যদি কখনো জানতে চান, দুটি দেশ আসলে কী নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত থাকে, তবে তাদের বক্তব্য শোনার দরকার নেই। বরং খেয়াল করুন, কোন কোন শব্দ তারা আলাদা করে বলতে চায় না। ইরান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে একটি শব্দ বারবার আরেকটির সঙ্গে সন্দেহজনকভাবে অবিচ্ছেদ্য জুটিতে হাজির হয়—‘বাণিজ্য’ ও ‘নিরাপত্তা’। আর যখন ‘বাণিজ্য’-এর ঠিক পরেই সব সময় ‘নিরাপত্তা’ আসে, তখন ধরে নেওয়া যায় যে প্রকৃত চালিকা শক্তি বাণিজ্য নয়।

কাগজে-কলমে তেহরান ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বড় জোট হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা। দুটি বড় মুসলিম দেশ, প্রায় ৯০০ কিলোমিটারের একটি যৌথ সীমান্ত, একই ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং আংশিক মিল থাকা সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বন্ধন। বাস্তবে তাদের ইতিহাস হলো দূরত্ব, মাঝেমধ্যে সন্দেহ আর ‘সহযোগিতা’ কেবল তখনই হয়, যখন কোনো সাধারণ সমস্যা মেটাতে হয় অথবা কোনো সাধারণ হুমকি এড়াতে হয়।

তবু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পর্যবেক্ষকেরা অদ্ভুত কিছু লক্ষ করেছেন: বছরের পর বছর ধরে সবচেয়ে প্রো-ওয়াশিংটনপন্থী পাকিস্তানি সামরিক শাসন, যার নেতৃত্বে আছেন চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল আসিম মুনির, তিনি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে উষ্ণ হাসি বিনিময় করছেন। ফেব্রুয়ারিতে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার সময় ইরান দৃঢ়ভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। এপ্রিল মাসে পাকিস্তান সরব হয়ে নিন্দা করে ইরানের ওপর ইসরায়েলের ১২ দিনের সামরিক হামলার। কোনো সাধারণ পর্যবেক্ষকের কাছে এটি দীর্ঘদিনের প্রাপ্য ভ্রাতৃসুলভ আলিঙ্গনের মতো মনে হতে পারে। আসলে তা নয়।

বালির ওপর দাঁড়ানো সম্পর্ক

কেন এমনটা হয়েছে তা বোঝার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৭৯ সালে—যে বছর মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়াকে এমনভাবে বদলে দিয়েছিল, যার প্রভাব আজও চলছে। সেই বছর ইরানের ইসলামি বিপ্লব শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে, ওয়াশিংটনকে ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং এক বিপ্লবী মতাদর্শসম্পন্ন শিয়া ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিহার্য মিত্র ও সুন্নি ইসলামের স্বঘোষিত অভিভাবক সৌদি আরব ইরানের প্রভাব প্রতিহত করার জন্য মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সুন্নি ধর্মীয় আন্দোলনে অর্থায়ন শুরু করে।

এর অংশ হিসেবে সৌদি-ইরানি প্রতিদ্বন্দ্বিতার অন্যতম প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় পাকিস্তান। ইসলামাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়াদ ও তেহরান উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও বাস্তবতা ছিল অনেক বেশি জটিল এবং রক্তাক্ত।

১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হঠাৎ বেড়ে যায়। সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত অনেক উগ্র সুন্নি গোষ্ঠী শিয়া সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু বানায়। এর জবাবে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তারা পাকিস্তানে শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করছে। তথাকথিত ‘ভ্রাতৃত্ব’-এর গল্পটি ক্রমেই এক ভদ্র মুখোশের মতো মনে হতে থাকে, যার আড়ালে পাকিস্তানের মাটিতে এক বিপজ্জনক প্রক্সি যুদ্ধ চলছিল।

