কুমিল্লার দেবীদ্বারে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। কয়েক দিন চাঁদা দেওয়ার পর আর টাকা দিতে না পারায় ব্যবসায়ীকে হত্যা ও তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় মামলার পর ওই ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতার নাম ওবায়দুল ইসলাম ওরফে হৃদয় (২৫)। তিনি দেবীদ্বার পৌর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দেবীদ্বারের গুনাইঘর গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম আমির হোসেন। তিনি দেবীদ্বার কলেজ রোডে উপজেলা পরিষদের ফটকের সামনে কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করেন। গতকাল রাতে তিনি বাদী হয়ে ওবায়দুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন। ব্যবসায়ী আমির হোসেন দেবীদ্বার পৌরসভার ফতেহাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।

আমির হোসেন জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে ছাত্রদল নেতা ওবায়দুল অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাঁর কাছে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে তিনি কয়েক দিন টাকা দিয়েছেন। কিন্তু নিয়মিত চাঁদা দিতে না পারায় হুমকি দেওয়া শুরু করেন ওবায়দুল। চাঁদার জন্য মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দিতেন। একপর্যায়ে মাসিক ১৫ হাজার টাকা ধার্য করে দেন। সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হত্যার হুমকি ও তাঁর মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেন। ভয়ে তাঁর মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।

আমির হোসেন বলেন, চাঁদার টাকার জন্য দলবল নিয়ে বাড়িতে গিয়ে রাতে-দিনে দরজা-জানালায় পিটিয়ে, গালমন্দ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হতো। নিরুপায় হয়ে বিষয়টি কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিজভিউল আহসানকে জানান। তিনি মামলা করার পরামর্শ দিলে গতকাল রাতে থানায় মামলা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সামান্য আয়ের মানুষ। মাসে এত টাকা চাঁদা কীভাবে দেব? মামলা করলেও আমি এখনো আতঙ্কের মধ্যেই আছি।’

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা রিজভিউল আহসান মুন্সী বলেন, ‘চাঁদাবাজদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। সে যে-ই হোক বা যে দলেরই হোক। আমির হোসেন নামের ব্যবসায়ী থানায় অভিযোগ করলে আমি পুলিশকে অনুরোধ করে বলেছি, চাঁদাবাজদের পক্ষে যারা সুপারিশ করবে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে।’

তবে দেবীদ্বার থানায় অবস্থানকালে ছাত্রদল নেতা ওবায়দুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি এ ঘটনায় জড়িত নন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। ব্যবসায়ীর মুঠোফোনে চাঁদা দাবির বার্তা ও বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘এসব ফান (দুষ্টুমি) করে করেছি।’

দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ওবায়দুল ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করতেন। ওই ব্যবসায়ী অনেক দিন বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন। মাঝে চাঁদা দিতে না পারলে হত্যার হুমকিসহ তাঁর মেয়েকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। থানার মামলা হলে মুঠোফোনে পাঠানো বার্তা ও বিকাশে টাকা পাঠানোর স্ক্রিনশট যাচাই-বাছাই করে ওবায়দুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ন ত আম র হ স ন ব যবস য় র

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফে অস্ত্র-মাদকসহ ২৮ মামলার আসামি ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, মাদক, অপহরণসহ ২৮ মামলার পলাতক আসামি ও ইউপি সদস্য নুরুল হুদাকে ( ৪৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা গ্রামে এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার নুরুল হুদা হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি সদস্য নুরুল হুদা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক পাচারকারী। টেকনাফে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন মাদক পাচারকারীর মধ্যে নুরুল হুদাও ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় ১৬টি মাদক, একটি অপহরণ, ৩টি অস্ত্র, একটি বিশেষ ক্ষমতা আইন, চারটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলাসহ মোট ২৮টি মামলা রয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি এলাকায় এসে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। গোপন সংবাদের ভিত্তিকে গতকাল রাতে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

পুলিশ জানায়, আজ শনিবার বিকেলে ইউপি সদস্য নুরুল হুদাকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত বুধবার রাতে পুলিশ টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজারছড়া গ্রামের বাসিন্দা ও একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রশিদ মিয়াকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইউপি সদস্য রশিদ মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, মানব পাচার, বিস্ফোরক ও নাশকতার পাঁচটি মামলা রয়েছে। তিনি টেকনাফ উপজেলার যুবলীগের সদস্য ছিলেন।

পৃথক অভিযানে টেকনাফের দুই ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) অলক বিশ্বাস। তিনি বলেন, সরকার মাদক চোরাচালান দমনে কঠোর অবস্থানে। মাদক ও মানব পাচারকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেকনাফে অস্ত্র-মাদকসহ ২৮ মামলার আসামি ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার