জয়পুরহাটে ফারজানা আক্তার জুথি (২৬) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে শহরের সবুজনগর এলাকার একটি বাসা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত জুথি জেলার পাঁচবিবি পৌরসভার পোস্ট অফিসপাড়া এলাকার মো. জীবনের স্ত্রী এবং জেলা শহরের সাহেবপাড়া মহল্লার জাহিদুল ইসলামের মেয়ে।

আরো পড়ুন:

জয়পুরহাটে নলকূপের লাইনম্যানের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার

চিরকুট: ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’

নিহত ফারজানা আক্তার জুথির ভাই মেজবা নাবিল বলেন, “আমার বোনের স্বামী অনেক আগে মারা যান। তার ৬ বছর বয়সী একটি সন্তান আছে। সে তার দাদার বাড়িতে থাকে। পরবর্তীতে জীবন নামের এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করে ৮ মাস আগে আপু বিয়ে করেন। ওই ছেলের আরো একটি বউ আছে।”

তিনি বলেন, “আপুর এই বিয়ে পরিবার থেকে মেনে নেওয়া হয়নি। আজ (শুক্রবার) খবর পাই, আমার বোন ঘরের মধ্যে আছে, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এসে দেখি ঘরের দরজা লাগানো। পরে পুলিশ আসার পর দরজা খুলে দেখি ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় আপুর মরদেহ ঝুলছিল।”

বাসার মালিক আবু হাসেম বলেন, “ওই মেয়ে ও তার স্বামী জীবন প্রায় ৬ মাস আগে বাসা ভাড়া নেন। আমার পরিবার তৃতীয় তলায় থাকে, আর ওরা দ্বিতীয় তলার উত্তরপাশের ইউনিটে থাকে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে তার স্বামী এসে দরজায় ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে আমার ছেলেকে জানায়। আমার ছেলেও ডাকাডাকি করেন। পরে তার স্বামী চলে যান।”

তিনি বলেন, “আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যার দিকে আবারো তার স্বামী এসে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে পাশের একটি গাছে ওঠে জানালা দিয়ে দেখে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় জুথি ঝুলছে। পরে পুলিশকে জানানো হয়।”

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তামবিরুল ইসলাম বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।”

তিনি বলেন, “ওই মেয়ের স্বামীকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা থানায় এলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/বাকী/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ প রহ ট মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

বাহাত্তরের ‘সরব কণ্ঠ’ বীর উত্তম জিয়াউদ্দিন, নীরবেই চলে গেলেন

৫ আগস্ট, মঙ্গলবার, ঢাকার আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। থেমে থেমে বৃষ্টির পানিতে ভিজছিল রাজপথ। গত বছর এই দিনেই ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এই দিনকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।

এই দিনে প্রায় সব টেলিভিশনের পর্দায় গত বছর এই সময়ে চলা হাসিনা সরকারের পেটোয়া বাহিনীর নৃশংসতার ছবি ও বর্ণনা ভেসে উঠছিল, যা দেখে চোখ ভিজছিল বারবার।

বিকেলে একটি দুঃসংবাদে সেই চোখের পানি বৃষ্টির মতোই নেমেছে সম্মুখ রণাঙ্গনের একদল লড়াকু মুক্তিযোদ্ধার চোখে। তাঁদের মুক্তিযুদ্ধকালীন অধিনায়ক বা কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ (বীর উত্তম) (৮৩) ৫ আগস্ট ২০২৫ বিকেলে সবাইকে ছেড়ে পরলোকে যাত্রা করেন।

১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পশ্চিম পাকিস্তানের ঝিলাম থেকে শিয়ালকোট হয়ে জীবন বাজি রেখে ভারত হয়ে বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করেছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়াউদ্দিন, যিনি সম্প্রতি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী, মেজর তাহের, স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মেজর মঞ্জুর এবং একজন বাঙালি সৈনিক। উল্লেখ্য, তাঁদের মধ্যে স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে তাহেরকে কর্নেল পদে থাকাকালে কথিত অভ্যুত্থানচেষ্টার দায়ে সামরিক আদালতের মাধ্যমে ফাঁসি দেওয়া হয়। আর মঞ্জুর মেজর জেনারেল অবস্থায় প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যাকাণ্ড ঘটান এবং পরবর্তী সময়ে জিয়াপন্থী একদল সেনার হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

সদ্য প্রয়াত জিয়াউদ্দিনসহ এই দুঃসাহসী দল ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই রাতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে জীবন বাজি রেখে কাশ্মীর অঞ্চলে পাকিস্তান–ভারত সীমান্তের দিকে যাত্রা করেন। মেজর মঞ্জুরের বাচ্চাদের ঘুমের ওষুধ দিয়ে প্রায় অচেতন করে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যান জিয়া ও তাঁর সঙ্গীরা। ‌

