সাড়াও দিয়েছেন।বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছে। সেখানে সব মতের প্রতিনিধিত্ব রাখতে চায় তারা। ইতিমধ্যে প্যানেল গোছানো প্রায় শেষ।

বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সম্মিলিত প্যানেল গঠন করব। এখানে নারী, আদিবাসী, সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধিত্ব করবেন। চা আড্ডা, খাবার হোটেল ও আবাসিক হলে ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ করছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। এই জোটে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, ছাত্র গণমঞ্চ, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। এই জোট একটি প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসের স্বার্থে একটি বৃহৎ প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছি। প্যানেলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন অ্যাকটিভিস্টকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বেশ কয়েকজন সাড়াও দিয়েছেন।’

আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সম্মিলিত প্যানেল গঠন করব। এখানে নারী, আদিবাসী, সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধিত্ব করবেন। চা আড্ডা, খাবার হোটেল ও আবাসিক হলে ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ করছেন।বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান

‘স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি সংগঠনের সদ্য সাবেক সভাপতি মেহেদী সজীব ও সম্পাদক ফজলে রাব্বি মো.

ফাহিম রেজাদের উদ্যোগেও একটি প্যানেল হতে পারে। তাঁরা দুজনেই সাবেক সমন্বয়ক। তাঁদের সঙ্গে ‘সোচ্চার স্টুডেন্টস নেটওয়ার্ক’ নামের আরেকটি সংগঠনের শিক্ষার্থী, আরও কয়েকজন সাবেক সমন্বয়ক ও ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ থাকতে পারেন। এই জোট গত বুধবার দিনব্যাপী রাকসু নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে লিফলেট বিতরণ করেছে।

সম্ভাব্য এই প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী মেহেদী সজীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আগামী সপ্তাহে আমাদের প্যানেল ঘোষণা করব।’

এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচিত সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি নোমান ইমতিয়াজ মিলে একটি প্যানেল গঠন করার গুঞ্জন চলছে। এই প্যানেলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিতর্ক সংগঠনগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অংশ নিতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

 এর বাইরে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা প্রথম আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী বিভিন্ন পদে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।

আমরা রাকসু চাই, আমরা অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তবে আমরা প্রশাসনের কাছে কিছু যৌক্তিক দাবি জানিয়েছি, সেগুলো মেনে নেওয়ার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেববিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ দোদুল্যমান ছাত্রদল

রাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। সংগঠনটি ৭ আগস্ট ‘গণ-অভ্যুত্থানে বিরোধিতাকারী’ ২১ শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে, ‘আওয়ামীপন্থী ফ্যাসিস্ট শিক্ষকদের’ বিচারের আগে রাকসু নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। সংগঠনের অভ্যন্তরেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল একাধিক নেতা। কেন্দ্রের ‘সবুজ সংকেতের’ দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা। বড় একটি ছাত্রসংগঠনের এমন অবস্থান শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে শঙ্কার কথাও আলোচনায় আছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রাকসু চাই, আমরা অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তবে আমরা প্রশাসনের কাছে কিছু যৌক্তিক দাবি জানিয়েছি, সেগুলো মেনে নেওয়ার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

 গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালোভাবে উঠতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুলাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে রাকসুর নির্বাচন কমিশন। এবার সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদকসহ (জিএস) মোট ২৩টি পদে রাকসু নির্বাচন, হল সংসদে ১৫টি করে পদে এবং সিনেটে ৫টি পদে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিটি আবাসিক হলে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একটা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছি। সব ধরনের প্রস্তুতি চলমান আছে। কেউ যেন পেশিশক্তির ব্যবহার ও প্রভাব ফেলতে না পারে, আমরা যথেষ্ট সজাগ আছি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পর ১৯৬২ সালে রাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মোট ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে রাকসু নির্বাচন হয়েছিল। এরপর আর কোনো সরকারের আমলেই নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ বছরের ইতিহাসে ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির প্রভাব ছিল উল্লেখ করে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের একটি নতুন দিনের প্রত্যাশা আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এ ক্ষেত্রে রাকসু নির্বাচন একটা মাইলফলক হতে পারে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প য ন ল গঠন র চ ষ ট প রথম আল ক স প ট ম বর ছ ত রদল র স গঠনগ ল স গঠন র গঠন কর র জন ত পর চ ত গ রহণ আগস ট করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জবিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) একসময় প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আলাদা পরিচিতি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে আয়োজন করত গান, নাটক, আবৃত্তিসহ সাহিত্যচর্চার বহুমাত্রিক অনুষ্ঠান।

