জেমস লি (১৭১৫-১৭৯৫) আর লুইস কেনেডি (১৭২১-১৭৮২) ছিলেন দুটি পরিবারের দুজন স্কটিশ নার্সারিকর্মী। তাঁরা দুজন মিলে লন্ডনের হ্যামারস্মিথে আঠারো শতকের প্রথম দিকে একটি নার্সারি গড়ে তুলেছিলেন, যার নাম ছিল ভাইনইয়ার্ড নার্সারি। ধারণা করা হয়, সেটি বিশ্বের প্রথম দিকের নার্সারিগুলোর একটি।
বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক নার্সারিটি ছিল লিনিয়ান বোটানিক গার্ডেন অ্যান্ড নার্সারি। রবার্ট প্রিন্স ১৭৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সেটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভাইনইয়ার্ড নার্সারি ছিল সেটির সমসাময়িক। লি ও কেনেডি বংশের সন্তানেরা তিন প্রজন্ম ধরে একই সঙ্গে সেই নার্সারিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন।
নার্সারি কাজের পাশাপাশি জেমস লি ছিলেন একজন উদ্ভিদ সংগ্রাহকও। জেমস লি ১৭৮৭ সালে লন্ডনে প্রথম চীনা গোলাপ প্রবর্তন করেছিলেন। কালক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন উদ্ভিদের দ্বিপদী নামকরণের জনক কার্ল লিনিয়াসের একজন সহযোগী। জেমস লি ১৭৬০ সালে প্রকাশিত লিনিয়ান পদ্ধতির একটি সংকলন তৈরি করেন। অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু বোটানি নামের সংকলনটির সে সময় পাঁচটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। লিনিয়াস নার্সারি কর্মী জেমস লির নামে একটি উদ্ভিদ গণের নামকরণ করেন। Leea নামের সে গণের সারা বিশ্বে ২০২৩ সালের ১২ জুলাই পর্যন্ত ৪৫টি গ্রহণযোগ্য প্রজাতি প্লান্টস অব দ্য ওয়ার্ল্ড অনলাইনে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে আছে এ গণের অন্তত ১০টি প্রজাতি। কুকুরজিব বা বনচালিতা, কাকজংলা, ডানাজংলা, কুকুরা, ঢোলসমুদ্র, লালভাঙা ইত্যাদি এ গণের উদ্ভিদ।
ঢাকায় আহসান মঞ্জিলে রয়েছে একটি ঢোলসমুদ্রগাছ, চন্দ্রিমা উদ্যানে পুকুরপাড়ে দেখেছিলাম কুকুরজিবগাছ আর এবার আষাঢ় মাসে বলধা উদ্যানের সিবিলি অংশে গিয়ে দেখা পেলাম লালভাঙাগাছের। লালভাঙা বা red leea গাছের প্রজাতিগত নাম Leea rubra ও পরিবার ভিটেসি। অর্থাৎ গবেষকেরা এ গাছকে আঙুরের গোত্রে ফেলেছেন। আগে এ গাছের গোত্র ছিল লিয়েসি। প্রজাতিগত নামের শেষাংশ রুব্রা অর্থ লাল।
বলধা উদ্যানে দেখলাম লালভাঙাগাছে কয়েকটা থোকায় লাল টকটকে ফুল ফুটেছে। ফুল এত ক্ষুদ্র যে খুব খেয়াল করে না দেখলে তা সহজে চোখে পড়ে না। গাছটার ডালপালা লালচে সবুজ, গিঁটগুলো ফোলা ফোলা, দেখে মনে হয়, চাপ দিলেই বোধ হয় ওখান থেকে মটাৎ করে ডালটা ভেঙে যাবে। আসলে তা হয় না, কাণ্ড বেশ শক্ত। শাখাপ্রশাখা নিয়ে গুল্ম প্রকৃতির গাছটার উচ্চতা ৬ থেকে ৭ ফুটের বেশি উঁচু হয়ে সেখানে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। ডালপালা ও পাতার সন্ধিস্থলে রয়েছে বড় খোঁপার মতো পুষ্পমঞ্জরি। ফোটা ফুলের চেয়ে বুটের দানার মতো কুঁড়িগুলোই যেন বেশি সুন্দর।
লালভাঙা একটি বহুবর্ষজীবী ছোট আকারের গুল্ম প্রকৃতির গাছ। উচ্চতা ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। কাণ্ডের রং লালচে, পাতা সবুজ। পাতা উপবৃত্তাকার, অগ্রভাগ সুচালো, কিনারা অগভীরভাবে খাঁজকাটা, পাতা দেখতে অনেকটা চালতা পাতার মতো, তবে চালতাপাতার চেয়ে আকার ছোট। শাখা-প্রশাখায় পাতাগুলো বিপরীতমুখী হয়ে একান্তরক্রমিকভাবে জন্মে। পাতা খসখসে ও প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একে আমরা পাতা বলছি, আসলে সেগুলো পত্রক বা লিফলেট। কেননা পত্রদণ্ডের দুধারে পত্রকগুলো সাজানো থাকে। পুষ্পমঞ্জরি, কুঁড়ি ও ফুল উজ্জ্বল লাল। ফুলের পাপড়ির রং উজ্জ্বল লাল, গোলাপি বা ঘিয়ে হতে পারে।