ফলাফল ছিল হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি, সামাজিক আস্থার ক্ষয় এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদের স্থায়ী গভীরতা—যা আজও পূর্ণাঙ্গভাবে নিরাময় হয়নি। ইসলামাবাদ ও তেহরানের মধ্যে যে কোনো ‘উষ্ণ’ সম্পর্ক প্রায় সব সময়ই ছিল লেনদেনভিত্তিক—যখন নিরাপত্তার কারণে দুই দেশ একে অপরের প্রয়োজন অনুভব করত, তখনই সেই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতো, মুসলিম ঐক্যের কোনো যৌথ স্বপ্ন থেকে নয়।

ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যকার তাফতান সীমান্ত.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাফল্যের ঝুড়ি পূর্ণ, তবু শিখতে চান

তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় তারকা পারসা ইভানা। রিয়্যালিটি শো ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে ২০১৪’তে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। নাচের প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে অভিনয় শুরু করেন। নাচ ছাপিয়ে তখনই স্বপ্ন দেখতেন, একদিন অভিনেত্রী হবেন। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আগেই। ইভানা এখন এই সময়ের ব্যস্ত তারকাদের একজন।

পারসা ইভানার দাদাবাড়ি চট্টগ্রামের লাভ লেন এলাকায়, নানাবাড়ি রাউজানে। দাদাবাড়ি ও নানাবাড়ি ঘিরে রয়েছে এই তারকার অনেক স্মৃতি। জানালেন, ছোটবেলায় ঈদুল আজহায় সবচেয়ে বেশি মজা হতো। আর মজা হতো বছরের শেষে যখন স্কুল ছুটি হতো। রাউজানে নানাবাড়ির স্মৃতির কথা মনে করে ইভানা বলেন, ‘আমাদের কাজিন গ্রুপ ছিল। সবাই মিলে তখন মাটির চুলায় নিজেরা রান্না করতাম। নানা খেলাধুলায় মেতে থাকতাম। চট্টগ্রামে দারুণ মজার ছিল সেসব দিন।’

ঢাকার কোনো রেস্তোরাঁয় যখন চট্টগ্রামের জনপ্রিয় আঞ্চলিক খাবার দেখেন, তখনই চট্টগ্রামের কথা মনে পড়ে পারসা ইভানার। চোখের সামনে তখন ভেসে ওঠে আঞ্চলিক খাবার। অনেক ধরনের পিঠাও তাঁর প্রিয় তালিকায় রয়েছে, ছোটবেলায় খাওয়া সেসব পিঠার নাম মনে করতে পারেন না তিনি। চট্টগ্রামের খাবারের মধ্যে ইভানার প্রিয় তালিকায় রয়েছে মেজবানি গোশত, কালাভুনা, লইট্টা মাছ। চট্টগ্রামের এসব খাবার এখন ঢাকায়ও পাওয়া যায়, প্রায় সময় এসব খাবারের স্বাদ নেওয়া হয়। পারসা ইভানা বলেন, ‘চট্টগ্রামের খাবার দেখলে বা কথা মনে হলেই জিভে পানি এসে পড়ে। ছোটবেলার কথাও মনে পড়ে যায়। দাদা-নানাবাড়িতে কত ধরনের খাবার যে খেয়েছি।’

পারসা ইভানার দাদাবাড়ি ও নানাবাড়িতে এখন আর কেউ থাকেন না। সবাই দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। ইভানা জানালেন, ‘আমার আব্বুর পরিবার বড়। চাচা-ফুফুদের কেউ কেউ মারা গেছেন। যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের কেউ ঢাকায় আবার কেউ বিদেশে যেমন ইতালি, ইউকে ও আমেরিকায়। নানাবাড়িরও একই অবস্থা। তাই এখন আর চট্টগ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়া হয় না। কিন্তু খুব মিস করি, সেসব দিন।’ তিনি বলেন, আত্মীয়স্বজন না থাকলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাওয়া হয় তাঁর। মাসখানেক আগেও একবার চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। গেলেই ইচ্ছে করে দাদাবাড়ি ও নানাবাড়ি ঘুরে আসতে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তা হয়ে ওঠে না। 

একটি নাটকের দৃশ্যে সহশিল্পী ইরফান সাজ্জাদের সঙ্গে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাফল্যের ঝুড়ি পূর্ণ, তবু শিখতে চান