সম্প্রতি এই পরিবেশ ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’ নামক এক অদৃশ্য বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এর প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজেট।

আরো পড়ুন:

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আবাসন-পরিবহনে ভোগান্তি চরমে, বাড়ছে শুধু বিভাগ

ডেঙ্গুতে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংগঠনগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও নির্দিষ্ট উত্তর আসে— ‘একাডেমিক প্রোগ্রামের জন্য বাজেট দেওয়া হবে, এসব প্রোগ্রামের জন্য নয়।’ এতে সংগঠনগুলো চরম হতাশার মধ্যে পড়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের শেকলে বাধা পড়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রোগ্রামগুলো আগে সংগঠনগুলো আয়োজন করত, তা এখন একেবারেই সীমিত হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাজেট না দেওয়ার কারণে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিজেদের জায়গা হারাচ্ছে। তারা আর স্বাধীনভাবে প্রোগ্রাম করতে পারছে না। যেসব সংগঠন আগে নিয়মিত উৎসব বা শিল্পচর্চার অনুষ্ঠান করত, এখন তাদের কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেছে। গত ১ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেনি সংগঠনগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি শুধু সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের জন্যও এক ধরনের ক্ষতি। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, মেধা বিকাশ এবং মানসিক প্রশান্তির অন্যতম মাধ্যম ছিল এসব আয়োজন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক সংকটে সেই পথ আজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও প্রায় বন্ধের পথে হাঁটছে।

বিভিন্ন সংগঠন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট না দেওয়ায় সংগঠনগুলো বাইরের স্পন্সর খুঁজতে চাইলেও নানা জটিলতা পোহাতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেফারেন্স না থাকায় তারা বাইরে থেকেও স্পন্সর আনতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে বাইরের সহযোগিতা গ্রহণও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সংগঠনগুলো কার্যত দ্বিমুখী সংকটে পড়ে আছে—একদিকে অর্থ নেই, অন্যদিকে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার সুযোগও নেই।

এদিকে, আগে যেসব প্রোগ্রাম বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করতো। এখন সেসব প্রোগ্রাম আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই। এতে সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডও বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কয়েকটা প্রোগ্রাম হলেও সেসবে ছিল না আগের মতো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ছোঁয়া। এ সময়ে তেমন কোনো আয়োজনও করতে পারেনি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট বরাদ্দ না দেওয়ায় মৃতপ্রায় অবস্থা এসব সংগঠনের। চলে না নিয়মিত কার্যক্রমও।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাংস্কৃতিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। অথচ শিক্ষা ও সংস্কৃতি সমানতালে এগোলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে পরিপূর্ণ হয়। শুধু একাডেমিক পড়াশোনা নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও ছাত্রজীবনকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোভাব এমন দাঁড়িয়েছে যে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেন এক প্রকার ‘অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা’। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলাদা বাজেট বরাদ্দ এবং সংগঠনগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই একমাত্র সমাধান। কর্তৃপক্ষ যদি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আস্থা দেখায়, তাদের হাতেই অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়, তবে আবারো প্রাণ ফিরে পাবে জবির সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, “সাংস্কৃতিক চর্চা এককেন্দ্রিক হলে স্বনিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতি গড়ে ওঠে না। বিভিন্ন সংগঠনকে স্বাধীনভাবে প্রোগ্রাম আয়োজনের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের কাজ হলো পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া বা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। সরাসরি অর্থ সাহায্য বাধ্যতামূলক নয়, তবে উৎসাহ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, “বর্তমানে অবকাশ ভবনে ১৮টি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। এই ১৮টি সংগঠনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বাজেট বরাদ্দ করা হয়। বাজেট ব্যবহারে যথাযথ জাস্টিফিকেশন করতে হয় আমাদের।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় দিবস কেন্দ্রীয়ভাবে উদযাপিত হয় এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রোগ্রাম। তাই কোনো সংগঠনকে আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করার সুযোগ নেই। বর্তমান প্রশাসন এবং পূর্ববর্তী প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জবিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’