ফোটা ফুলগুলো এতই ক্ষুদ্র যে পুষ্পমঞ্জরিতে ফোটার পর সেগুলো ঘিয়ে রঙের বিন্দুর মতো দেখায়। ফুলের পাঁচটি পাপড়ি তারার মতো মেলে থাকে, মাঝখানে থাকে ঘিয়ে রঙের জননাঙ্গগুলো। ক্ষুদ্র নাকফুলের মতো ফুল। আষাঢ় মাস থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়, ফল ধরা শেষ হয় অগ্রহায়ণ মাসে। ফলের রং প্রথমে লাল থাকলেও পরে হয় বেগুনি ও পাকার পর কালো হয়ে যায়। ফল বেরি প্রকৃতির, বড় মটর দানার মতো, ব্যাস মাত্র ১১ মিলিমিটার, ফলের ভেতরে ৪ থেকে ৬টি বীজ থাকে। বীজ থেকে চারা হয়। তবে শাখা কেটে কলম করে ও শাখায় গুটিকলম করে এ গাছের চারা তৈরি করা যায়। বয়স্ক গাছ থেকে কলম করে তা টবে বা বাগানে লাগালে সেসব গাছে দ্রুত ফুল ফোটে। এ গাছের কিছু ঔষধি গুণ আছে। পাতা ক্ষত সারানোয় ব্যবহৃত হয়। আমাশয় সারানোয় এর ফল খাওয়া হয়। এ দেশে বুনো গাছ হলেও কেউ কেউ বাহারি গাছ হিসেবে বাগানে লাগান। ফুল ফোটা গাছ দেখতে সুন্দর। এ গাছের আদি নিবাস বাংলাদেশ, আসাম, মিয়ানমার হলেও লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে এ গাছ দেখা যায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ৪ অভিযোগ
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে স্থাপিত বিএনপির অভিযোগ বাক্সে এ সপ্তাহে দলটির একজন নেতার বিরুদ্ধেই দখল ও চাঁদাবাজির চারটি অভিযোগ পড়েছে। এছাড়া অভিযোগ এসেছে একজন সাংবাদিক ও কুষ্টিয়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সুজাত হোসেন খানের বিরুদ্ধেও।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দ্বিতীয় বারের মত কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি স্থাপিত অভিযোগ বাক্স খোলা হয়।
সেসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার, প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, সেক্রেটারি আবু মনি জুবায়েদ রিপন, সিনিয়র সহ সভাপতি লুৎফর রহমান কুমার ও কোষাধ্যক্ষ এম. লিটন উজ জামান, নির্বাহী সদস্য এএইচএম আরিফ, দৈনিক খবর ওয়ালার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুন্সি শাহিন আহমেদ জুয়েল প্রমুখ।
চলতি সপ্তায় সর্বমোট ছয়টি অভিযোগ পড়েছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমীন রানা ওরফে কানাইয়ের বিরুদ্ধেই পড়েছে চারটি অভিযোগ। সবগুলো অভিযোগই ছিল দখলদারি ও চাঁদাবাজি বিষয়ক। অভিযোগ কারীদের মধ্যে সংখ্যালঘুরাও রয়েছেন।
এছাড়া কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ।
অভিযোগের বিষয়ে আল আমীন রানা কানাই বলেন, “বাক্স থাকলে অভিযোগ পড়তেই পারে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে আপনারা দেখেন। আমি এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই।”
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সরকারি কর্মকর্তা সুজাত হোসেনও। তিনি বলেন, “আমরা অনেকের বিরুদ্ধে অনেক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তারা চক্রান্ত করে অভিযোগ দিতে পারেন। এসব অভিযোগের সত্যতা নেই।”
এর আগে গত ৩০ জুলাই দুপুরে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে প্রথমবার বাক্সটি খুলে অভিযোগ পড়ে শোনান কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার।
সেসময় গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের মধ্যে ছিল কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার ট্রাক শ্রমিক অফিস থেকে চাঁদা আদায়, লালন একাডেমির সাপ্তাহিক সেবার নামে অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণা, জিয়ারখী ইউনিয়নের মঠপাড়া মাঠের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি এবং বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নাম ভাঙিয়ে শহরের ধোপাপাড়া, মধ্য মিলপাড়া কলোনিতে সাজু বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ।
এর আগের চারটি অভিযোগ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, “সবগুলো অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিল পড়ায় দখল হয়ে থাকা ক্লাব ঘরটি দখলমুক্ত করে কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
গত ২১ জুলাই কুষ্টিয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে জানতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করে জেলা বিএনপি। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নিচে ফটকের পাশে এটি স্থাপন করেন বিএনপির কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক কুতুব উদ্দীন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। শহরের আরও কয়েকটি স্থানে এমন বাক্স বসানোর কথা জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা/কাঞ্চন/এস