কাশ্মীর সীমান্তে মোতায়েন দুর্ধর্ষ রেঞ্জারস, কমান্ডো ও অন্য সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিতে পাহাড়, নিচু খাদ, জঙ্গল ও ফসলের মাঠে কখনো হামাগুড়ি দিয়ে, আবার কখনো হাঁটুতে ভর করে পাড়ি দেন দীর্ঘ এক বিপৎসংকুল দুর্গম পথ। সারা রাত জীবনমৃত্যুর দোলাচলে দুলে এবং দুবার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে ভোরের প্রথম আলোতে ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করেন এই জিয়া ও তাঁর সঙ্গীরা। তাঁদেরই একজন ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী তথা পরবর্তী সময়ে কর্নেল বজলুল গনি পাটোয়ারী (বীর প্রতীক) এই দুঃসাহসিক যাত্রা ও পরবর্তী সময়ে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘শত্রুভূমি থেকে সম্মুখসমরে’ শীর্ষক একটি বই লেখেন।

জিয়াউদ্দিন তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তাঁর মতো বহু মুক্তিযোদ্ধা এমন চুক্তিকে দেশের জন্য ক্ষতিকর ও স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন ইমেজ, সার্বভৌম ক্ষমতা এবং তাঁর রাজনৈতিক মতানুসারীদের আকাশচুম্বী ক্ষমতার কারণে এ ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই ছিলেন নীরব, নিথর। ‌ কিন্তু গর্জে উঠেছিলেন একজন, তিনিই জিয়াউদ্দিন। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নেন গণমাধ্যমকে।

আমার সৌভাগ্য, কিছু বিচ্ছিন্ন নোট সম্পাদনা করে এমন একটি বই রচনার সঙ্গে আমি সংযুক্ত ছিলাম। ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রথমা প্রকাশন বইটি প্রকাশ করে। তখন কর্নেল পাটোয়ারীর মুখে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়ার বীরত্বগাথা ও দেশপ্রেমের এক অনন্য উপাখ্যান জানতে পেরেছিলাম। আবেগ আর শ্রদ্ধা নিয়ে সামরিক হাসপাতালে অসুস্থ বীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াকে দেখতেও গিয়েছিলাম। সেই স্মৃতি আজও মনে পড়ে। ‌

পশ্চিম পাকিস্তানের ঝিলাম ছেড়ে তৎকালীন মেজর জিয়াউদ্দিন ও তাঁর দল ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবে প্রবেশ করেন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের সহায়তায় পরবর্তী সময়ে তাঁদের নেওয়া হয় দিল্লিতে। দিল্লির ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা, বিশেষত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করা সমরবিদ ও গোয়েন্দারা, তখন ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অধিকৃত পূর্ব পাকিস্তান (পরে বাংলাদেশ) ভূখণ্ডকে শত্রুমুক্ত করতে চূড়ান্ত আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ঠিক তখন জিয়া, মঞ্জুর, তাহের ও পাটোয়ারী পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিষয়ে বিশদ বর্ণনা ও তাদের গোপনীয় সব পরিকল্পনার তথ্য জানিয়ে যৌথ বাহিনীর চূড়ান্ত আক্রমণ–পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ‌

দিল্লির পর্ব শেষে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল (পরে জেনারেল) এম এ জি ওসমানী সঙ্গে দেখা করেন। ওসমানীর নির্দেশেই মেজর জিয়াউদ্দিন সিলেট বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহ সীমান্তে যুদ্ধরত প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। আর প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের ডি কোম্পানির অধিনায়ক ও উপ–অধিনায়কের দায়িত্ব পান ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাটোয়ারী। ক্যাপ্টেন হাফেজ (বিএনপি নেতা), লেফটেন্যান্ট মাহবুব, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট লিয়াকত প্রমুখ আগে থেকেই এই সেনাদলের সঙ্গে যুদ্ধরত ছিলেন। তাঁদের চিকিৎসক ছিলেন ক্যাপ্টেন মুজিব, যিনি পরবর্তী সময়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। লেফটেন্যান্ট আকাশসহ আরও কিছু সাহসী অফিসার কর্নেল জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে পরবর্তীকালে মরণপণ লড়াই করেছিলেন বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ (বীর উত্তম)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
  • ৪৪তম বিসিএস : ফল নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা, অনিশ্চয়তায় ১,৩১৮ প্রার্থী
  • ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: ফলপ্রসূ দাবি, অর্জন নিয়ে প্রশ্ন
  • আলাস্কা শীর্ষ বৈঠক ট্রাম্প-পুতিন ও ইউক্রেনের জন্য কী বার্তা আনল
  • সোনারগাঁয়ের আলোচিত চেয়ারম্যান লায়ন বাবুল গ্রেপ্তার
  • ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা চ্যালেঞ্জের
  • বাহাত্তরের ‘সরব কণ্ঠ’ বীর উত্তম জিয়াউদ্দিন, নীরবেই চলে গেলেন